পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ፅሀፉ বিভূতি-রচনাবলী যদিও আমার কোনো উপায় নেই, আমার কালো রং-এ ) আসন, বসন । তারপর সে নিজেই একখানা পাখা নিয়ে এল ছুটে । বাতাস দিতে আরম্ভ করলে নিজেই, তার বেয়াইকে ডেকে নিয়ে এল, আমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলে—মহা খাতির। অনেকক্ষণ—প্রায় ঘণ্টাখানেক সেখানে বসে গল্প করে সেখান থেকে বার হই। ওরা আবার একটু জলযোগ করালে, কিছুতেই ছাড়লে না। আবার রাত্রেও থাকতে বললে। আমি অবিশ্যি তাদের সে অনুরোধ রাখতে পারলাম না। গোবরাপরের বাজারের কাছে এসে দেখি মণীন্দ্র চাটুয্যে যাচ্ছেন। মণীন্দ্রবাব প্রথমে আমায় চিনতে পারেন নি, নাম বলতে চিনতে পারলেন, বললেন—চল আমার ধাড়ি। আমি বললাম—বাড়ি গিয়ে তো থাকতে পারব না, সতরাং গিয়ে কোন লাভ নেই। আপনি কেমন আছেন বলন। তারপর দু-জনে পথে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। মণীন্দ্রবাব এ অঞ্চলের মধ্যে একজন মানুষের মত মানুষ । অমন উদারহৃদয় পরোপকারী, সদাশয় বন্ধ এ সব দেশে নেই। আমি ও'র কাছে গম্ভীরতর অপরাধে অপরাধী । সে কথা এখানে আর ওঠাতে চাই নে। তিনিও সে বিষয়ের কোন উল্লেখ করলেন না। বললাম, শনিবারে আসতেই হবে আমাদের এখানে উপেন ভটচাজের মেয়ের বিয়েতে, সেদিন আবার কথাবাৰ্ত্তণ হবে । আজ আসি । আর কোথাও দাঁড়ালম না। সয' হেলে পড়েচে । রোদ নিস্তেজ হয়ে আসচে। আমায় যেতে হবে এখনও সাত মাইল পথ । কেউটে পাড়ার পথে এক বড়ী জিজ্ঞেস করলে—বাব, এত রোদে বেরিয়েচ কেন ? বললাম—যাব অনেকদরে পথ । বড়ীটি টিকে বেচতে যাচ্চে গোবরাপরের বাজারে । মোল্লাহাটির খেয়া যখন পার হই, তখন স্য' হেলে পড়েচে । মোল্লাহাটির হাট বসেচে, আজ আর-বছরের মত হাটে গেলাম । খবে আমের আমদানি । বেলা গিয়েচে দেখে বেশীক্ষণ দাঁড়াতে পারলাম না । মোল্লাহাটি থেকে খাবরাপোতা পয্যন্ত আসতে রোদটুকু একেবারেই গেল। কিন্তু পথের পাশের আরামডাঙ্গার খড়ের মাঠের দশ্য মনে হোল আমাদের এ অঞ্চলটি সুন্দর বেশী । এত নদী বাঁওড়ের সমাবেশ অন্যত্র নেই। আইনন্দি মণ্ডলের বাড়ির পিছনে সেই বাঁকে এসে খানিকটা বসে বিশ্রাম করি। এই জায়গাটা বড় ভাল লাগে আমার। মরাগাঙ, চক্ৰবত্তে ঘরে গিয়েচে, বাঁশবনের শীষ" অপরাহের ছায়ায় আর নীল আকাশের তলায় বেশ দেখাচ্চে। পলে পার হয়ে এসে দেখি গঙ্গাচরণের দোকানে তালা, দোকান নাকি উঠে গিয়েচে স্টেশনের ধারে । কুঠীর মাঠের পথ দিয়ে ঠিক সন্ধ্যার সময় বাড়ি পৌছই। খাদরা, আসে নি, আসবার কথা ছিল কাল । উষার চিঠি এসেচে, দেখি খাটের ওপরে পড়ে আছে । চার বছর পরে ওর খবর পেলাম । আবার ব্যষ্টি নামল, খুব ঠাণ্ডা পড়ল—কিস্ত; কি জানি সারারাত আমার ভাল ঘাম হোল না । শেষ রাত্রের দিকে একটু ঘাম এল । এসেই উষার চিঠি পেলাম, আর একখানা হাওড়ার রমেন ভট্টাচায্যের । তার পত্ৰখানার উত্তর দিতে হবে। উষা এসেচে কলকাতায় বহুদিন পরে, এর মধ্যে একদিন গিয়ে দেখা করতে হবে । একটা শিমল গাছের গড়িতে বসে কত কথা ভাবলাম। বাল্যে ওই সব বাদলার দিনে কেমন নৌকো বেয়ে একা বেড়াতুম, ওদিকে চালতেপোতার বাঁক, চটকা তলার খালের নাম রেখেছিলাম Oysterbrook ( অল্টাররাক )—তখন সমুদ্রপ্রমণের নানা বই পড়তুম, সবাদা সেই স্বপ্ন দেখতুম। সেই সমদ্র ও আমাদের এই ছোট্ট ইছামতী, তার জল একই কালো