পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যালাবদল θιγά বড় রাস্তার মোড়ে বই-এর দোকানগুলো দেখে বেড়ালম । রাশি রাশি পরোনো বই, ম্যাগাজিন। অধিকাংশই বাজে। অলস, অপরিণত মনের তৈরী জিনিস। চটকদার মলাটওয়ালা অসার বিলিতি নভেল, সিনেমার ম্যাগাজিন ইত্যাদি । অন্যদিন এখানে বেছে বেছে দেখি, যদি ভালো কিছু পাওয়া যায়। আজ আর বাছবার মত ধৈয্য ছিল না । মনের আকাশের চেহারা আজ ঘষা পয়সার মত, নীলিমার সৌন্দযf্য তো নেই-ই, মেঘভরা বাদলদিনের রপেও নেই—নিতান্তই ঘষা পয়সার মত তার চেহারা । সিনেমা দেখতে যাবো ? আউট্রাম ঘাটে বেড়াতে যাবো ? কোথাও বসে খুব গরম চা খাবো ? লেকের দিকে যাবো ?— - ধ-মতিলার গিজার সামনে এক জায়গায় লোকের ভিড় জমেছে । একটা সাহেবী পোশাকপরা লোক ফুটপাথে অজ্ঞান হয়ে শয়ে আছে, ধড়টা ও মাথাটা পরস্পরের সঙ্গে এমন অস্বাভাবিক কোণের সন্টি করেচে, যে মনে হচ্ছে লোকটা মরে গিয়েছে। দুজন সাজেণ্ট এল । লোকে বল্লে, সামনের বাড়ির নীচের তলায় ওই বাথরুমের মধ্যে পড়েছিল এই অবস্হায় । বাড়ির দারোয়ান ধরাধরি করে ফুটপাথে এনে শুইয়ে দিয়েচে—লোকটা কে, তারা চেনে না। লোকটা মরে নি, মদে বেহশ হয়ে আছে। সাজেণ্ট দু'জন ধরাধরি করে তার সংজ্ঞাহীন নিঃসাড় দেহটা একটা ট্যাক্সিতে তুলে নিয়ে কোথায় গেল । লোকটার ওপর সহান,ভূতি হোল আমার । সেই নিবোধ বধটার ওপর যা হয় নি, এই বেহশ মাতালের ওপর তা হ’ল । বেচারা আনন্দের খোঁজে বেরিয়েছিল, পথও যা হয় একটা ধরেছিল, হয়তো ভুল পথ, হয়তো সত্যি পথ-আনন্দের সত্যতা তার মাপকাঠি—কে বলবে ওর কি অভিজ্ঞতা, কি তার মুল্য ? ওই জানে । কিন্ত ও তো বেহুশ । কাজ’ন পাকের সামনে এলম । অনেকগুলো চাকর ও আয়া সাহেবদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে ব্যটির ভয়ে গাড়িবারান্দার নীচে ফুটপাতের ওপর বসে আছে । বস্টি একটু একটু বাড়ছে, আমিও সেখানে দাঁড়ালম । একটা ছোট ছেলে, ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া সোনালী চুল, নীল চোখ, বছর দেড় কি দহে বয়েস—সে তার চাকরের টুপিটা মাটি থেকে তুলে নিয়ে টলতে টলতে উঠে অতি কটে নাগাল পেয়ে চাকরের মাথায় টুপিটা পরিয়ে দিচ্ছে—আর যেমন পরানো হয়ে যাচ্ছে, অমনি হাত নেড়ে, নেচে, ঘাড় দলিয়ে দন্তহীন মুখে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে । কিন্তু টুপিটা ভাল করে মাথায় বসাতে পারচে না, একটু পরেই গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে, আবার খোকা অতি কন্টে টুপিটা মাথায় তুলে দিচ্ছে-‘আবার সেই হাসি, সেইহাত পা নাড়া, সেই নাচ-“তাকে কেউ দেখচে না, কার্য দেখবার সে অপেক্ষাও রাখচে না, তার চাকর পাশ্ববত্তি’নী আয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আলাপে এমন অন্যমনস্ক, খোকা কি করচে না করচে সেদিকে তার আদৌ খেয়াল নেই, নিকটের অন্য অন্য ছেলেমেয়েরাও নিতান্ত শিশ—েওই খোকাটি আপন মনে বার বার টুপি পরানো খেলা করচে । আমি মন্ত্রমধের মত চেয়ে রইলাম। নরম নরম কচি হাত পায়ের সে কি ছন্দ, কি BBBBB BBBBS BB BBB BBS B BBBB BBBBBS SBBBB BBBB BBB আবার সামনে কুকে ঝুকে পড়চে, একগাল হাসচে, ছোট ছোট মুঠি বাঁধা হাত দটো একবার তুলচে, একবার নামাচ্ছে--শিশমনের আগ্রহভরা উল্লাসের সে কি বিচিত্র, কি সম্পন্ট, ভাষাহীন বাত্তা 1--- আমি আর চোখ ফেরাতে পারি নি। হঠাৎ অদৃষ্টপৰব, অপ্রত্যাশিত সৌন্দয্যের সামনে পড়ে গিয়েছি যেন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম । হঠাৎ চাকরটার হ:শ হোল—সে আয়ার সঙ্গে গল্প বন্ধ করে খোকার দিকে ফিরে টুপিটা তার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে পাশে একটা পেরাবলেটারের মধ্যে রেখে দিলে। খোকার মুখ অন্ধকার হয়ে গেল, সে টলতে টলতে বি. র. ৩—২৫