পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

यातावप्रकी θάά গাঁথার জন্যে ?“না, এবার বোধ হয় নিজে আসবে। মাখয্যেরা বোধ হয় ভাড়লমামার টাকা চুরি করে, তাই ওদের হাতে আর টাকা দেবে না । বেঙ্গমা-বেঙ্গমীর গল্পের ফাঁকে দিদিমাকে কখনো বা জিজ্ঞেস করি—লালমণির হাট কোথায় দিদিমা ? দিদিমা অবাক হয়ে বলেন— লালমণিরহাট । কেন, তাতে তোর হঠাৎ কি দরকার পড়ল ?--তা, কি জানি বাপ কোথায় লালমণিরহাট ? নে নে, ঘমেসে তো আমায় রেহাই দে,-রাত্তিরে এখন গিয়ে আমায় দটো মোচা কুটে রাখতে হবে, ঠাকুরঘরের বাসন বের করতে হবে, ছিণ্টির কাজ পড়ে রয়েছে— . তোমায় নিয়ে সারা রাত গলপ করলে তো চলবে না আমার ! 態 আমি অপ্রতিভের সরে বলতুম—না দিদিমা, গল্প বল, যেও না, আচ্ছা মন দিয়ে শনচি । এর পরে আবার মামার বাড়ি গেলাম বছর দুই পরে । এই দু-বছরের মধ্যে আমি কিন্ত ভঙুলমামার বাড়ির কথা ভুলে যাইনি। শীতের সন্ধ্যায় গোয়ালে সাজালের ধোঁয়ায় আমাদের পুকুরপাড়টা ভরে যেত, বনের গাছপালাগুলো যেন অস্পষ্ট, যেন মনে হ’ত সন্ধ্যায় কুয়াসা হয়েচে বুঝি আজ, সেইদিকে চাইলেই আমার অমনি মনে পড়তো ভণভুলমামার সেই আধতৈরি কোঠাবাড়িটার কথা—এমনি শেওড়া বনে ঘেরা পর্কুেরপাড়ে—এতদিনে কতটা গাঁথা হ’ল কে জানে ? এতদিন নিশ্চয় ভণ্ডলমামা মািখয্যেবাড়ি টাকা পাঠিয়েচে । মামার বাড়িতে রাতে এসে পৌঁছলাম। সকালে ঐ পথে বেড়াতে গিয়ে দেখি-ও মা, এ কি, ভন্ডুলমামার বাড়িটা যেমন তেমনি পড়ে আছে ! চার-পাঁচ বছর আগে যতটা গাঁথা দেখে গিয়েছিলাম, গাঁথনির কাজ তার বেশী আর একটুও এগোয় নি, বনে-জঙ্গলে একেবারে ভত্তি", ইটের গাঁথনির ফাঁকে বট-অশখের বড় বড় চারা ! আহা, ভণভুলমামা বোধ হয় টাকা পাঠাতে পারে নি আর ! 虽 ভাণ্ডুলমামার সম্বন্ধে সেবার অনেক কথা শুনলাম । ভঙুলমামা লালমণিরহাটে নেই, সান্তাহারে বদলি হয়েচে । তার এখন দুই ছেলে, দুই মেয়ে । বড় ছেলেটি আমারই বয়সী, ভঙুলমামার মা সম্প্রতি মারা গিয়েচে । বড় ছেলেটির পৈতে হবে সামনের চৈত্রমাসে । সেই সময়ে ওরা দেশে আসতে পারে । কিন্ত সে-বার চৈত্রমাসের আগেই দেশে ফিরলাম, ভঙুলমামার সঙ্গে দেখার যোগাযোগ হয়ে উঠল না । বছর তিনেক পরে। দোলের সময় । মামার বাড়ির দোলের মেলা খুব বিখ্যাত, নানা জায়গা থেকে দোকানপসারের আমদানি হয় । আমি মায়ের কাছে আবদার শরন করলাম, এবার আমি একা রেলে চড়ে মেলা দেখতে যাব মামার বাড়ি । আমায় একা ছেড়ে দিতে বাবার ভয়ানক আপত্তি, অবশেষে অনেক কান্নাকাটির পর তাঁকে রাজী করানো গেল। সারাপথ সে কি আনন্দ একা টিকিট করে, রেলে চড়ে, মামার বাড়ি চলেছি । জীবনে এই সব প্রথম এ কা বাড়ির বার হয়েচি সেই আনন্দেই সারা পথ আত্মহারা । কিন্ত এ সখি সইল না। মামার বাড়ির স্টেশনে নেমেই কি রকম হোচট খেয়ে প্ল্যাটফর্মের কাঁকরের উপর পড়ে গিয়ে আমার হাঁটু ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল । অতি কন্টে মামার বাড়ি পৌছে বিছানা নিলাম। পরদিন সকালে উঠতে গিয়ে দেখি আর উঠতে পারি নে— দুই হাঁটুই বেজায় টাটিয়েছে ; সঙ্গে সঙ্গে জর। কোথা দিয়ে দোল কেটে গেল টেরও পেলাম না। দিদিমাকে অনুরোধ করলাম, বাড়িতে যেন তাঁরা চিঠি না লেখেন যে আমি আসবার সময় স্টেশনে পড়ে গিয়ে হাঁটু কেটে ফেলেছি। সেরে উঠে বেড়াতে বেরিয়ে একদিন দেখি ভন্ডুলমামার বাড়িটা অনেক দর গাঁথা হয়ে গেছে। কাঠ-থামাল পৰ্য্যন্ত গাঁথা হয়েছে, কিস্ত কড়ি এখনও বসানো হয় নি।