পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদার রাজা రిర్ఫి —বেশ বাবা, কি নিশ্চিন্দিই থাকতে পারো তুমি, তাই শধ্যে আমি ভাবি। ঘরে আগন লাগলেও বোধ হয় তোমার সাড়া জাগে না-মানষে যে কি ক'রে তোমার মত—আচ্ছা, আর একটা কথা জিজ্ঞেস করি—উত্তর দেবে ? কেদার বিষন্ন মুখে বললেন, কি ? —প্রভাসের নামে তোমাকে কেউ কিছল বলেছিল তো ? সেই মুখপোড়া গিরীনই বলে থাকবে । তুমি পলিসে খবর দিলে না কেন ? —তারাই বললে পলিসে খবর দেবে তোর নামে । তাতেই তো আমি পালিয়ে এলাম। " পলিসের কাছে নালিশে কে আসামী কে ফরিয়াদী হয় এ বিষয়ে সম্পন্ট ধারণা নেই শরতের—ওসব বড় গোলমেলে ব্যাপার। সে চুপ করে রইল । কেদার বললেন, কট পেয়েছিস না মা ? —যাও, তোমাকে আর— —না মা ছিঃ, রাগ করতে নেই । কি রাঁধছিস ? বেগন এনে দেবো এখন ওবেলা । গে"য়োহাটি যাবো তাগাদা করতে, ব্যাটারা আজ দু-বছর খাজনার নামটি করে নি। —করবে কি ? তুমি ছিলে এ চুলোয় ? মেয়েকে ভাসিয়ে দিয়ে নিজেও ভেসে পড়েছিলে। কি নিৰিবাকার পরষমানুষ তুমি তাই শুধু ভাবি বাবা । শরতের এ মেজাজকে কেদারের চিনতে বাকি নেই। এ সময় ওর সামনে থাকতে য়াওয়া মানে বিপদ টেনে আনা । কেদার তেল মেখে সরে পড়লেন। বাবাকে যতক্ষণ দেখা গেল শরৎ চেয়ে চেয়ে দেখলে, তারপর তিনি কালোপায়রা দীঘির পাড়ের বন-ধধলের লতাজালের আড়ালে অদশ্য হয়ে গেলে শরৎ দই হাতের মধ্যে মুখ গজে নিঃশব্দে ফুলে ফুলে কাঁদতে লাগল। তার বাবা, তাদের বনজঙ্গলে ঘেরা এত বড় গড়বাড়ি, কত পরোনো ভাঙা মন্দির, উত্তর দেউল, বারাহী দেবীর ভগ্ন পাষাণমনুত্তি", ওই ছায়ানিবিড় ছাতিমবন—এসব ফেলে তাকে কোথায় চলে যেতে হয়েছিল ভাগ্যের বিপাকে । আর যদি সে না ফিরতো, আর যদি বাবাকে না দেখতো, গড়বাড়ির মাটির পণ্যস্পশালাভের সৌভাগ্য যদি আর না ঘটতো তার ? কার পায়ের শব্দে সে মুখ তুলে দেখলে রাজলক্ষী একটা বাটি হাতে রান্নাঘরের দাওয়ায় উঠছে । এই আর একটি মানুষ—যাকে দেখে শরৎ এত আনন্দ পায় ! দেড় বছরের মধ্যে কত জায়গা সে বেড়াল, কত নতুন নতুন মেয়ের সঙ্গে আলাপ হ’ল—কিস্ত এমন কি একটা দিনও গিয়েছে যেদিন সে এই গরীব ঘরের মেয়েটার কথা ভাবে নি ? —কি রে ওতে ? —তোমাদের জন্যে একটু সন্তনি-মা বললেন জ্যাঠামশায়কে দিয়ে আয়— —খাওয়া হয়েছে ? 酸 —পাগল ! এখনি খাওয়া হবে ? তোমাদের এখান থেকে গিয়ে নাইবো—তার পর— —আর বাড়ি যায় না, এখানেই থা— —না না শরৎদি— —খেতেই হবে । আচ্ছা, কেন অমন করিস বল তো ? কতকাল দুই বোনে বসে একসঙ্গে খাই নি তা তোর মনে পড়ে ? মোটে কাল আর আজ যদি হয়—সত্যি ভাই, বিশ্বাস এখনও যেন হচ্ছে না যে, আমি আবার গড়শিবপুরের ভিটেতে বসে আছি । একযুগ পরে আবার এ মাটিতে— রাজলক্ষীকে শরৎ এখনও সব কথা থলে বলে নি । রাজলক্ষীও ওকে খুটিনাটি কিছুই জিজ্ঞেস করে নি প্রথম আনন্দের উত্তেজনায়। শরৎ মনে মনে ঠিক করে রেখেছে রাজলক্ষসীকে "সে অবসর সময়ে সব খালে বলবে। বন্ধত্বের মধ্যে দেওয়াল তুলে রাখা তার পছন্দ হয় না।