পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$80 বিভূতি-রচনাবলী সেখানে খাবেন না, তখন তাঁকে অত প্রলোভন দেখাবার মানে কি ? বললে, আচ্ছা প্রভাসদা, ও’কে খাইয়ে কেন বাবার জাতটা মারবেন একদিনের জন্যে ? ও কথাই ছেড়ে দিন । এবার কিস্ত কেদার বিদ্রোহ ঘোষণা করে বললেন, হ’্যাঃ, যত সব ! একদিন কোথাও চা খেলেই একেবারে নরকে যেতে হবে । নরক অত সোজা নয়, পরকালও অমন ঠনকো জিনিস নয় । চলো সবাই মিলে চা খেয়ে আসা যাক হে— শরৎ দঢ়স্বরে বললে, না, তা কখনো হবে না। যাও দিকি ! সন্দে-আহ্নিক তো করো না কোনোকালে, আবার ছত্যিশ জাতের জল না খেলে চলবে না তোমার বাবা ? কেদারের সাহসের ভান্ডার নিঃশেষ হয়ে গেল। প্রভাসও আর অনুরোধ করলে না, তিনিও আর যেতে চাইলেন না । ওখান থেকে সবাই এল ইডেন গাডেনে। রাত প্রায় সাড়ে আটটা, বহন সসsিজত সাহেব-মেমকে বেড়াতে দেখে শরৎ তো একেবারে বিস্ময়ে স্তভিত। এত সাহেব-মেম একসঙ্গে কখনো দেখা দুরে যাক, কলপনাও করে নি কোন দিন । শরৎ হী করে একদটে এরিকা পামের কুঞ্জের মধ্যে বেঞ্চিতে উপবেশন-রত দটিস-বেশ, সদশ'ন সাহেব ও মেমের দিকে চেয়ে রইল । হঠাৎ কি ভেবে তার চোখ দিয়ে জল ঝরে পড়তেই অচিল দিয়ে ক্ষিপ্ৰহস্তে সে মুছে ফেললে । শরতের মনে পড়ল, গ্রামের লোকের দুঃখদারিদ্র্য, কত ভাগ্যহত, দীনহীন ব্যক্তি সেখানে কখনো জীবনে আনন্দের মুখ দেখলে না। ব্যাণ্ডস্ট্যান্ডে ব্যান্ড বাজছিল অনেকক্ষণ থেকে । শরৎ অনেকক্ষণ বাবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাজনা শনলে। কিন্ত ওর ভাল লাগল না। সবাই যেন বেসরো, তার অনভ্যস্ত কানে পদে পদে সরের খুৎ ধরা পড়ছিল। t প্রভাস বললে, সিনেমা দেখবে তো বলো নিয়ে যাই । শরৎ কখনো না দেখলেও সিনেমা সম্বন্ধে গড়শিবপুরে থাকতেই শহর-প্রত্যাগত নববিবাহিতা বালিকা কিংবা বধুদের মখে অনেক গল্প শুনেছে। বাবাকে এমন জিনিস দেখাতেই হবে, সে নিজে দেখকে না দেখকে কিস্ত আজ আর নয়—বাবার কিছু খাওয়া হয় নি বিকেল থেকে। একবার তার মনে হ’ল বাবা চা খেতে চাইছেন, খান বরং কোনো ভাল পরিকার-পরিচ্ছন্ন দোকানে বসে ! কি আর হবে । বাবা যা নাস্তিক, এত বয়েস হ'ল একবার পৈতেগাছটা হাতে করে গায়ত্রী জপটাও করেন না কোনদিন, পরকালে ও'র অধোগতি ঠেকাবার সাধ্যি হবে না শরতের—সুতরাং ইহকালে যে ক'দিন বাচেন, অন্ততঃ সখি করে যান । ইহকালে পরকালে দ-কালেই কট করে আর কি হবে ? শরৎ বললে, বাবাকে চা খাইয়ে নিই কোনো দোকানে বসে। ভাল দোকান দেখে— ব্রাহ্মণের দোকান নেই ? 尊 কেদার অবাক হয়ে মুখের দিকে চাইলেন। প্রভাস বিপন্ন মুখে বললে, ব্রাহ্মণের দোকান —তাই তো—ব্রাহ্মণের দোকান তো এদিকে দেখছি নে—আচ্ছা, হয়েছে—এক উড়ে বামন ঘড়া করে চা বেচে ওই মোড়টাতে, ভাঁড়ে করে দেয়—সেই সবচেয়ে ভালো । চলন নিয়ে যাই । চা পান শেষ করে ওরা আবার মোটরে চৌরঙ্গী পার হয়ে পাক গীটের মোড় পয্যন্ত গেল। এক জায়গায় এসে কেদার বললেন, এখানটাতে একটু নেমে হেটে দেখলে হত না প্রভাস ? বেশ দেখাচ্ছে— গাড়ি এক জায়গায় রেখে ওরা পায়ে হেটে চৌরঙ্গীর চওড়া ফুটপাথ দিয়ে আবার ধৰ্ম্মতিলার মোড়ের দিকে আসতে লাগল। দোকান হোটেলগুলির আলোকোজলে অভ্যস্তর ও শো-কেসগুলির পণ্যসজ্জা ওদের একেবারে তাক লাগিয়ে দিয়েছে—শরৎ তো একেবারে বিস্মরবিমুগ্ধ ।