পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫిd:8 বিভূতি-রচনাবলী ভাববেন না । প্রভাসের গাড়ি একটা বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। প্রভাস নেমে দোর খালে বললে, আসন শরৎদি, ভেতরে আসন । - γν, শরৎ বললে, এটা কাদের বাড়ি প্রভাসদা ? o —এটা ? এটা অরুণদেরই বাড়ি ধরন—তবে অরণে এখন বোধ হয় বাড়ি নেই—এলো বলে । শরৎকে নিয়ে গিয়ে প্রভাস একটা সসঙ্গিজত ঘরে বসিয়ে ডাক দিলে—ও বেদি, বৌদি, কে এসেছে ধ্যাখো— শরৎ চেয়ে দেখলে ঘরটার মেজেতে ফরাস বিছানা পাতা, দেওয়ালে বেশির ভাগ বিলিতি মেম-সাহেবের ছবি, একদিকে একটা ছোট তত্ত্বপোশের ওপর একটা গদি পাতা বিছানা— তাতে বালিশ নেই, গোটা দই ডুগি-তবলা এবং একটা বেলো-খোলা বড় হারমোনিয়াম বিছানার ওপর বসানো । একটা খোল-মোড়া তানপুরা, দেয়ালের কোণের খাঁজে হেলান দেওয়ানো। খুব বড় একটা কাসার পিকদানি তণ্ডপোশের পায়াটার কাছে । একদিকে বড় একটা কাঢ়ের আলমারি—তার মধ্যে টুকিটাকি শোখীন কাঁচের ও মাটির জিনিস, গোটাকতক ছোট মত বোতল, আরও কি কি । একটা বড় দেওয়াল ঘড়ি । শরৎ ভাবলে—এদের বাড়িতে গান-বাজনার চচ্চ খাব আছে দেখছি । বাবাকে এখানে এনে ছেড়ে দিলে বাবার পোয়া বারো— একটি সমাবেশ মেয়ে এই সময় ঘরে ঢুকে হাসিমুখে বললে, এই যে এসো ভাই—তোমার কথা কত শুনেছি প্রভাসবাব ও অর্ণবাবর কাছে ৷ এসো এই খাটের ওপর ভাল হয়ে বোসো ভাই— w মেয়েটিকে দেখে বয়স আন্দাজ করা কিছু কঠিন হ’ল শরতের । বিশও হতে পারে, পয়ত্ৰিশও হতে পারে—কম হবে না, বরং বেশিই হবে। কিন্ত কি সাজগোজ ! মা গো, এই বয়সে অত সাজগোজ কি গিন্নিবান্নি মেয়েমানুষের মানায় ? আর অত পান খাওয়ার ঘটা ! পেটো-পাড়া চুলে ফিরিঙ্গি খোঁপা, গায়ে গহনাও মন্দ নেই-বাড়িতে রয়েছে বসে এদিকে পায়ে আবার চটিজ তো—মখমলের উপর জরির কাজ করা । কলকাতার লোকের কাণ্ডকারখানাই আলাদা । শরৎ গিয়ে খাটের ওপর বসলো বটে ভদ্রতা রক্ষার জন্যে—কিন্ত, তার কেমন গা ঘিন ঘন করছিল। পরের বিছানায় সে পারত-পক্ষে কখনো বসে না—বিছানার কাপড় না ছাড়লে সংসারের কোনো জিনিসে সে হাত দিতে পারবে না—জলটুকু পৰ্য্যস্ত মুখে দিতে পারবে না। কথায় কথায় বিছানায় বসা আবার কি, কলকাতার লোকের আচার-বিচার বলে জিনিস নেই। বৌটি তেমনি হাসিমুখে বললে, পান সাজবো ভাই ? পানে দোক্তা খাও নাকি ? শরৎ মদ, হেসে জানালে যে সে পান খায় না । wo —পান খাও না—ওমা, তাই তো—আচ্ছা, দাঁড়াও ভাজা মশলা আনি— —না, আপনি ব্যস্ত হবেন না। আমার ওসব কিছল লাগবে না। প্রভাস বললে, শরৎদি, বৌদি খব ভাল গান করেন, শনবেন একখানা ? শরৎ উৎফুল্ল কণ্ঠে বললে, শনবো বৈকি, ভাল গান শোনাই তো হয় না—উনি যদি গান দয়া করে— বাবার গান ও বাজনা শরৎ শনছে বাল্যকাল থেকেই, কিন্ত লণ্ঠনের তলাতেই অন্ধকার, বাবার গান-বাজনা তার তেমন ভাল লাগে না । এমন কি বাবা ভাল গাইতে পারেন বলেও মনে হয় না শরতের । অপরেশনে বাবার গানের বা বাজনার কেন অত প্রশংসা করে শরৎ