পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা একসময় বটতলা, বঙ্গবাসী এবং বসুমতী প্রকাশিত ‘গ্রন্থাবলী পুরাতন এবং নতন বাঙ্গালা সাহিত্যের অনুরাগী পাঠকসমাজ সন্টি করে বাঙ্গালা সাহিত্যের অশেষ উপকার সাধন করেছিল । বটতলা, বঙ্গবাসী, বসুমতীর প্রবতিত রীতি অনুসরণ করে এ-যুগের একাধিক প্রকাশক লধধপ্রতিষ্ঠ লেখকের রচনাবলী’ প্রকাশ করছেন । যে-লেখক পরলোকগত এবং ঘাঁর নতন সটির সম্ভাবনা নেই, তেমন লেখকের রচনাবলী একত্র সঙ্কলিত হওয়ার বিশেষ তাৎপয আছে । খণ্ড এবং বিচ্ছিন্ন রচনার মধ্যে লেখকের সমগ্র পরিচয় আচ্ছন্ন অথবা তার অংশমাত্র আভাসিত । রচনাবলী’-তে পাই লেখকের সমগ্র পরিচয়—তাঁর সর্টির ব্যাপকতা, বিপ্লতা এবং বৈচিত্র্য । আবার, রচনাবলী’-তে বিভিন্ন সময়ে রচিত বিচ্ছিন্ন রচনাগুলি কালপারপয অনুসারে বিন্যস্ত হওয়ায় লেখকের শিল্পরীতি এবং মানসপ্রবণতার বিবতনধারাও সপষ্টভাবে এবং সমগ্রভাবে দেখতে পাই । এক কথায়, রচনাবলী’-তে একসঙ্গে দেখি, লেখকের সন্টিশক্তির উন্মেষ থেকে পরিণতি, পর্ব দিগন্ত থেকে পশ্চিম দিগন্ত। এই সমগ্রতার, ব্যাপকতার এবং বৈচিত্র্যের সবাদই রচনাবলী-র স্বাদ । বিভূতি রচনাবলী-র প্রকাশ - তাই বাঙ্গালা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলে মনে করি । কয়েক বছর আগে বিভুতি-বিচিত্রা’ নামক সঙ্কলন-গ্রন্থে বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাবলীর বৈচিত্র্যের আভাস আংশিকভাবে পাওয়া গিয়েছিল । সবলপকালের মধ্যে বিভূতিবিচিত্রা’ নিঃশেষিত হওয়ায় বাঙালী পাঠকের হৃদয়ে বিভুতিভূষণের রচনা কি রকম সহায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল । সেই সঙ্গে একথাও জানা গিয়েছিল, ‘পথের পাঁচালী’ এবং অপরাজিত’ ছাড়াও বিভুতিভূষণের অপ্রধান এবং অপেক্ষাকৃত অলপখ্যাত রচনাগুলি এমন কি তাঁর "দিনলিপি’ ও ‘পত্রসাহিত্য’-এর প্রতিও সাধারণ বাঙালী পাঠকের আগ্রহ অপরিসীম। কিছুদিন আগে পথের পাঁচালী”-র ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল এবং মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে এই অনুবাদ প্রথম সংস্করণ নিঃশেষিত হওয়ায় ‘পথের পাঁচালী’ সম্বন্ধে আমাদের প্রচলিত ধারণাকে অসত্য প্রমাণিত করেছে । এখনও পয’ত্ত আমাদের বিশ্বাস, “পথের পাঁচালী’ দাঁড়িয়ে আছে বাঙালীয়ানার জোরে । বইখানি এমন অস্বাভাবিক রকমে বাঙালী-জীবনে নিষিক্ত যে বিদেশীর পক্ষে এর মমে' প্রবেশ করা সাধ্যাতীত । তদুপরি আছে, ‘পথের পাঁচালী”-র প্রকরণগত কটি-দুবলিতা এবং আখ্যানাংশের ধীর-মস্থর গতি, যা গতিহীনতারই মত । তথাপি পথের পাঁচালী”-র রসে বিদেশী পাঠকের মন যে নিমজ্জিত হতে পেরেছে তাতেই বুঝি, সাহিত্যে ফিমের চেয়ে বক্তব্যটাই বেশি মল্যেবান । একথাও বুঝি, ‘পথের পাঁচালী”-র বাইরের সাজটাই দেশী, এর ভিতরের সত্যটি সবদেশের । স্বীকার করি, সাধারণ পাঠকের ‘রায়” সাহিত্য বিচারের চরম মানদণ্ড হিসাবে গ্রাহ্য নয় । কিন্তু সাহিত্য জিনিসটা যখন লেখক এবং পাঠকের সহযোগিতায় সটি তখন পাঠকের 'রায়” একেবারে উপেক্ষণীয়ও নয় । এবং একথা অবশ্য জানা দরকার, রচনার কোন শক্তিতে বিভুতিভূষণ দেশী-বিদেশীর চিত্তকে এমনভাবে জয় করতে পেরেছেন । বিভুতিভুষণ এমন একটি যুগের তুলাক যে-যুগ কালপরিমাপে বর্তমান যুগ থেকে বেশি দরবতী না হয়েও ভাবের দিক থেকে বহু দরের, প্রায় বিস্মত অতীতের । তাঁর সাহিত্যের বাণীও যেন ধ্যানলোক থেকে উৎসারিত অপরপ অলৌকিকতামণ্ডিত কোনো এক অজ্ঞাত د -ن .ة ۴۹۰