পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত రీశ్రీ শতকরা নিরানব্বই জনের বেলা যা হয়, অপর বেলাও তাহার ব্যতিক্রম হয় নাই । যথানিয়মে সংসার-যাত্রা, গহস্থালী, কেরানগিরি, ভাড়া বাড়ি, মেলিনস ফুড ও অয়েলক্লথ। তবে তাহার শেষোক্ত দটির এখনও আবশ্যক হয় নাই—এই যা। = @ অপণা ঘরের দোরের কাছে ব'টি পাতিয়া কুটনা কুটিতেছে, স্বামীকে দেখিয়া বলিল— আঞ্জ এত সকাল সকাল যে ! তারপর সে ব"টিখানা ও তরকারীর চুপড়ি একপাশে সরাইয়া রাখিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল । অপর বলিল, খুব সকাল আর কৈ, সাতটা বেজেছে, তবে অন্যদিনের তুলনায় সকাল বটে। হ্যা, তেলওয়ালা আর আসে নি তো ? —এসেছিল একবার দর্পরে, ব'লে দিয়েছি বধেবারে মাইনে হ’লে আসতে । তোমার আসবার দেরি হবে ভেবে এখনও আমি চায়ের জল চড়াই নি । কলের কাছে অন্য ভাড়াটেদের ঝি-বোঁয়েরা এ সময় থাকে বলিয়া অপণা স্বামীর হাত মুখ ধুইবার জল বারান্দার কোণে তুলিয়া রাখে। অপর মুখ ধাইতে গিয়া বলিল, রজনীগন্ধা গাছটা হেলে পড়েছে কেন বল তো ? একটু বেধে দিও । চা খাইতে বসিয়াছে, এমন সময়ে কলের কাছে কোন প্রৌঢ়া-কণ্ঠের ককাশ আওয়াজ শোনা গেল—তা হলে বাপ একশো টাকা বাড়িভাড়া দিয়ে সাহেব পাড়ায় থাকো গে। আজ আমার মাথা ধরেছে, কাল আমার ছেলের সাদ" লেগেছে—পালার দিন হলেই যত ছতো । নাও না, সারা ওপরটাই তোমরা ভাড়া নাও না ; দাও না পয়ষট্টি টাকা—আমরা না হয় আর কোথাও উঠে যাই, রোজ রোজ হাঙ্গামা কে সহ্যি করে বাপ ? অপ বলিল—আবার বুঝি আঞ্জ বেধেছে গাঙ্গলী-গিন্নীর সঙ্গে ? অপণা বলিল—নতুন ক'রে বাধবে কি, বেধেই তো আছে । গাঙ্গুলী-গিন্নীরও মাখ বড় খারাপ, হালদারদের বেটা ছেলেমানষে, কোলের মেয়ে নিয়ে পেরে ওঠে না, সংসারে তো আর মানুষ নেই, তবুও আমি এক-একদিন গিয়ে বাটনা বেটে দিয়ে আসি । সিড়ি ও রোয়াক ধুইবার পালা লইয়া উপরের ভাড়াটেদের মধ্যে এ রেষারেষি, দ্বন্দ্ব— অপদ আসিয়া অবধি এই এক বৎসরের মধ্যে মিটিল না । সকলের অপেক্ষা তাহার খারাপ লাগে ইহাদের এই সংকীর্ণতা, অনদারতা। কট কট করিয়া শক্ত কথা শনাইয়া দেয়— বচিয়া, বাঁচাইয়া কথা বলে না, কোন কথায় লোকের মনে আঘাত লাগে, সে কথা ভাবিয়াও দেখে না । বাড়িটাতে হাওয়া খৈলে না, বারান্দাটাতে বসিলে হয়ত একটু পাওয়া যায়, কিন্তু একটু দরেই ঝাঁঝরি-ড্রেন, সেখানে সারা বাসার তরকারীর খোসা, মাছের অশি, আবsজনা, বাসি ভাত-তরকারী পচিতেছে, বর্ষার দিনে বাড়িময় ময়লা ও আধময়লা কাপড় শকাইতেছে, এখানে তোবড়ানো টিনের বাক্স, ওখানে কয়লার ঝুড়ি । ছেলেমেয়েগুলো অপরিকার, ময়লা পেনী বা ফ্রক পরা। অপদের নিজেদের দিকটা ওরই মধ্যে পরিকার-পরিচ্ছন্ন থাকিলে কি হয়, এই ছোট্ট বারাদার টবে দু-চারটে রজনীগন্ধা, বিদ্যাপাতার গাছ রাখিলে কি হয়, এই এক বৎসর সেখানে আসিয়া অপ বঝিয়াছে, জীবনের সকল সৌন্দৰ্য্য, পবিত্রতা, মাধ্ষ্য এখানে পলে পলে নস্ট করিয়া দেয়, এই আবহাওয়ার বিষাক্ত বাপে মনের আনন্দকে গলা টিপিয়া মারে। চোখে পীড়া দেয় যে অসন্দর, তা ইহাদের অঙ্গের আভরণ। থাকিতে জানে না, বাস করিতে জানে না, শংকরপালের মত খায় আর কাদায় গড়াগড়ি দিয়া মহা আনন্দে দিন কাটায়। এত কুন্ত্রী বেস্টনীর মধ্যে দিন দিন যেন তাহার দম বন্ধ হইয়া আসিতেছে। কিন্ত উপায় নাই, মনসাপোতা থাকিলেও আর কুলায় না, অথচ তের টাকা ভাড়ায় এর চেয়ে ভাল ঘর শহরে কোথাও মেলে না। তবুও অপণা এই আলো-হাওয়াবিহীন স্থানেও