পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উমি্মখের ৪২১ সেখানে বড় বটি এল । পবেদিকের আকাশ বস্টিধোয়া, নীল, পরিৎকার সেই ইন্দ্র নীল রংএর আকাশের পটভূমিতে দরে গ্রামের তাল খেজুরের সারি, বশিবনের শীষ", কি চমৎকার দেখাচ্চে। আর এদিকে ঘন কালো বর্ষার মেঘ জমেচে । গোবরাপরের মোড় বেকে কু"দীপরের বাঁওড়ের ওপারের রানীনগর বলে ছোট একটা চাষা-গাঁয়ের দশ্য ঠিক যেন ছবির মত। এখানে একজন বন্ধাকে পথ জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন—তোমার নাম বিভুতি ? সাতবেড়েতে একবার গিয়েছিলে না ? আমি বললাম—হ’্যা । আপনি কি করে চিনলেন ? তিনি নিজের পরিচয় দিলেন না। গোবরাপরের একটা দোকানে মণীন্দ্র চাটুয্যের ভট্টাচায্যির সঙ্গে দেখা। সেখানে বসে একটু গল্প করেই আবার পথে বেরিয়ে পড়ি । কি ঘন বন পথের দ-ধারে । বড় বড় লতা কালো কালো গাছের গড়ির গায়ে উঠেচে—এই কয়দিনের ব্যষ্টিতেই গাছের তলায় বনের ছোট ছোট গাছপালার জঙ্গল বেধে গিয়েচে । 'বেী-কথা-কও ডাকচে চারিধারে । কেউটে পাড়ার গায়ে পথের ধারের একটা সোঁদালি ফুল গাছে এই আষাঢ় মাসের প্রায় মাঝামাঝি সময়েও অজস্র ফুল দেখেছি। পাটশিমলের মধ্যে কি ভীষণ tropical forest-এর রাজত্ব ! ছোট ছোট জাম ফলে আছে বনো জামগাছে—বড় বড় লতা-বনের মধ্যেটা মিশ-কালো। পাটশিমলের মোহিনী কাকার সঙ্গে বাঁওড়ের ওপারে একটা চাষাগাঁয়ে দেখা হোল । তিনি আমার সঙ্গে গেলেন প্রায় বাগান গাঁ পর্যন্ত । পিসিমার বাড়ি গেলাম তখন সন্ধ্যা হয়েচে । পিসিমার সঙ্গে অনেকদিন পরে দেখা । দু-জনে অনেক রাত পৰ্য্যস্ত গল্পগজব করা গেল। সকালে কোদলার জলে নাইতে দিয়ে দেখি যে টলটলে জল আর নেই নদীর—কচুরি পানায় নদী মজে গিয়েচে, জল রাঙা, ঘোলা—সেইটুকু জলে সব লোকে নাইচে, গোর বাছরের গা ধোয়াচ্চে । পরদিন সকালে খাওয়া দাওয়া করে বটি মাথায় আবার বাড়ি রওনা হই । সারাপথটা বষ আর বাদলা—কিন্ত খুব ঠাণডা দিনটা । আমার সেই ঘন বন—পাটশিমলে থেকে গোবরাপরের পথে দু-জন চাষা লোকের সঙ্গে গল্প করতে করতে এলাম। আবার সেই ঘন tropical forest-এর মত বন, বড় বড় কাছির মত লতা—পথ নিষ্ঠজন, টুপটাপ করে জল ঝরে পড়ছে গাছের মাথা থেকে, আরণ্যশোভা কি অদ্ভুত । রানীনগরের এপারে একটা সাঁকোর ওপর কতক্ষণ বসে বসে নীল আকাশের পটভূমিতে অাঁকা গ্রামসীমার বাঁশবনের দিকে চেয়ে রইলাম। মোল্লাহাটির ঘাট যখন পার হই, তখনও খুব বেলা আছে । আজ মোল্লাহাটির হাটবার, হাটে গিয়ে একটা আনারসের দর করলাম। সুন্দরপরের গোয়ালাদের একটা ছেলের সঙ্গে দেখা হোল। মনে পড়ছিল আজ ওবেলা যখন আসছিলাম পাটশিমলের ঘন ক্ষদে জামবনের মধ্যের সেই পথটা দিয়ে—মনে হচ্ছিল আমি একজন বন্ধনহীন মন্ত পথিক, দেশে দেশে এই অপােব রপলোকের মধ্যে দিয়ে বেড়িয়ে বেড়ানোই আমার জীবনের পেশা। কি আনন্দ যে হয়েছিল, কি অপব পালক, মন্তির সে কি অম,তময়ী বাণী ! কেন মানুষে ঘরে থাকে তাই ভাবি । আর কেনই বা পয়সা খরচ করে মোটরে কি রেলের গাড়িতে বেড়ায় ? পায়ে হেটে পথ চলার মত আনন্দ কিসে আছে ? সে একমাত্র আছে ঘোড়ায় চড়ে বেড়ালে । ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে ঘোড়ায় চড়ার আনন্দ আমি জানি । তার সঙ্গে কিছরই তুলনা হয় না । - মোল্লাহাটির হাট ছাড়িয়েচি, পথে আমাদের গায়ের গণেশ মচি নকফুল গ্রামে ছেলের বিয়ের সম্বন্ধ করতে যাচ্চে । ওকে দেখে বড় আনন্দ হয়—শাস্ত, সরল, সাধপ্রেকৃতির লোক বলে বাল্যকাল থেকে ওকে আপনার-জনের মত দেখি । বেলা যাব-যাব হয়েচে দেখে একটু জোর-পায়ে পথ হাঁটতে শুরু করলাম। খুব রাঙা রোদ উঠেচে চারি ধারে । খাবরাপোতা ছাড়লাম, সামনে আইনন্দির বাড়ির পেছনের