পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8లS * বিভূতি-রচনাবলী অপরাহ্লে আমাদের পোড়ো ভিটেয় পেছনকার বাশবনে বেড়াতে গিয়ে এক জায়গায় খানিকটা চুপ করে বসে রইলাম । রাঙা রোদ পড়েচে ওদিকের একটা বশিঝাড়ের গায়ে। সেই রাঙা রোদ মাখানো বাঁশঝাড়ের দিকে চেয়ে সমস্ত জীবনের গভীর রহস্যের অনুভুতি যেন মনে এসে জমল । কতকাল আগে এমন কাত্তিক মাসের দিনে মামার বাড়ি থেকে বাবার সঙ্গে এসে প্রথম এ গাঁয়ে উঠেছিলম আমার বাল্যকালে । চুপ করে ভাবলে সে দিনের হেমন্তদিনের কটুতিক্ত বনলতা-ফুলের গন্ধভরা দিনগুলির সমতি আজও আমার মনে আসে—কেমন একটা মধরে, উদাস ভাব নিয়ে আসে ওরা । তারপর কত পথ চলেচি, কখনও কণ্টকাকীণ* আরণ্যপথ বেয়ে, কখনও রৌদ্রদগধ মরবালার বকে চিরে, কখনও কোকিল-কুজিতপপেসরভিত কুঞ্জবনের মধ্যে দিয়ে, চলেচি“চলেচি“কত সঙ্গী-সাথীর হাসি-আশ্রভেরা নিবেদন আমার মনের মধ্যে সঞ্চিত হোল, কাউকে পেলাম চিরজীবনের মত, কাউকে হারালমে দু-দিনেই, কিন্ত অভিজ্ঞতার ঐশ্বযf্যই দেখলাম জীবনের সব চেয়ে বড় ঐশ্বয' । সুখ দুঃখ দু-দিনের —তাদের স্মৃতি চিরদিনের, তারাই থাকে । তারাই গভীরতার ও সাথ’কতার পাথেয় আনে জীবনে। আজ এই শুকনো বাঁশের খোলা বিছানো, পাখী-ডাকা, রাঙা রোদমাখানো বাঁশবনের ছায়ায় বসে সেই কথাই মনে হোল । সেই বাঁশের শুকনো খোলা ! মামার বাড়ি থেকে প্রথম যেদিন এ গ্রামে আসি তখন দাপরে আমাদের বাড়ির দরজার সামনে ধলোর ওপর যে বাঁশের খোলা নিয়ে রাজলক্ষী ও পটেশ্বরীকে খেলা করতে দেখেছিলাম ত্রিশ বছর আগে । আজ কোথায় তারা ? ইছামতীর ওপর দিয়ে নেীকো বেয়ে চলেচি। বেলা গিয়েচে । দু-ধারের অপৰব বনঝোপে রাঙা রোদ পড়েচে । কত কি ফুলের সুগন্ধ । কিন্ত চালতেপোতার ডান ধারে যে সাই বুবিলার নিভৃত পাখী-ডাকা বন ছিল, মনি গায়ের নতুন কাপালীরা এসে সব নষ্ট করে কেটে পড়িয়ে ফেলে পটল করেচে। আমার যে কি কষ্ট হোল ! পত্ৰশোকের মত কট। কত তিৎপল্লার ফুল ফুটে থাকত, বন কলমীর বেগনী ফুল ফুটে থাকত—আর বছরও দেখোঁচ । কত কাঁচ কচি জলজ ঘাসের বন, তার মাথায় নীল ফুল—এবার ডান ধার এরা সাফ করে ফেলেচে । আমার নেীকোর মাঝি সীতানাথ বলচে—'দা-ঠাকুর, বড় পটল হবে, চারখানা পটলে একখানা গেরস্তের তরকারি হবে । আমার জ্ঞানে কখনও এখানে কেউ আবাদ করে নি। কুলকুটির ফুল আর বন শিমের ফুল এবার অজস্র । এই দস্যি কাপালীরা, এই Destroyers of Beauty, কোথা থেকে এসে যে জটিল, ইছামতীর পাড়ের রুপ এরা কি নিষ্ঠুর ভাবে নষ্ট করে ফেলচে । রোদ একেবারে সিদরে হয়ে বশিঝাড়ের মাথায় উঠেচে । অপরাহের বাতাস নানা অজ্ঞাত বনফুলের মিষ্ট গন্ধে ভারাক্রান্ত । নদীপথে বিকেলে ভ্রমণের মত আনন্দ আর কিসে আছে ? কি গভীর শান্তি, কি বন-শোভা, কি অস্ত আকাশের মায়া । ছটাঁর দিন। কলকাতা ভাল লাগচে না । এই ক-দিনেই কলকাতা যেন কিবাদ হয়ে গিয়েচে । আজ বিকেলে বেড়াতে বেড়াতে থাকারের দোকানে গিয়ে একখানা বই পড়ছিলাম কাeজন পাকের সামনের জানলায় দাঁড়িয়ে । সেখানে থেকে মাঠে একটা জায়গায় অনেকক্ষণ বসে রইলাম। একটা বেঞ্চে বসে আছি, দেখি ডাঃ পি. সি. রায় সামনে দিয়ে যাচ্চেন। দু-জনে গল্প করতে করতে বেড়ালম অনেকদরে পয্যন্ত । উনি বেশীর ভাগ বললেন ‘প্রবাসী'র কথা। যোগেশ বাগল'প্রবাসী ছেড়ে গিয়েচে সেজন্যে দুঃখ করলেন। গিরিশবাবুও দেখি বিছানা পেতে লড রবার্টসের প্রতিমাত্তি'র পাদপীঠে বসে আছেন। আমরাও গিয়ে জটলাম। আজ রাত্রে মাদ্রাজ মেলে ডাঃ রায় বাঙ্গালোর যাবেন, সে কথা হচ্ছিল । তাঁর গাড়িতে ফিরে এলাম । Nineteenth Century Review tejtor ș’ĞI ETçalf STaTI