পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ද්‍රිෆ পরাতন মতি—কোথায় যেন এই ধরণের সব পরানো দিনের কত জ্যোৎসনা ঝরা রাত। এ যেন সব আরব্য-উপন্যাসের কাহিনী, সে ছিল কোন কুড়েঘরে, পেট পরিয়া সব দিন খাইতেও পাইত না—সে আজ এত বড় প্রাচীন জমিদার ঘরের জামাই, অথচ আশ্চয' এই ফুে এইটাই মনে হইতেছে সত্য। পরোনো দিনের জীবনটা অবাস্তব, অস্পষ্ট, ধোঁয়া ধোঁয়া মনে হয় । হেমন্তের রাত্রি । ঠাণডা বেশ । কেমন একটা গন্ধ বাতাসে, অপর মনে হয় কুয়াসার গন্ধ। অনেক রাত্রে অপণা আসে। অপর বলে—এত রাত যে ! আমি কতক্ষণ জেগে বসে থাকি ! অপণা হাসে । বলে—নিচে কাকাবাবর শোবার ঘর। আমি সিড়ি দিয়ে এলে পায়ের শব্দ ও’র কানে যায়—এই জন্য উনি ঘরে খিল না দিলে আসতে পারি নে। ভারী লজ্জা করে । অপর জানালার খড়খড়িটা সশব্দে বন্ধ করিয়া দিল । অপণা লাজক মুখে বলিল—এই শর হ’ল বুঝি দুটুমি ? তুমি কী –কাকাবাব এখনো ঘমোন নি যে ! অপর আবার খটাস করিয়া খড়খড়ি খলিয়া অপেক্ষাকৃত উচ্চসারে বলিল—অপর্ণা, এক গ্লাস জল আনতে ভুলে গেলে যে, “ও অপণা—অপণা ?” অপণা লৎজায় বালিশের মধ্যে মুখ গজড়াইয়া পড়িয়া রহিল। ভোর রায়েও দুজনে গল্প করিতেছিল। সকালের আলো ফুটিল। অপণা বলিল--তোমার কাটায় স্টীমার ?--সারারাত তো নিজেও ঘমেলে না, আমাকেও ঘনমতে দিলে না—এখন খানিকটা ঘুমিয়ে থাকো—আমি অনাদিকে পাঠিয়ে তুলে দেব’খন বেলা হলে। গিয়েই চিঠি দিও কিন্ত । জানলার পদাগলো ধোপার বাড়ি দিও—আমি না গেলে আর সাবান কে দেবে ? সস্নেহে স্বামীর গায়ে হাত বলাইয়া বলিল—কি রকম রোগা হয়ে গিয়েছ—এখন তোমাকে কাছছাড়া করতে ইচ্ছে করে না—কলকাতায় না মেলে দধি, না মেলে কিছল । এখানে এসময় কিছুদিন থাকলে শরীরটা সারত। রোজ অফিস থেকে এসে মোহনভোগ খেও—পিটুর মাকে বলে এসেছি—সে-ই ক'রে দেবে। এখন তো খরচ কমল ? বেশী ছেলে পড়ানোতে কাজ নেই । যাই তাহলে ? অপর বলিল—ব’স,ব’স—এখনও কোথায় তেমন ফস হয়েছে ?—কাকার উঠতে এখনও দেরি । অপণা বলিল—হ’্যা, আর একটা কথা—দ্যাখো, মনসাপোতার ঘরটা এবার খচি দিয়ে রেখো। নইলে বর্ষার দিকে বউ খরচ পড়ে যাবে, কলকাতার বাসায় তো চিরদিন চলবে না —ওই হ’ল আপন ঘরদোর। এবার মনসাপোতায় ফিরব, বাস না করলে খড়ের ঘর টেকে না। যাই এবার, কাকা এবার উঠবেন। যাই ? . অপণা চলিয়া গেলে অপর মন খুত খ:ত করিতে লাগিল । এখনও বাড়ির কেহই উঠে নাই—কেন সে অপণাকে ছাড়িয়া দিল ? কেন বলিল—যাও ! তাহার সম্মতি না পাইলে অপণা কখনই যাইত না । o কিন্ত অপণা আর একবার আসিয়াছিল ঘণ্টাখানেক পরে, চা দেওয়া হইবে কিনা জিজ্ঞাসা করিতে—অপু তখন ঘনমাইতেছে। খোলা জানালা দিয়া মুখে রৌদ্র লাগিতেছে । অপণা সস্তপণে জানালাটা বন্ধ করিয়া দিল । ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামীকে এমন দেখায় ! এমন একটা মায়া হয় ওর ওপরে ! সিড়ি দিয়া নামিবার সময় ভাবিল, মা সত্যিই বলে বটে, পটের মুখ—পটে আঁকা ঠাকুর দেবতার মত মুখ—