পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদার রাজা రిషిé —ভাল আছেন ? —তা একরকম আছি । —এখানে কি চাকরি করছেন ? আপনার মেয়ে কোথায় ? —আমার মেয়ে ? ইয়ে— কেদার যেন একবার টেকি গিলে তার পর অকারণে হঠাৎ উৎসাহিতের সরে বললেন, মেয়ে কলকাতায়—তার মাসীমার— গোপেশ্বর চাটুজে সরে নিচু করে বললেন, শরৎ-মাকে আমার সঙ্গে এনেছি। সে আমার কাছেই আছে—কোনো ভয় নেই । இ. এই কথা বলার পরে কেদারের মুখের ভাবের অদ্ভুত পরিবত্তন ঘটলো। নিতান্ত নিরীহ ও নিবোধ লোক ধমক খেলে যেমন হয় তাঁর মুখ যেন তেমনি হয়ে গেল । গোপেশ্বর চাটুজের মনে হ’ল এখনি তিনি যেন হাত জোড় করে কে’দে ফেলবেন । বললেন, আমার মেয়েকে—আপনি এনেছেন ? কোথায় সে ? —কলকাতায় রেখে এসেছি। কালই আনবো । বসন, একটু নিরিবিলি জায়গায়— সব বলছি। ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন, কোনো ভয় নেই রাজামশায় । চলন ওদিকে— বলি সব খালে । ■ গোপেশ্বর চাটুজে বললেন, আপনার মেয়ে আগমনের মত পবিত্ৰ— কেদার হা-হা করে হেসে বললেন, ও কথা আমায় বলার দরকার হবে না হে গোপেশ্বর । আমার মেয়ে, আমাদের বংশের মেয়ে—ও আমি জানি । গোপেশ্বর চাটুতেজ বললেন, রাজামশায় শেষটাতে কি এখানে চাকরি স্বীকার করলেন ? কেদার অপ্রতিভের হাসি হেসে বললেন, ভুলে থাকবার জন্যে, স্রেফ ভুলে থাকবার জন্যে দাদা। এরা আমার বাড়ি যে গড়শিবপুরে তা জানে না । বেহালা বাজাই নি আজ এই দেড় বছর—বেহালার বাজনা যদি কোথাও শনি, মন কেমন করে ওঠে । —চলন, আজই কলকাতায় যাই— —আমার বড় ভয় করে । ভয়ানক জায়গা—আমি আর সেখানে যাব না হে, তুমি গিয়ে নিয়ে এস মেয়েটাকে । আজ রাতে এখানে থাকো—কাল রওনা হয়ে যাও সকালে । আমার কাছে টাকা আছে, খরচপত্র নিয়ে যাও । প্রায় সওয়া-শো টাকা এদের গদিতে মাইনের দরন এই দেড় বছরে আমীর পাওনা দাঁড়িয়েছে । আজ ঘোষ মশায়ের কাছে চেয়ে নেবো । গোপেশ্বর চাটুজে পরদিন সকালে কলকাতায় গেলেন এবং দুদিন পরে শরৎকে সঙ্গে নিয়ে বরপেপার স্টেশনে নেমে, নৌকাযোগে বৈকালে হিংনাড়া থেকে আধক্লোশ দরবত্তী ছতোরঘাটায় পৌঁছে কেদারকে খবর দিতে গেলেন। শরৎ নৌকাতেই রইল বসে। সন্ধ্যার কিছু আগে কেদার এসে বাইরে থেকে ডাক দিলেন—ও শরৎ— শরৎ কে’দে ছইয়ের মধ্যে থেকে বার হয়ে এল । সে যেন ছেলেমানষের মত হয়ে গেল বাপের কাছে। অকারণে বাপের ওপর তার এক দঙ্গয় অভিমান। কেদার বড় শক্ত পরযেমান,য—এমন সরে মেয়ের সঙ্গে কথা বললেন, যেন আজ ওবেলাই মেয়ের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছে, যেন রোজই দেখাসাক্ষাৎ হয়। —কাঁদিস নে মা, কাঁদতে নেই, ছিঃ ! কেদো না । ভাল আছিস ? শরৎ কাঁদতে কাঁদতেই বললে, তুমি তো আর আমার সন্ধান নিলে না ? বাবা তুমি এত নিষ্ঠুর । আজ যদি মা বেচে থাকতো, তুমি এমনি করে ভুলে থাকতে পারতে ? দজনেই জানে কারো কোনো দোষ নেই, যা হয়ে গিয়েছে তার ওপর হাত ছিল না বাবা বা মেয়ের কারো-রাগ বা অভিমান—সপণ অকারণ !