পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

00 বিভূতি-রচনাবলী সতরাং অপণার মিনতি ব্যথা হইল। অপর চিঠির জবাব দিল না । এদিকে অপদের অফিসের অবস্হা বড় খারাপ হইয়া আসিল । কাগজ উঠিয়া যাইবার যোগাড়, একদিন স্বত্বাধিকারী তাহাদের কয়েকজনকে ডাকিয়া পাঠাইলেন,-কি করা উচিত সে-সম্বন্ধে পরামশ" । কথাবাত্ত'র গতিকে বুঝিল কাগজের পরমায় আর বেশী দিন নয় । তাহার একজন সহকমী বাহিরে আসিয়া বলিল—এ বাজারে চাকরিটুকু গেলে মশাই দাঁড়াবার জো নেই একেবারে—বোনের বিয়েতে টাকা ধার, সদে-আসলে অনেক দাঁড়িয়েছে, সদটা দিয়ে থামিয়ে রাখার উপায় যদি না থাকে, মহাজন বাড়ি ক্লোক দেবে মশাই, কি যে করি ! ইতিমধ্যে অপর একদিন লীলাদের বাড়ি গেল । যাওয়া সেখানে ঘটে নাই প্রায় বছর দই, হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে তাহাকে দেখিয়া লীলা আনন্দ ও বিস্ময়ের সরে বলিয়া উঠিল—একি আপনি । আজ নিতান্তই পথ ভুলে বুঝি এদিকে এসে পড়লেন? অপর যে শধ্যে অপ্রতিভ হইল তাহা নয়, কোথায় যেন সে নিজেকে অপরাধী বিবেচনা করিল। একটুখানি আনাড়ীর মত হাসি ছাড়া লীলার কথার কোন উত্তর দিতে পারিল না। লীলা বলিল—এবার না হয় আপনার পরীক্ষার বছর, তার আগে তো অনায়াসেই আসতে পারতেন ? অপ, মদ হাসিয়া বলিল—কিসের পরীক্ষা ? সে সব তো আজ বছর দুই "ছেড়ে দিয়েছি । এখন খবরের কাগজের অফিসে চাকরি করি । লীলা প্রথমটা অবাক হইয়া তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল, কথাটা যেন বিশ্বাস করিল না, পরে দুঃখিতভাবে বলিল,— কেন, কি জন্যে ছাড়লেন পড়া, শনি ? আ-প-নি পড়া ছেড়েছেন ! هج লীলার চোখের ওই দটিটা অপর প্রাণে কেমন একটা বেদনার সন্টি করিল, অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার দৃষ্টি, তবুও সে হাসিমুখে কৌতুকের সরে বলিল—এমনি দিলাম ছেড়ে, ভাল লাগে না আর, কি হবে পড়ে ? তাহার এই হালকা কৌতুকের সরে লীলা মনে আঘাত পাইল, অপর্বে কি ঠিক সেই পরোনো দিনের অপবেই আছে ? না যেন । অপু বলিল—তুমি তো পড়ছ, না ? লীলা নিজের সম্বন্ধে কোন কথা হঠাৎ বলিতে চায় না, অপর প্রশ্নের উত্তরে সহজভাবে বলিল—এবার আই-এ পাশ করেছি, থাড" ইয়ারে পড়ছি। আপনি আজকাল পরানো বাসায় থাকেন, না, আর কোথাও উঠে গিয়েছেন ? লীলার মা ও মাসীমা আসিলেন। লীলা নিজের অাঁকা ছবি দেখাইল । বলিল— এবার আপনার মরখে ‘স্বগ হইতে বিদায়’টা শািনব, মা আর মাসীমা সেই জন্যে এসেছেন। আরও খানিক পরে অপর বিদায় লইয়া বাহিরে আসিল, লীলা বৈঠকখানার দোর পয্যন্ত সঙ্গে আসিল, অপর হাসিয়া বলিল,—লীলা, আচ্ছা ছেলেবেলায় তোমাদের বাড়িতে কোন বিয়েতে তুমি একটা হাসির কবিতা বলেছিলে মনে আছে ? মনে আছে সে কবিতাটা ? —উঃ ! সে আপনি মনে ক'রে রেখেছেন এতদিন । সে সব কি আজকের কথা ? অপর অনেকটা আপন মনেই অন্যমনকভাবে বলিল—আর একবার তুমি তোমার জন্যে আনা দধে অধোকটা খাওয়ালে আমায় জোর করে, শনলে না কিছুতেই—ওঃ, দেখতে দেখতে কত বছর হয়ে গেল । বলিয়া সে হাসিল, কিন্তু লীলা কোনও কথা বলিল না। অপর একবার পিছন দিকে হিল, লীলা অন্য দিকে মুখ ফিরাইয়া কি যেন দেখিতেছে । ফিরিবার পথে একটা কথা তাহার বার বার মনে আসিতেছিল । অপণা সন্দেরী বটে,