পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

80 বিভূতি-রচনাবলী করিয়াছিল। অপণার কড়াকড়ি বন্দোবস্ত সব সময় থাটে না, অপর বরাদ্দ অনুযায়ী সিগারেট নিঃশেষ করিবার পর আরও চায়, পীড়াপীড়ি করে, অপণাকে শেষকালে দিতেই হয় । তবে ঘরে সিগারেট না মিলিলে বাহিরে গিয়া সে পারতপক্ষে কেনে না—অপণাকে প্রবঞ্চনা করিতে মনে বড় বাধে—কিস্ত সবদিন নয়, ছয়টি-ছাটার দিন বাড়িতে প্রাপ্য আদায় করিয়াও আরও দ-এক বাক্স কেনে, যদিও সে কথা অপণাকে জানায় না। ছেলে পড়াইয়া আসিয়া অপ দেখিল উপরের রাগণ ভদ্রলোকটির ছোট মেয়ে পিটু তাহাদের ঘরের এককোণে ভীত, পাংশ মুখে বসিয়া আছে। বাড়িসন্ধ হৈ-চৈ ! অপণা বলিল, ওগো এই পি-টু গাঙ্গলীদের ছোট খাকীকে নিয়ে গোলদীঘিতে বেড়াতে বেরিয়েছিল । ও-বুঝি চীনেবাদাম খেয়ে কলে জল খেতে গিয়েছে, আর ফিরে এসে দ্যাখে খাকী নেই, তাকে আর খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওর মা তো একেই জর্জ হয়ে থাকে, আহা সে বেচারী তো নবমীর পঠিার মত কাঁপছে আর মাথা কুটছে । আমি পি-টুকে এখানে লুকিয়ে রেখে দিয়েছি নইলে ওর মা ওকে আজ গাড়ো করে দেবে। আর গাঙ্গলী-গিন্নী যে কি কাণ্ড করছে, জানোই তো তাকে, তুমিও একটু দেখো না গো ! গাঙ্গলী-গিন্নী মরাকান্নার আওয়াজ করিতেছেন, কানে গেল ।—৫গো আমি দুধ দিয়ে কি কালসাপ পাধেছিলাম গো ! আমার এ কি সম্ভবনাশ হ’ল গো মা, ওগো তাই আপদেরা বিদেয় হয় না আমার ঘাড় থেকে—এতদিনে মনোবাঞ্ছা—ইত্যাদি । অপর তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া গেল, বলিল—পিন্টু খেয়েছে কিছ ? —খাবে কি ? ও কি ওতে আছে ? গাঙ্গলী-গিন্নী দাঁত পিষছে, আহা, ওর কোন দোষ নেই, ও কিছুতেই নিয়ে যাবে না, সেও ছাড়বে না, তাকে আগলে রাখা কি ওর কাজ ! সকলে মিলিয়া খুজিতে খুজিতে খকীকে কলটোলা থানায় পাওয়া গেল। সে পথ হারাইয়া ঘুরিতেছিল, বাড়ির নম্বর, রাস্তার নাম বলিতে পারে না, একজন কনস্টেবল এ অবস্হায় তাহাকে পাইয়া থানায় লইয়া গিয়াছিল । বাড়ি আসিলে অপণা বলিল—পাওয়া গিয়েছে ভালই হ'ল, আহা বোঁটাকে আর মেয়েটাকে কি ক’রেই গাঙ্গলী-গিন্নী দাঁতে পিষছে গো ! মানুষ মানুষকে এমনও বলতে পারে । কাল নাকি এখান থেকে বিদেয় হতে হবে—হাকুম হয়ে গিয়েছে। অপ বলিল—কিছদরকার নেই। কাল আমরা তো চলে যাচ্ছি, আমার তো আসতে এখনও চার-পাঁচ দিন দেরি। ততদিন ওরা রাগী নিয়ে আমাদের ঘরে এসে থাকুন, আমি এলেও অসুবিধে হবে না, আমি না হয় এই পাশেই বরদাবাবদের মেসে গিয়ে রাত্রে শোব। তুমি গিয়ে বলো বৌ-ঠাকরণকে। আমি বুঝি অপণা ! আমার মা আমার বাবাকে নিয়ে কাশীতে আমার ছেলেবেলায় ওই রকম বিপদে পড়েছিল—তোমাকে সে সব কথা কখনও বলি নি, অপণা । বাবা মারা গেলেন, হাতে একটা সিকি-পয়সা নেই আমাদের, সেখানকার দ4কজন লোক কিছু কিছু সাহায্য করলে, হবিষ্যির খরচ জোটে না-মা-তে আমাতে রাত্রে শধে অড়রের ডাল ভিজে খেয়ে কাটিয়েছি। আমি তখন ছেলেমানষে, বছর দশেক মোটে বয়েস—গরীব হওয়ার কষ্ট ষে কি, তা আমার বুঝতে বাকী নেই—কালসকালেই ওরা এখানে আসন - 義 অপণা যাইবার সময় পি-টুর-মা খুব কাঁদিল। এ বাড়িতে বিপদে-আপদে অপণা যথেষ্ট করিয়াছে। রোগীর সেবা করিয়া ছেলেমেয়েকে দেখিতে সময় পাইত না, তাহাদের চুল বাঁধা, টিপ পরানো, খাবার খাওরানো, সব নিজের ঘরে ডাকিয়া আনিয়া অপণা করিত । পিন্টু তো মাসৗমা বলিতে অজ্ঞান, সকলের কান্না থামে তো পিন্টুকে আর থামানো যায় না। বউয়ের বয়স অপণার চেয়ে অনেক বেশী। সে কাঁদিতে কাঁদিতে বলিল, চিঠি দিও ভাই,