পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উমি্মখের 8રહ বিষ্ণুপরে ঘরে কাশিডি এলাম। পথে বাস হকিছে, টিনপ্লেট, বামা জিংক, যেমন কলকাতায় হাঁকে ‘ভবানীপুর’, ‘আলিপুর’ । সকালে টাটানগর থেকে প্যাসেঞ্জারে বাসায় নামলম । শ্যামপুর গ্রামখানা পাহাড়ী নদীর ঠিক ওপারে, কাঁকুরে জমি, কাছেই এদেশের ধরনের বনজঙ্গল । পথে সিংডুমের প্রকৃত রূপ দেখলাম, অর্থাৎ উচ্চাবচ ভুমি, পাথরের চাই, শাল ও কে’দ গাছ, রাঙা মাঠ । তিনটের ট্রেনে মহলিয়া থেকে বাদলবাব, বিশ্বনাথ বসন প্রভৃতি অনেকে এল । অশ্বখ তলায় বসে চা খাওয়া গেল। বেলা পড়ে এসেচে। দটো বাজে । সে সময় আমি একা গেলাম পাহাড়ী নদীর ধারে শালচারার জঙ্গলে—একা বসতে । সামনে পাহাড় শ্রেণী থৈ থৈ করচে, দুরে কালাঝোরের নীল সীমারেখা নীল আকাশের কোলে । ঐ দিকে আজ বাংলাদেশে আমাদের গ্রামের বাঁওড়ের ধারে আড়ং বসেচে, কত দোকানদারের কত বেচাকেনা, কত নতুন কাপড়-পরা ছেলেমেয়েদের ভিড়। পাথরের ওপর অপরাহের ঘনায়মান ছায়ায় এক জায়গায় বসে চারিধারের মুক্ত প্রসারতা দেখে কেবলই বাংলা-জোড়া বিজয়া দশমীর উৎসব ও কত হাজার হাজার ছেলেমেয়েদের হাসিমুখ মনে পড়ল। দু-দিনের বিজয়া দশমীর কথা আনার মনে আছে ছেলেবেলাকার।--যুগল কাকা সেদিন এসে রান্নাঘর ও বড় ঘরের মাঝখানে উঠোনেতে দাঁড়িয়ে বাবার সঙ্গে বিজয়ার আলিঙ্গন ও প্রণাম করলেন ।--আর যেদিন গঙ্গা বোস্টমকে আমরা আশদের চ"ডীমন্ডপে ব্রাহ্মণ ভেবে ভুলে পায়ের ধলো নিয়ে প্রণাম করেছিলাম । আজকার দিনে যেখানে যত লোককে ভালবাসি সকলের কথাই মনে পড়ল, তাদের মধ্যে কাছে কেউই নেই, অনেকে পৃথিবীতেই নেই, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্যে আমার এ প্রীতিনিন্দেশ হয়তো বা ব্যথ যাবে না । গালডির হরিদাস ডাক্তারের সঙ্গে অনেককাল পরে আজ দেখা । সে গিয়েছিল ধলভূমগড়ের রাজবাড়িতে রোগী দেখতে, আমরা এখানে আছি শুনে বাদলবাবদের সঙ্গে এখানে ট্রেন থেকে নেমেচে ; তার সঙ্গে জ্যোৎস্নাফুল্ল সন্ধ্যায় পাহাড়ী নদীর ধারে তপ্ত শীলাখন্ডের ওপর গিয়ে বসলাম । অমনি যেন অন্য এক জগতে এসে পড়েচি মনে হ’ল । দুরে নদীর কুলকুলা জলস্রোত, ওপারের জ্যোৎস্নাশস্ত্ৰে পাহাড় শ্রেণী, খুব একটি অীকাবাঁকা কি গাছ, আর এক প্রকারের বন্যফুলের মিষ্টি স্বাস—মাথার ওপরের নক্ষত্রবিরল আকাশ—সবগুলো মিলে আমায় এমন এক রাজ্যে নিয়ে গেল যে চুপ করে সেদিকে চেয়ে বসেই থাকি, হরিদাস ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা আর আমার হয় না, কথা বলবার মত মনও নেই, কেমন যেন হয়ে গেলাম । দজেনেই চপচাপ, কতক্ষণ বসে থেকে রাত দশটার কাছাকাছি বাংলোতে ফিরি। বৈকালে নীলঝরনা বেড়াতে গেলাম কিস্ত বেলা গিয়েছিল বলে বেশীক্ষণ নীলঝরনার উপত্যকায় বসে থাকা সম্ভব হ’ল না। পাহাড়ের ওপারে উৎরাই-এর পথে বনতুলসীর জঙ্গলে ঘন ছায়া নেমেচে, তার মধ্যে বড় বড় কে’দ গাছ, সিদ্ধেশ্বর ডুংরির মাথায় অস্তমান সংয্যের আভা একটু। ঝরনা পেরিয়ে বরম-ডেরার পথে খানিকটা গিয়ে একটা উঁচু জায়গায় পাথরের স্তপে খাজাঁচ, জনকয়েক লোক কুলামাতোর দিক থেকে আসচে, ওদের সঙ্গ নিলাম । ওরা বললে, তুই এখানে কি করচিস রে ? বললাম পাথর কিনতে এসেচি । ৪নং shift-এর কাছে এসোঁচ তখনও জ্যোৎস্না ওঠে নি, মদীর দোকানটা আজ বন্ধ, রাধাচড়া গাছে যে ফুলের লতাটা সেদিন দেখেছিলাম, তাতে আজ আর ফুল নেই। এঞ্জিনিয়ারের বাংলোতে লোক খাটচে কারণ ডেপুটি কনজারভেটর অফ ফরেস্টস এখানে এক