পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՋԵ8 বিভূতি-রচনাবলী দটো কাঁপতে লাগল । ওর অবস্থা দেখে হেনার ভয় হ’ল । বাঙালনীর ঢং দ্যাখো আবার । ফিট-টিট হবে নাকি রে বাবা ! আঃ কি ঝঞ্জাটেই তাকে ফেলে গেল ওই কথার ঝুড়ি গিরীনটা । এসে সামলাক এখন তাল । 鬱 সে কাছে এসে বললে, তা ভাই তুমি তো আর জলে নেই ? ভয় কিসের ; আমি তো বলছিলাম তোমার সব হবে । থাকো না এখানে আমাদের এই বাড়িতে। তোমায় মাথায় করে রেখে দেবে এখন ওরা । মটোর বলো, কালই মটোর হবে। রেডিও হবে, কলের গান হবে-যা আমি বলেছি । আপাদমস্তক জড়োয়া দিয়ে মড়ে দেবে-ভয় কিসের তোমার ; চাকর-চাকরাণীর মাথায় পা দিয়ে বেড়াও । মুখের কথা খসাও, কাল থেকে সব ঠিক করে দেবো—কি হবে সেই ধাবধাড়া গোবিন্দপুরের জঙ্গলে— শরৎ এতক্ষণে যেন সম্মিবৎ ফিরে পেল । বললে, এমন লোক আপনারা–তা আমি ভাবি নি। মাথার ওপর ভগবান আছেন, আমি জানতাম না, সরল বিশ্বাস করেছিলাম প্রভাস দাদার ওপর। ভাইয়ের মত দেখতাম । আপনাদের ভেবেছিলাম ভদ্রঘরের মেয়ে । আমার বোকামির শাস্তি যথেষ্ট হয়েছে— কান্নায় তার কণ্ঠ রন্ধ হয়ে গেল । হেনার মন যে পথকে আশ্রয় করে পোন্ত হয়েছে, সেই পথেরই সংকীর্ণ দুটি ওর মনুষ্যত্বকে শঙ্খলিত করে রেখেছে। পাপের পথে যে মনে মনে ঝান হয়ে পড়ে, পণ্যের আলো প্রবেশ করবার বাতায়ন-পথ তার নিজের অজ্ঞাতসারে ধীরে ধীরে রন্ধ হয়ে যায়। হেনার মন গলবার নয় । e সে বললে, কেন কান্নাকাটি করছো ভাই ? প্রথম প্রথম অবিশ্যি একটু কষ্ট হয়—কিন্তু জগতে এসে সখের মখে যদি না দেখলে তবে করলে কি ? এখানে দিব্যি সখে থাকো— পায়ের ওপর পা দিয়ে বসে খাও—সব সয়ে যাবে। শরৎ বললে, আপনি দয়া করে আর কিছু বলবেন না । আমি গরীব লোকের মেয়ে, বাসন মেজে ভাত রে’ধে কাঠ চালা করে সংসার করে এসেছি এতকাল, এক দিনের জন্যেও ভাবি নি যে কন্টে আছি । আপনাদের সােথ নিয়ে থাকুন আপনারা— এই সময় অপ্রত্যাশিত ভাবে দুপ দপ করে সিড়ি দিয়ে উঠে এল গিরীন । তাকে দেখে হেনা যেন অকুলে কুল পেয়ে গেল । তার দিকে ফিরে বললে, এই যে ! বাপরে বাপ ! এত ঝক্কি পোয়াবার জন্যে আমি রাজী হই নি, তা বলে দিচ্ছি। ওই নাও, সব খালে বলেছি—যা বোঝো করো । গিরীন বললে, কি, ও বলে কি ? —জিজ্ঞেস করো, তোমার সামনেই তো বিরাজ করছে সশরীরে— গিরীন শরতের দিকে ফিরে বললে, কি ? বলছ কি তুমি ? তোমার বাবা তোমার কথা সব শনে পালিয়েছে। এখানে থাকো পরম সনখে থাকবে – শরৎ বললে, আপনি আমায় কোন কথা বলবেন না। আমায় ছেড়ে দিন দয়া করে— আমি গাঁয়ে চলে যাবো বাবার কাছে— গিরীন বড়ো আঙুল দেখিয়ে বললে, সে গড়ে বালি । এতক্ষণ গাঁয়ে রটে গিয়েছে সব। কোথায় দু-দিন দরোত কাটিয়েছ গাঁয়ের সবাই জেনে গিয়েছে । আর ঘরে জায়গা নেই তোমার—এখন যা বলছি তাতে রাজী হও চাঁদ— শরৎ হঠাৎ তীব্র, পরষ কষ্ঠে বলে উঠল, খবরদার । আমাকে বা তা বলবার কোনো এস্তার নেই আপনার জানবেন—সাবধানে কথা বলনে—