পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উমি্মখের 86 a রাঙা রাঙা আম তলাবিছিয়ে পড়ে রয়েচে, কেউ কুড়োয় না দেখে আশ্চৰ্য্য হয়ে গেলাম। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম—তোমাদের এখানে আম কুড়োয় না কেন ? সে বললে—বাব, এখানে এক পয়সা আমের পণ বিক্রি হয়—এত আম এখানে । কে কত খাবে । পাটশিমলে ঢুকতেই একপাশে একটা বড় বন, একটা উ"চু শিমল গাছ বনের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে—তার ডালে পাতা মড়ে পিপড়ে বাসা বেধেছে। দশ্যটা দেখে আমার মনে হোল এই সব সত্যিকার বাংলার বনের দশ্য, ট্রপিক্যাল বনানীর দশ্য না দেখলে বাংলাকে চিনব কি করে ? শহরের লোকের শহরেই জন্ম, শহরেই বিবাহ, শহরেই মৃত্যু—তারা সত্যিকার বাংলার রুপ কখনও দেখে ? যে বাংলার মাটির বৈষ্ণব কবিতা, গ্রাম্য সঙ্গীত, ভাটিয়ালি গান, কীত্তন, শ্যামাসঙ্গীত, পাঁচালি, কবি—এরা সে বাংলাকে কখনও দেখলে না । যে-বাংলার শিপে কাঁথা, শীতলপাটী, মাদর, কড়ির আলনা, কড়ির চুবড়ী, খাগড়াই পিতল-কাঁসার জিনিস সে বাংলাকে এরা কখনও জানলে না । অথচ সমস্ত জাতিটার যোগ রয়েচে যার সঙ্গে—আর সে কি গভীর যোগ রয়েচে, তা এই পল্লীপথে পায়ে হেটে বেড়িয়ে আমি খুব ভাল বুঝতে পারচি । পাটশিমলে ঢুকে একটা ক্ষদে জাম গাছতলায় শিকড়ের গায়ে বসে এই কথা কটা লিখচি, চারিধারে পাটশিমলের বন । আমার মনে হয় সমগ্র বাংলা দেশের মধ্যে যদি কোথাও বন জঙ্গল ও বাঁশবনকে যথেচ্ছা বধির সংযোগ দেওয়া হোত—তবে এই ধরনের নিবিড়, দাভেদ্য বনানীর সন্টি হোত দেশে । এর প্রকৃতি মালয় উপদ্বীপের বা সন্মাত্রা, যবদ্বীপের ট্রপিক্যাল ( Rain forest )-এর সমান না গেলেও বিহার, সাঁওতাল পরগণা বা মধ্যভারতের অরণ্যের চেয়ে স্বতন্ত্র । ট্রপিক্যাল রেন ফরেস্টের সঙ্গে এর সাদৃশ্য আছে লতা জাতীয় উদ্ভিদের প্রাদাভাবে । এত নানা আকারের লতার প্রাচুযf্য শধ্যে উষ্ণমণ্ডলের বনানীরই নিজস্ব সম্পদ । এই জন্যে এই সব বনের রপে স্বতন্ত্র। এত বংশ আন্ডারগ্রোথ ( Bush undergrowth )-ও নেই সিংডুম বা মধ্যভারতের বনে । অলপ জায়গার মধ্যে এত বিভিন্ন শ্রেণীর উদ্ভিদের সমাবেশও সে সব বনে নেই। মোহিনী কাকাদের চন্ডীমণ্ডপে বসে দেখছিলাম—সামনের বণ্টিবিধৌত বনপলসলভারের শোভা, নিম'ল নীল আকাশ, সেই আকাশ অনেকদিন পরে মেঘশন্যে, আশ্চয" মরকত-শ্যাম পত্রপঞ্জের ওপর ঝলমলে পরিপণ সময‘্যালোক। চণ্ডীমণ্ডপের উঠোনে একটা তরণে নারকোল বক্ষের শাখাপত্রের পন্দন বড় ভাল লাগচে । প্রাচীন কালের ছোট ইটের ভাঙা বাড়ি, ভাঙা চণ্ডীমণ্ডপ, ছাদভাঙা পুজোর দালান পবেকার সম্পন্ন গহচ্ছের বক্তমান শ্ৰীহীনতার সপরিচিত চিহ্ন চারিদিকুে । দর্পরের একটু পরেই পাটশিমলে থেকে বার হই । দধারে প্রকাণ্ড বাঁশঝাড়, আরবছরে দেখা সেই কালীবাড়ির বাঁশঝাড়টা। বাঁশ না কাটলে কি ভাবে বাড়তে পারে তা কালীবাড়ির বশিঝাড় না দেখলে বোঝা যাবে না । বাঁশের দাভেদ্য জঙ্গল । এ বাঁশ কালীগজোর দিন ভিন্ন এবং ঠাকুরের প্রয়োজন ভিন্ন কেউ কাটতে পারে না, এ গ্রামের এই রীতি। এ গ্রামেও সদ্বর আম গাছের তলায় যথেষ্ট আম পড়ে আছে, কেউ কুড়োয় না। মাঠে পড়লম, অতি ভীষণ রৌদ্র আজ, তবু একটু হাওয়া আছে তাই ঠান্ডা। রাস্তায় এসে ছায়া পাওয়া গেল, কিন্তু দধানে যেমনি জঙ্গল, তেমনি মশা । এক জায়গায় একটা লাল টুকটুকে আম কুড়তে একটুখানি দাঁড়িয়েচি, অমনি মশাতে একেবারে ছে"কে ধরেচে। সাঁড়াপোতার বাজার ছাড়িয়ে কল্যকার সঙ্গী সেই হাজারী পরটার বেয়াই বাড়ি গেলাম । হাজারী পরটা বাইরে বসে তামাক খাচ্ছিল, আমায় দেখে লাফিয়ে উঠল, 'আসন, দাদাবাব, মহা সৌভাগ্য যে আপনি এলেন, এঃ, মখ যে লাল হয়ে গিয়েচে রোদে—(মখে লাল হওয়ার