পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

80వ বিভূতি-রচনাবলী ঘোর মাতাল হইয়া উঠিয়াছে—পয়সা যথেষ্ট রোজগার করে কিন্ত হাতে রাখিতে পারে না । কাহাকেও মানে না। যন্ধে গিয়াই সে মদ খাইতে শিখিয়াছিল। আগে বাপকে ভয় করিত, লোকলৎজার ভয় রাখিত । এখন বয়স বাড়িবার সঙ্গে সঙ্গে বাপকে আর তেমন মানে না । সতীশ স্ব-গ্রামেই থাকিত। প্রথম প্রথম পত্র-বধরা গ্রামের বাড়িতেই থাকিত। ক্ৰমে তাহারা চলিয়া গেল বিনয়ের বাসায় । সতীশের পত্রীর সেই উন্মাদ রোগ একেবারে কখনো সারে নাই, এই সময় বেশী করিয়া দেখা দিল । সেই জন্যই মাকে বিনয় দেশের বাড়িতে রাখিয়ছিল । তবু এতদিন সর্বদা দেখাশুনা করিত, শশষো ও চিকিৎসার তটি কখনো করে নাই । ক্লমে ক্ৰমে কিস্ত মাকেও সে অবহেলা করিতে লাগিল ৷ এক মাসেও একবার মাকে দেখিতে আসে না, অথচ সে মোটর কিনিয়াছে । এই ন’ মাইল পথ আসিতে কতক্ষণ লাগে ? শুধ পানদোষ নয়, আনুষঙ্গিক অনেক উপসগই জটিয়াছে বিনয়ের ৷ স্ত্রী-পত্রকেও যন্ত্রণা দেয়, সংসারের ন্যায্য খরচের টাকা রাত্রে কোথায় গিয়া ব্যয় করিয়া আসে, কেহ জানে না । প্রায়ই সারারাত্রি বাহিরে কাটায় । মাঝে মাঝে দিনমানেও ডাক্তারখানায় বসে না । পসার কমিতে লাগিল, রোগীরা আসিয়া ফিরিয়া যায় । বন্ধ বয়েসে সতীশ ঘোর অথ’কটে পড়িল । বিনয় বাপ-মাকে মাঝে মাঝে টাকা যে না দেয় এমন নয়, কিন্ত তাহাতে সতীশের চলে না। ছোট ছেলেটি দাদার অবস্হা দেখিয়া নিজের স্ত্রী পত্র লইয়া বশরবাড়ি চলিয়া গেল, সে-ও বাপ-মায়ের কোনো সংবাদ লয় না। সন্ধ্যাবেলা বসিয়া বসিয়া তামাক খাইতে খাইতে সতীশ অন্যমনস্ক ভাবেই এই সব কথাই ভাবিতেছিল, এমন সময়ে উঠানে কাহাকে আসিতে দেখা গেল । —কে ? —আমি পটল, দাদা । সতীশ খুশি হইয়া একগাল হাসিয়া হ:কা হাতে উঠিয়া দড়িাইল । —আয়, পটল ! আয়, আlয়,— পটল বিনয়ের বড় ছেলে দিব্যেন্দর ডাকনাম । গৌরবণ, সশ্রী, চোদ-পনেরো বছরের হাস্যমুখ বালক । নাতিদের জন্য বন্ধের মন-কেমন করে সর্বদা—কিস্ত তাহারা বড় একটা এদিকে পা দেয় না। অপ্রত্যাশিত ভাবে নাতিকে দেখিয়া সতীশ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাইল । —তোর বাবার খবর কিরে, পটল ? দিব্যেন্দ; অপরাধীর মত দটিতে চাহিয়া বলিল—সেই একই রকম দাদা। বরং আরও বেড়েচে । পরে সে দাগ দেখাইল, মাতাল অবস্হায় বাবা কি একটা শক্ত এ্যালজেব্রার অঙ্ক কষিতে দিয়াছিল, সে পারে নাই বলিয়া ছড়ি দিয়া মারিয়াছে। দু'জনে বসিয়া অনেক কথা হইল । সতীশ বলিল—বোস পটল, রাঁধি গে গিয়ে, খাবি কি নৈলে ? সতীশের স্ত্রী এখন সম্পণে পাগল, একটা ঘরে একা দিনরাত শইরা থাকে, আপন মনে বিড় বিড় করিয়া বকে, কাজকৰ্ম্ম করা দরের কথা, না খাওয়াইয়া দিলে খায় না। সতীশ বলিল—এক একবার মনে হয় পটল, আবার প্র্যাকটিস শার করি । কিস্ত এখন আর কেউ আমায় ডাকবে না । ত্রিশ বছর আগে যখন এসেছিলাম এ দেশে, তখন তেমন ডাক্তার ছিল না। এখন নরহরিপরের বাজারেই তিনটে ক্যাবেল পাশ, একটা এম-বি । ওদিকে তো বিনয় রয়েচে, অমল রয়েচে, শ্যামবাব –সবাই এম-বি । আমাকে আর কে ডাকবে ? দিব্যেন্দ বলে—ভেবো না দাদা। আমি পাশ করে যখন চাকরি করবো, তখন তোমার আর এ দশা থাকবে না ।