পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ల్సి হইতে সৰ্য্যোস্ত পয্যন্ত প্রতি দণ্ড পল যে তুচ্ছ অকিঞ্চিৎকর বৈচিত্র্যহীন ঘটনায় ভরিয়া উঠিবে, তাহার কল্পনা তো তাহাকে এ আভাস দেয় নাই । তবে কেন এমন হয় ! তাহাকে কাঁচা, অনভিজ্ঞ পাইয়া নিষ্ঠুর জীবন তাহাকে এতদিন কি প্রতারণাই করিয়া আসিয়াছে ; ছেলেবেলায় মা যেমন নগ্ন দারিদ্যের রপকে তাহার শৈশবচক্ষ হইতে বাঁচাইয়া রাখিতে চাহিত তেমনই 1••• দেখিতে দেখিতে পজা আসিয়া গেল। আজ দু'বৎসর এখানে সে চাকরি করিতেছে, পজার পর্বে প্রতিবারই সে ও নপেন টাইপিস্ট কোথাও না কোথাও ষাইবার পরামর্শ অাঁটিয়াছে, নক্সা অকিয়াছে, ভাড়া কষিয়াছে, কখনও পরেলিয়া কখনও পরী—যাওয়া অবশ্য কোথাও হয় না। তবুও যাইবার কল্পনা করিয়াও মনটা খুশী হয় । মনকে বোঝায় এবার না হয় আগামী পুজায় নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই– কেহ বাধা দিতে পারিবে না। শনিবার অফিস বন্ধ হইয়া গেল। অপর আজকাল এমন হইয়াছে বাড়ি ফিরিয়া অপশার মুখ দেখিতে পারিলে যেন বাঁচে, কতক্ষণে সাতটা বাজিবে, ঘন ঘন ঘড়ির দিকে সতৃষ্ণ চোখে চায়। পাঁচটা বাজিয়া গেলে অকুল সময়-সমুদ্রে যেন থৈ পাওয়া যায়—আর মোটে ঘণ্টা-দই। ছ’টা—আর এক । হোক পায়রার খোপের মত বাসা, অপণা যেন সব দুঃখ ভুলাইয়া দেয়। তাহার কাছে গেলে আর কিছ মনে থাকে না । অপণা চা ও খাবার আনিল । এ সময়টা আধঘণ্টা সে সবাম্বীর কাছে থাকিতে পায়, গল্প করিতে পায় ; আর সময় হয় না, এখনি আবার অপরকে ছেলে পড়াইতে বাহির হইতে হইরে । অপর এ-সময় তাহাকে সব দিন পরিৎকার পরিচ্ছন্ন দেখিয়াছে, ফরসা লালপাড় শাড়িটি পরা, চুলটি বাঁধা, পায়ে আলতা, কপালে সিদরের টিপ—মুক্তিমতী গহলক্ষীর মত হাসিমখে তাহার জন্য চা আনে,গলপ করে, রাত্রে কি রান্না হইবে রোজ জিজ্ঞাসা করে, সারাদিনের বাসার ঘটনা বলে । বলে, ফিরে এসো, দুজনে আজ মহারাণী বিন্দন আর দিলীপ সিংহের কথাটা পড়ে শেষ ক'রে ফেলব । বার-দই অপর তাহাকে সিনেমায় লইয়া গিয়াছে, ছবি কি করিয়া নড়ে অপণ" বুঝিতে পারে না, অবাক হইয়া দেখে,গল্পটাও ভাল বুঝিতে পারে না। বাড়ি আসিয়া অপ বঝোইয়া বলে । চায়ের বাটিতে চুমাক দিয়া অপর বলিল—এবার তো তোমায় নিয়ে যেতে লিখেছেন খবশরমশায়, কিন্ত অফিসের ছটির যা গতিক—রাম এসে কেন নিয়ে যাক না ? তারপর আমি কাত্তি’ক মাসের দিকে না হয় দু-চারদিনের জন্যে যাব ? তা ছাড়া যদি যেতেই হয় তবে এ সময় যত সকালে যেতে পারা যায়—এসময়টা বাপ-মায়ের কাছে থাকা ভালভেবে দেখলাম। অপণা লৎজারত্তমখে বলিল-রাম ছেলেমানষে, ও কি নিয়ে যেতে পারবে ? তা ছাড়া মা তোমায় কতদিন দেখেন নি, দেখুতে চেয়েছেন। —তা বেশ চলো, আমিই যাই । রামের হাতে ছেড়ে দিতে ভরসা হয় না, এ অবস্হায় একটু সাবধানে ওঠা-নমা করতে হবে কিনা। দাও তো ছাতাটা, ছেলে পরিয়ে আসি। যাওয়া হয় তো চলো কালই যাই ॥—হ’্যা একটা সিগারেট দাও না ? —আবার সিগারেট । আটটা সিগারেট সূকাল থেকে খেয়েছো—আর পাবে না—আবার পড়িয়ে এলে একটা পাবে। --দাও দাও লক্ষীটি-রাতে আর চাইব না—দাও একটি। অপণা কুঞ্চিত করিয়া হাসিমখে বলিল—আবার রাত্রে তুমি কি ছাড়বে আর একটা না নিয়ে ? তেমন ছেলে তুমি কিনা 1••• বেশী সিগারেট খায় বলিয়া অপর সিগারেটের টিন অপণার জিন্মায় রাখিবার প্রস্তাব ।