পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদার রাজা ২৭১ শরতের জেল হয়ে যেতে পারে! আর এ মোকদ্দমার তিনিই হবেন ফরিয়াদী ! আদালতে দাঁড়িয়ে মেয়ের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে হবে তাঁকে । o ঝি এসে বললে, বাব ওনারা চলে গেল । দিদিমণির কথা কি বলে গেল বাব ? কখন আসবেন তিনি ? কেদারের চমক ভাঙলো ঝিয়ের কথায় । বললেন, হ্যt—এই—কি বললে ? ও, শরৎ ? না, তার এখন আসবার দেরি আছে । —তা আপনি আজ ভাত চড়াবেন না বাবা ? দিদিমণির খবর তো পাওয়া গেল—এখন দটো ভাতে ভাত যা হয় চড়িয়ে— —না মেয়ে, এখন অবেলায় আর ভাত—দটো চি"ড়ে এনে দেবে ? —ও মা, চি“ড়ে খেয়ে থাকবেন আপনি ? তা দেন, পয়সা দেন–নিয়ে আসি । বাগানের পথে দিব্যি বাতাবিলেবু গাছের ছায়া পড়েছে, প্রায় বিকেল হতে চলল । ঘণ্টা দই পরে প্রভাস ও গিরীন মোটর নিয়ে ফিরে এসে দেখলে ঝি গাড়িবারান্দার সামনের রোয়াকে বসে। তাকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল কেদার কোথায় চলে গিয়েছেন, বাজার থেকে চি“ড়ে কিনে নিয়ে এসে সে আর তাঁকে দেখতে পায় নি। কেদারের কাপড়চোপড়ের প:টুলিটাও সেই সঙ্গে দেখা গেল নেই। - গিরীন বাগানের বাইরে এসে হো হো করে হেসে গড়িয়ে পড়ে আর কি । —কেমন বাবাঃ ! বললাম যে সব আমার হাতে ছেড়ে দাও—গিরীন কুন্ডুর মাথার দাম লাখ টাকা বাবা । ও পাড়াগে"য়ে বড়োর কানে এমন মন্তর ঝেড়েছি যে, এ-পথে আর কোন দিন হাঁটবে না। বলি নি তোমায় ? —আচ্ছা, বড়োটা গেল কোথায় ? —কোথায় আর যাবে ? গিয়ে দেখ গে যাও তোমাদের সেই কি পরে বলে, তার জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে কাল সকাল লাগাৎ ঠেলে উঠেছে । লজ্জায় এ-কথা কারো কাছে এমনিই বলতে পারত না --তার ওপর যে পলিসের ভয় দিইছি ঢুকিয়ে বড়োর মাথায়- দেখবে ষে রা কাটবে না কারো কাছে। এক ঢিলে দুই পাখী সাবাড় । দমদমার বাগানবাড়ি থেকে বার হয়ে কেদার পন্টুলি হাতে হনহন করে পথে চলতে লাগলেন। হাতে পয়সার সচ্ছলতা নেই - খরচের দরন যা কিছু ছিল, তা নিতান্তই সামান্য । তা ছাড়া কেদার এখনও কোথায় যাবেন না যাবেন ঠিক করে উঠতে পারেন নি— এখন তাঁর প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য, তাঁর ও কলকাতা শহরের মধ্যে অতি দ্রত ও অতি বিস্তৃত একটি ব্যবধান সষ্টি করা। এই ব্যবধান যত বড় হবে, যত দরে গিয়ে তিনি পড়তে পারবেন—তাঁর মেয়ে তত নিরাপদ । সতরাং পিছন ফিরে না চেয়ে এখন শধ্যে হে'টেই যেতে হবে “হে’টেই যেতে হবে। মেয়ের বিপদ না ঘটে•••শধে হটিতেই হবে । কিসের বিপদ মেয়ের, তা কেদারের ভাবার সময় বা অবসর নেই । মেয়ে যে খুব নিরাপদ আছে কি নেই—সে-সব ভাবনারও সময় নেই এখন। শুধ হাঁটতে হবে, কলকাতা থেকে দরে গিয়ে পড়তে হবে। প্রভাস ও গিরিন যেমন রেগে গিয়েছে, ওরা শোধ তুলে হয়তো ছাড়বে অরণের ওপর। মোটরে করে এসে তাঁকে রাস্তা থেকে জোর করে ধরে নিয়ে না যায় । ক্ষধা নেই, তৃষ্ণা নেই—ব্লাস্তি নেই, পরিশ্রম নেই, শুধ পথ বেয়ে চলা-যতদর