পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ლ)8ყ বিভূতি-রচনাবলী সন্তনি রেখেছি খেয়ে বলবি চল— বিকেলের দিকে শরৎ পুকুর থেকে গা ধয়ে বাড়ি গিয়ে দেখলে রান্নাঘরের দাওয়ায় ইটচাপা একখানা কাগজের কোণ বেরিয়ে রয়েছে । একটু অবাক হয়ে কাগজটা টেনে নিয়ে দেখলে, তাতে লেখা আছে— “আজ সন্ধ্যার পরে রানীদিঘীর পাড়ে ডুমরতলায় আমাদের সঙ্গে দেখা করিবা। নতুবা কলিকাতায় কি হইয়াছিল প্রকাশ করিয়া দিব । হেনা বিবি আমাদের সঙ্গে আছে ভাজনঘাটের কুঠির বাংলায় । সেও তোমার সঙ্গে দেখা করিতে চায় । দেখা করিলে তোমার ভাল হইবে । এ চিঠির কথা কাহাকেও বলিও না । বলিলে যাহা হইবে দেখিতেই পাইবে । সাবধান ।” শরৎ টলে পড়ে যেতে যেতে কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিলে। মাথাটা যেন ঘরে উঠল। আবার সেই হেনা বিবি, সেই পাপপরীর কথা—যা মনে করলে শরতের গা ঘিন ঘিন করে । এ চিঠিখানা ছয়েছে, তাতেই তাকে নাইতে হবে এই অবেলায় । এরা তাকে রেহাই দেবে না ? তাদের গড়বাড়িতে কলকাতার লোকের জোর কিসের ? সব সমস্যার সে সমাধান করে দিতে পারে এখনি, এই মহমত্তেই কালোপায়রা দীঘির অতল জলতলে । কিস্ত বাবার মুখের অসহায় ভাব মনে এসে তাকে দ্ৰবলি করে দেয়। নইলে সে প্রভাসেরও ধার ধারতো না, গিরীনেরও না । নিজের পথ করে নিতো নিজেই । তাদেরই বংশের কোন রানী ঐ দীঘির জলে আত্মবিসর্জন দিয়েছিলেন মান বাঁচাতে। সেও ঐ বংশেরই মেয়ে । তার ঠাকুরমারা যা করেছিলেন সে তা পারে। বাবাকে এ চিঠি দেখাবে না । বাবার ওপর মায়া হয়, দিব্যি গানবাজনা নিয়ে আছেন, ব্যস্ত হয়ে উঠবেন এখনি । গোপেশ্বর জ্যাঠামশায়কে দেখাতে লজ্জা করে । থাক, গে, আজ সে এখনি রাজলক্ষীদের বাড়ি গিয়ে কাটিয়ে আসবে অনেক রাত পয্যন্ত। উত্তর দেউলে পিদিম আজ সকাল সকাল দেখাবে। রাজলক্ষীর মা ওকে দেখে বললেন, এসো এসো মা—শরৎ, আচ্ছা পাগলী মেয়ে, অত পয়সাকড়ি খরচ করে রাজিকে দলে আর শাড়ি না দিলে চলতো না ? . রাজলক্ষীর কাকীমা বললেন, গরীবের ওপর ওদের চিরকাল দয়া অমনি—কত বড় বংশ দেখতে হবে তো ? বংশের নজর যাবে কোথায় দিদি ? শরৎ সলঙ্গ সরে বললে, ওসব কথা কেন খড়ীমা ? " কি এমন জিনিস দিয়েছি—কিছ না—ভারি তো জিনিস—রাজি কোথায় ? 温 রাজলক্ষীর মা বললেন, এই এতক্ষণ তোমার কথাই বলছিল, তোমার দেওয়া কাপড় আর দলে দেখতে চেয়েছেন গাঙ্গলীদের বড় বউ, তাই নিয়ে গিয়েছে দেখাতে। শরৎদি বলতে মেয়ে অজ্ঞান, তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ! বলে, মা—শরৎদিকে ছেড়ে কোথাও গিয়ে সখ পাবো না । বসো, এলো বলে— একটু পরে গাঙ্গলী-বউকে সঙ্গে নিয়ে রাজলক্ষী ফিরলো, সঙ্গে জগন্নাথ চাটুজের পালবধ নীরদা । নীরদা শরতের চেয়ে ছোট, শ্যামবণ, একহারা গড়নের মেয়ে, খাব শাস্ত প্রকৃতির বউ বলে গাঁয়ে তার সংখ্যাতি আছে। গাঙ্গলী বউ বললেন, এই যে মা-শরৎ, তোমার কথাই হচ্ছিল। তুমি যে শাড়ি দিয়েছ, দেখতে নিয়েছিলাম—ক’টাকা নিলে ? ভাজনঘাটের বাজার থেকে আনানো ? বটঠাকুর কিনেছেন বুঝি ?