পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిOఫి বিভূতি-রচনাবলী মিনার কাকীমা সগবে অন্যান্য বেচিকা, ট্রাঙ্ক, আয়া ও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে শরৎকেওঁ নিয়ে গিয়ে কাশী নামল দিন-দশেক পরে। মাঝারি গোছের তেতলা বাড়ি, ছোট সংসার, স্বামী-স্ত্রী আর এক দেওর। দেওর লাহোর মেডিকেল ইকুলে পড়ে, এবার পাশ দেবে। নিচে একঘর গরীব লোক থাকে ওদের ভাড়াটে । & শরৎ মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে নি, কিন্তু নতুন জায়গায় এসে তার এত খারাপ লাগছিল । একটা কথা বলবার লোকও নেই। মিনার কাকীমা চাকর-বাকরকে আমল দেয় না, ছেলেমেয়েদেরও তার ভাল লাগে না । যেমন দণ্টে, তেমনি একগয়ে এগুলো । যা ধরবে তাই । একদিন মিনার কাকীমা বললে—ও বামনী, এই ডালটুকুওই নিচের তলার পটলের মাকে দিয়ে এসো—চেয়েছিল আমার কাছে, গরীব লোক— শরৎ ডাল দিতে গিয়ে দেখল একটি বেী রান্নাঘরে বসে ওর দিকে পিছন ফিরে রানা করছে । ওর কথায় বোটি ওর দিকে ফিরতেই শরৎ বললে, উনি ডাল পাঠিয়ে দিয়েছেন – রাখনে— তার পরেই বৌয়ের চোখ দুটোর দিকে চেয়ে শরতের মনে কেমন খটকা লাগল । বৌটি হেসে বললে, তোমার গলা নতুন শুনছি। তুমি বুঝি ওদের এখানে নতুন ভক্তি" হয়েছ ? বলছিলেন কাল দিদি ৷ বসো ভাই । আমি চোখে দেখতে পাইনে—বাটিটা রাখ এই সি*ড়ির কাছে । - ও, তাই অমন চোখের চাউনি । শরতের বকের মধ্যে যেন কোথায় ধাক্কা লাগল। বৌটি আবার বললে, তোমার নাম কি ভাই ? তোমার গলা শুনে মনে হচ্ছে বয়েস বেশী নয়। —আমার নাম শরৎ । বয়েস আপনার চেয়ে বেশীই হবে বোধ হয়—না ভাই আমার বয়েস কম নয় । তা আমাকে তুমি আপনি আজ্ঞে কোরো না । আমি একা থাকি এই ঘরে উনি তো বাইরের কাজেই ঘোরেন । তুমি এসো, দুজনে গল্প করব । --বেশ ভাই । তাহলে তো বেচে যাই— শরতের মনের মধ্যে কাশী আসবার কথা শুনে একটু আগ্রহ না হয়েছিল এমন নয় । মিনর মার কাছে এজন্যে সে না আসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে নি। কাশী গয়া ক'জন বেড়াতে পারে ? তাদের গায়ের নীলমণি চাটুজের মা শরতের ছেলেবেলায় কাশীতে এসে তাঁপ করে যান - সে গলপ বড়ীর এখনো ফুরলো না। আর বছরও সে গলপ বড়ীর মুখে শরৎ শুনেছে। সেই কাশীতে যদি এমনি যাওয়া হয়—হোক । কাশী এসে কিন্তু মিনার কাকীমার ফরমাশ আর হকুমের চোটে এতটুকু সময় পায় না শরৎ । সকালে উঠে হোসেলের কাজ শরে । একদফা ছোটদের দধে বালি', একদফা বড়দের চা খাবার, বাজল বেলা আটটা । তার পরে রান্নার পালা শরদ হ’ল এবং খাওয়ানোদাওয়ানের কাজ মিটতে বেলা দেড়টা। ওবেলা তিনটে থেকে সাড়ে তিনটের মধ্যে আবার চা খাবারের পালা। সন্ধ্যার সময় বাবরে বন্ধুরা বৈঠকখানায় এসে বসে, রাত নটা পৰ্য্যস্ত বিশ পেয়ালা চা-ই হবে । দপারবেলা কাজকম" চুকিয়ে ফাঁক পেলে শরৎ এসে বসে একতলায় অন্ধ বৌটির কাছে । শরৎ তার পরিচয় নিয়েছে –ওর নাম রেণুকা, ওর বাবা কাশীতেই স্কুল-মাস্টারি করতেন। মা নেই, ভাই নেই, আজ কয়েক বছর আগে ওর বিয়ে দিয়েই বাবা মারা যান। ওরা ব্রাহ্মণ, স্বামী সামান্য মাইনেতে কি একটা চাকরি করে। সন্ধ্যার সময় ভিন্ন বাড়ি আসতে পারে না –সারাদিন রেণুকাকে একা থাকতে হয় বাসাতে ।