পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯o বিভূতি-রচনাবলী শরৎ সেখানেই রইল সেদিনটা। সন্ধ্যার পরে অনেকগুলি মেয়ে আসে—রোজ শাস্ত্রকথা হয়। শরৎ বড় ভালবাসে শাস্ত্রকথা শুনতে, একদিন নকুলেশ্বরের মন্দিরে কথকতা হ’ল । আরও কয়েকটি মেয়ের সঙ্গে সেখানে শরৎ গেল । কথকতার পর প্রসাদ বিতরণের পালা । সকলের সঙ্গে শরৎও শালপাতা পেতে বাতাসা, শসা, ছোলা ভিজে, ফলমলে নুিয়ে এল । সন্ন্যাসিনী ব্রাহ্মণের মেয়ে তিনি সবপাক ভিন্ন খান না, নিজে রান্না করেন, শরৎকে শালপাতে ভাত বেড়ে দেন । সারাদিন খাওয়া হয় না--সন্ধ্যার পর রান্না চড়ে । তিন-চার দিন পরে একটি বড়লোকের গহিণী এলেন সন্ন্যাসিনীর কাছে । স্নানের ঘাটে যেতে শরৎকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন দ্যপারে। বোধ হয় সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে তাঁর কিছু কথা হয়ে থাকবে শরতের সম্বন্ধে । বললেন—তোমাকে দেখে আমার বড় ভাল লেগেছে । তোমার नाभ दितः ? —শরৎসন্দেরী । —কতদিন সন্ন্যাসিনীর কাছে আছো ? —বেশী দিন না । —আমাদের সঙ্গে যাবে? —কোথায় মা ? g —আমরা বেরিয়েছি কাশী, গয়া করবো বলে । মুখে বলতে নেই-এখন হবে কি না তা জানি নে । ইচ্ছে তো আছে । আমার বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে লক্ষেী । সেখানে গিয়ে একবার মেয়ের সঙ্গে দেখা করবো । আমি যাচ্ছি আর আমার দুই মেয়ে, ছোট ছেলে আর কত্ত"া । একটা লোক আমাদের দরকার । বয়েস হয়েছে—একা ভরসা করি নে সব ঝক্কি নিতে বিদেশে । তুমি চলো না, কেন আমার সঙ্গে ? মাইনে-টাইনে সব ঠিক করে দেবো এখন—কোনো অসুবিধে হবে না । গৌরী-মা বলেছিলেন তোমার কথা । কথা কি জানো, যে সে মেয়ে নিতে ভরসা হয় না । স্বভাব-চরিত্তির কার কি রকম না জেনে বাপন্ন নেওয়া তো যায় না । গৌরী-মা যখন তোমার সম্বন্ধে বললেন—তখন আমার নিতে কোন আপত্তি নেই । মহিলাটির প্রস্তাব ভালই—তবুও শরৎ বলল, ভেবে দেখি মা – আপনাকে আমি বলবো এখন সন্দেবেলা । গৌরী-মার কথকতা আপনি আসবেন তো শুনতে সন্দেবেলা ? তার পর মন্দিরে ফিরে এল ওরা স্নান সেরে । গিন্নী বললেন, আমি এখন যাচ্ছি মনোহরপুকুর রোডে আমার মেজ জামাইয়ের বাড়ি । নাতির অসুখ, তাকে গৌরী-মার কাছে নিয়ে এসে মাদলী ধারণ করাবো । জামাই খীস্টান মানযে, ওসব মানে না । মেয়েকে বলে রেখেছি জমাই আপিসে বেরলে নাতিকে মোটরে নিয়ে আসবো । যাবে আমার সঙ্গে ? & শরতের যাবার কৌতুহল হ'ল । ভাড়াটে ঘোড়ার গাড়ি করে ওরা অনেক রাস্তা গলি পার হয়ে একটা ছোট দোতলা বাড়ির সামনে এসে নামলে । শরৎ আশ্চধ" হয়ে ভাবলে, কলকাতার বড় লোক ; দেখি ওদের বাড়ি-ঘর কি রকম— প্রথমে এগারো বারো বছরের একটি মেয়ে নেমে এসে দোর খালেই চে'চিয়ে বলে উঠল – ও মা, কে এসেছে দ্যাখো— একটি সুন্দরী মেয়ে ওপর থেকে নেমে এসে গিন্নীর গলা জড়িয়ে ধরে বলল, মা কবে এলে ? কখন এলে ? চিঠি তো লিখলে না আজ আসছো ? এ কে মা ? —ওকে নিয়ে এলাম । আমাদের সঙ্গে যাবে। গৌরী-মার কাছে এসেছে- সেখানে থাকে। পাড়াগাঁয়ে বাড়ি—কোন জায়গায় গো ?