পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যালাবদল ୦୩୩ দিয়েই বা যাবে কেন ? সে সময় তার অত্যন্ত খারাপ সময় যাচ্চে, চাকুরির চেষ্টায় আকাশ, পাতাল হাতড়ে কোথাও কিছু মিলচে না—নিজের থাকবার জায়গা নেই তো পিপে-কাটা কাঠের টবে বসানো অত বড় গাছ রাখে কোথায় ? মাসখানেক পরে হিমাংশর অবস্থা এমন হোল যে আর কলকাতায় থাকাই চলে না। কলকাতার বাইরে যাবার আগে গাছটার একটা কিনারা হয়ে গেলেও মনে শান্তি পেত। কিন্ত আজও যা, কালও তাই—নীলামওয়ালাকে কমিশনের রেট আরও বাড়িয়ে দিতে হয়েচে গাছটারাখবার জন্যে, নৈলে সে দোকানে রাখতে চায় না । কিন্তু হিমাংশর দভাবনা’।এই যে, ও কলকাতা ছেড়ে চলে গেলে গাছটার আর যত্ন হবে না, নীলামওয়ালার দায় পড়েচে, কোথাকার একটা এরিকা পাম গাছ বাঁচলো কি মোলো—অত তদারক করবার তার গরজ নেই। কিন্তু শেষে বাধ্য হয়ে কলকাতা ছাড়তে হোল হিমাংশকে । অনেকদিন পরে সে আবার এল কলকাতায় । নীলামওয়ালার দোকানে বিকেলে গেল গাছ দেখতে । গাছটা নেই, বিক্ৰী হয়ে গিয়েচে সাড়ে সাত টাকায় । কমিশন বাদ দিয়ে হিমাংশর বিশেষ কিছ রইল না। কিন্তু টাকার জন্যে ওর তত দুঃখ নেই, এত দিন পরে সত্যি সত্যিই গাছটা পরের হয়ে গেল । lo তার প্রবল আগ্রহ হোল গাছটা সে দেখে আসে । নীলামওয়ালা সাহেব প্রথমে ঠিকানা দিতে রাজী নয়, নানা আপত্তি তুললে-বহন কন্টে তাকে বুঝিয়ে ঠিকানা ষোগাড় করলে । সাকুলার রোডের এক সাহেবের বাড়িতে গাছটা বিক্ৰী হয়েছে, হিমাংশ পরদিন সকালে সেখানে গেল । সাকুলার রোডের ধারেই বাড়ি, ছোট গেটওয়ালা কলপাউণ্ড, উঠোনের একধারে একটা বাতাবী নেব গাছ, গেটের কাছে, একটা চারা পাকুড় গাছ। সাহেবের গাছপালার শখ আছে—পাম অনেক রকম রেখেছে, তার মধ্যে ওর পামটাই সকলের বড়। হিমাংশ বলে, সে হাজারটা পামের মধ্যে নিজেরটা চিনে নিতে পারে। কপাউণ্ডে ঢুকবার দরকার হোল না, রাস্তার ফুটপাত থেকেই বেশ দেখা যায়, বারান্দায় উঠবার পৈঠার ধারেই তার পিপে-কাটা টবসন্ধ পামগাছটা বসানো রয়েচে । গাছের চেহারা ভালো—তবে তার কাছে থাকবার সময় আরও বেশী সতেজ, সবুজ ছিল । হিমাংশর মনে পড়লে এই গাছটার কবে কোন ডাল গজালো—তার খাতায় নোট করা থাকতো । ও বলতে পারে প্রত্যেকটি ডালের জন্মকাহিনী—একদিন তাই ওর মনে ভারী কষ্ট হোল, সেদিন দেখলে সাহেবের মালী নীচের দিকে ডালগুলো সব কেটে দিয়েচে । মালীকে ডাকিয়ে বল্লে—ডালগলো ওরকম কেটেচ কেন ? মালাঁটা ভাল মানুষ । বল্লে— আমি কাটি নি বাবা, সাহেব বলে দিল নীচের ডাল না কাটলে ওপরের কচি ডাল জোর পাবে না। বল্লে, টবের গাছ না হেমলে ও ডালগলো আপনা থেকেই ঝরে পড়ে যেতো। হিমাংশ বল্লে—তোমার সাহেব কিছ জানে না। যা ঝরে যাবার তা তো গিয়েচে, আত বড় গড়িটা বার হয়েচে তবে কি করে ? অার ভেঙো না। বছর তিন চার কেটে গেল । হিমাংশ গাছের কথা ভুলেচে । সে গালডি না ঘাটশিলা ওদিকে কোথাও জমি নিয়ে বসবাস করে ফেলেচে ইতিমধ্যে । গাছপালার মধ্যে দিয়েই ভগবান তার উপজীবিকার উপায় করে দিলেন। এখানে হিমাংশ ফুলের চাষ আরম্ভ করে দিলে সবণরেখার তীরে। মাটির দেওয়াল তুলে খড়ের বাংলো বাঁধলে । একদিকে দরে অনুচ্চ পাহাড়, নিকটে, ঘরে শালবন, ককির মাটির লাল রাস্তা, অপব্ব* সৰ্যোদয় ও সযTান্ত । ফুলের চাষে সে উন্নতি করে ফেল্পে খুব শীগগীর । ফুলের চেয়েও বেশী উন্নতি করেচে চীনা স্বাস ও ল্যাভেন্ডার ঘাসের চাষে । এই জীবনই তার চিরদিনের কাম্য ছিল, ও-জায়গা