পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যালাবদল రీరS পিসিমা কিন্ত এখনো বেচে । এখনও বড়ী গঙ্গানানে যায়। নিজের হাতে রোধে খায়, বয়স নব্বই-এর কাছাকাছি, কিন্ত এখনও চোখের তেজ বেশ, দতি পড়ে নি, বড়ী একেবারে অবখামার পরমায় নিয়ে জমেছে, এদিকে যারা তার মরণের পানে উৎসক দণ্টিতে চেয়ে আছে, তাদের জীবন ভাঁটিয়ে শেষ হতে চলল । সেটেলমেণ্টের কাজ ছেড়ে পাটনা থেকে চলে এলাম। পণবাব তখনও সেখানে আমীন। বছর তিনেক পরে একদিন গয়া স্টেশনে পুণবাবর সঙ্গে দেখা । দাপরের পর এক্সপ্রেস আসবার সময় স্টেশনের প্লাটফর্মে পায়চারি করচি, একটু পরেই ট্রেনটা এসে দাঁড়ালো । পাণবাব নামলেন একটা সেকেণ্ড ক্লাস কামরা থেকে, অন্য কামরা থেকে দু-জন দারোয়ান নেমে এসে জিনিসপত্রের তদারকে প্যস্ত হয়ে পড়ল। আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম । পাণবাবর পরনে দামী কাঁচি ধতি, গায়ে সাদা সিকের পাঞ্জাবি, তার ওপরে জমকালো পাড় ও কলকাদার শাল, পায়ে প্যারিস গাটার অটিা সিকের মোজা ও পাপ-শ, চোখে সোনার চশমা, হাতে সোনার ব্যাডওয়ালা হাতঘড়ি । আমি গিয়ে আলাপ করলাম। পণ বাব আমায় চিনতে পেরে বললেন—এই যে রামরতনবাব, ভাল আছেন ? তারপর, এখন কোথায় ? 劇 আমি বললাম—আমি এখানে চেঞ্জে এসেচি মাস-তিনেক, আপনি এদিকে—ইয়ে— তাঁর অদ্ভুত বেশভুষার দিকে চেয়ে আমি কেমন হয়ে গিয়েছিলাম। পণ‘বাবকে এ বেশে দেখতে আমি অভ্যন্ত নই, আমার কাছে সতীর ময়লা-চিট সোয়েটার ও সবুজ আঁলোয়ান গায়ে প্রণবাব বেশী বাস্তব,—তা-ছাড়া চুয়ান্ন-পঞ্চান্ন বছরের বন্ধের এ কি বেশ । কি ব্যাপারটা ঘটেচে তা অবশ্য পণবাব বলবার আগেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম । জিনিসপত্র গুছিয়ে পণবাব ওয়েটিং রমে ঢুকলেন ; তিনি সাউথ বিহার লাইনের গাড়িতে যাবেন । গাড়ির এখনও ঘণ্টা-দুই দেরি। একজন দারোয়ানকে ডেকে বললেন— ভুপাল সিং, এখানে ভাল সিগারেট পাওয়া যায় কিনা দেখে এস—নইলে কাঁচি নিয়ে এস এক বাক্স— আমায় বললেন—ওঃ, অনেক দিন পরে আপনার সঙ্গে দেখা । আর বলেন কেন, বিষয় থাকলেই হাঙ্গামা আছে। সামনে আসচে জানুয়ারী কিস্তি—তহশীলদার বেটা এখনও এক পয়সা পাঠায় নি, লিখেচে এবার নাকি কলাই ফসল সবিধে হয় নি। তাই নিজে যাচ্ছি মহালে, মাসখানেক থাকবো । গাড়িটা এখানে আসে কটায় ? ভাল কথা, এখানে টাইমটেবেল কিনতে পাওয়া যাবে ? কিনতে ভুল হয়ে গেল হাওড়ায়— আমি জিজ্ঞাসা করলাম—আপনার পিসিমা ? দারোয়ান সিগারেট নিয়ে এল। পণবাব একটা সর ও সাদীঘ' হোল্ডার বার করলেন, আমার দিকে একটা সিগারেট এগিয়ে দিয়ে বললেন, আসনে । তারপর সিগারেট ধরিয়ে আরামে ধোঁয়া ছেড়ে বললেন–পিসিমা মারা গিয়েচেন আরবছর কাত্তিক মাসে । তারপর থেকেই বিষয়-আশয়ের ঝঞ্চাটে পড়েচি–নিজে না দেখলে কি জমিদারী টেকে ? আর এই বয়সে ছুটোছটি করে পারি নে, একটা ভাল কাজ জানা লোকের সন্ধান দিতে পারেন রামরতনবাব ? টাকা-চল্লিশ মাইনে দেব, খাবে থাকবে— ওয়েটিং রমে বসে পণেবাব দ-বোতল লেমনেড খেলেন এই শীতকালে । একবার দারোয়ানকে দিয়ে গরম জিলিপী আনালেন দোকান থেকে, একবার নিমকি বিস্কুট আনালেন । আর একবার নিজে স্টেশনের বাইরের দোকান থেকে এক ডজন কমলালেব; কিনে আনলেন । আমায় প্রতিবারেই খাওয়ানোর জন্য পীড়াপীড়ি করলেন, কিস্ত আমার শরীর খারাপ, খেতে একেবারেই পারি নে, সে কথা জানিয়ে ক্ষমা চাইলাম। একটু পরেই