পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8& বিভুতি-রচনাবলী এখন বসে লিখচি, অনেক রাত হয়েচে । বাঁশজঙ্গলের মাথায় বিশাল বশ্চিক রাশি অধে'ক আকাশ জুড়ে জলজল করচে। অনেক দরে একটা কি পাখী একটা নিদিষ্ট সময়ের ব্যবধানে একঘেয়ে কুবর করে ডাকচে । নায়েব-বাড়ির দিকে একপাল কুকুর তুকারণে ঘেউ ঘেউ করচে । আজ সকালে গোয়াড়ী কৃষ্ণনগর গেলাম সকালের গাড়িতে। অনেক জায়গায় গেলাম, কারণ বাবার সঙ্গে সেই ছেলেবেলায় একবার গিয়েছিলাম, আজ সাতাশ বছর আগে । আবার সেই রাজবাড়ির ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হোল জীবনের যে সব সমরণীয় ঘটনা ঘটেচে এর পরে। সেই ব্রাহ্মসমাজ, A. V. School, সেই লীলাদিদিদের বাড়ি । লীলাদির সঙ্গে দেখা হোল না । বিকেলে আজ সইমাদের বাড়ি বেড়াতে গেলাম । বীণাকে দেখলাম অনেকদিন পরে, সে এত মোটা হয়েচে যে তাকে আর চিনতে পারা যায় না । তার দটি সতীনঝিও এসেচে, ছেলেমানষে—কিন্তু একজন আবার ওদের মধ্যে বিধবা । আমাদের দেশে বিধবা হবার যে কি কট তা অন্নপ্রণার মুখে, ধীরেনের খুড়তুত বোনের গলপ শুনে বুঝতে পারি। তারপর গেলাম কুঠীর মাঠে বেড়াতে । যেতে যেতে দেখি নদীর ধারে মাধবপুরের চরের গাছপালার . গায়ে মেঘে চাপা হলদে রোদ পড়েচে–তার নিছক সৌন্দয' আমায় মুগ্ধ, অভিভুত করলে। বেলা সাড়ে ছ-টা হবে, সন্ধ্যার দেরি নেই, সেই শান্ত গ্রীমের অপরাহ্লে উষ্ণমণ্ডলের বনপ্রকৃতি, সয", আকাশ, নদী, মাঠ, তার সমস্ত ইন্দ্রজাল, সমস্ত রপ-বিভব আমার চোখের সামনে মেলে ধরেচে। শুধ; শিমল গাছের ডালগুলোর অাঁকা-বীকা সৌন্দৰ্য্যময় রপে, মেঘপহবতের পাশ দিয়ে বলাকা সারির ভেসে যাওয়া, শুধুই বনফুলের দেবলোকের দলনি, আর বন্যপাখীর গান। কতবার দেখোঁচ, আজ বত্রিশ বছর ধরে দেখে আসাঁচ । কিন্তু এরা কখনো পরোনো হোল না আমার কাছে । কখনো যেন হয়ও না, এই প্রাথনা করি, এদের আসন যেন মৃত্যুঞ্জয় হয় আমার জীবনে । অতি ভয়ানক দ্বযেf্যাগ, ভয়ানক বষ । আজ ক-দিন চলেচে এমন । থানা ডোবা সব ভত্তি", জলে থৈ থৈ করচে । এমন ভয়ানক বষ জ্যৈষ্ঠমাসে দেখেছিলাম কেবল সেইবার, ষেবার কলকাতা থেকে আবার ফিরে এলমে বেলাদের তত্ত্ব নিয়ে, ষেবার খকুর সঙ্গে প্রথম আলাপ হয়, ১৯৩২ সালে । তারপর কত পরিবত্তনই না হয়ে গেল জীবনে ! ১৯৩২ সালের সেই সময়ের এবং ১৯৩৬ সালের এই আমিতে বহয় তফাত হয়ে গিয়েচে । বিলবিলের ডোবাতে ব্যাঙ ডাকচে । বধো, কেতো এরা এই ভয়ানক দ্বযোগ অগ্রাহ্য করে ভিজতে ভিজতে আম কুড়িয়ে বেড়াচ্চে । সাবি ওদের বাড়ি থেকে বিড়ি নিয়ে এল আমার জন্যে, কারণ ওবেলা ওর ভাইকে বলেছিলাম এনে দিতে । মনোর মা আবার দটো কলমের আম এনেছিল । অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গলপ করলে । আমি পাঁচীর বাড়ি গেলাম মাংসের ভাগ নিতে, কারণ ওখানে পঠিা কাটা হয়েচে সকালে। পাঁচী চা করে দিলে, শম্ভুর অসুখের জন্যে অনেক দুঃখ করলে । সবাই ওকে ঘৃণা করে আমাদের গাঁয়ে। কিন্তু আমি দেখি ও ঘণার পাত্রী নয়, অন্যকপার পাত্রী । বন্ধ স্বামীর সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছিল, তখন ওর বয়েস ছিল মোটে তের বছর—কি বা বঝেত বিয়ের ? সে স্বামী মারা গেল, তখন ওর বয়েস বছর পনেরো। ওদের ওই গরীব সংসার, ভাইগলো অপদাথ’, কেউ এক পয়সা রোজগার করে না । ভাইয়ের ছেলেমেয়েগলো একবেলা খায়, একবেলা খায় না। ওদের এই দুঃখ ঘন্চোতে ও এই কাজ