পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 বিভূতি-রচনাবলী চলিয়া আসিবার সময়ে কিস্ত অপণার সঙ্গে দেখা হইল না। অপর আগ্রহ ছিল, কিন্ত আত্মীয় কুটুব পরিজনে বাড়ি সরগরম—কাহাকে যে বলে অপণাকে একবার ডাকিয়া দিতে ? মুখচোরা অপর ইচ্ছাটা কাহাকেও জানাইতে পারিল না। নৌকায় উঠিয়া মরারির ছোট ভাই বিশ বলিল-আসবার সময় দিদির সঙ্গে দেখা করে এলেন না কেন, জামাইবাব ? দিদি সিড়ির ঘরে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল, আপনি যখন চলে আসেন— 劇 কিন্ত নৌকা তখন জোর ভাঁটার টানে যশাইকাটির বকের প্রায় কাছাকাছি আসিয়া পে'ছিয়াছে । এবার কলিকাতায় আসিয়া অনেকদিন পরে দেওয়ানপরের বাল্যবন্ধ দেবরতের সঙ্গে দেখা হইল । সে আমেরিকা যাইতেছে । পরস্পরের দেখা-সাক্ষাৎ না হওয়ায় কেহ কাহারও ঠিকানা জানিত না। অথচ দেবব্রত এখানেই কলেজে পড়িতেছিল, এবার বি. এস-সি. পাস করিয়াছে।--অপর কাছে ব্যাপারটা আশ্চয' ঠেকিল, আনন্দ হইল, হিংসাও হইল। প্রতি শনিবারে বাড়ি না যাইয়া যে থাকিতে পারিত না, সেই ঘর-পাগল দেবব্রত আমেরিকা চলিয়া যাইতেছে ! মাস দুই-তিন বড় কটে কাটিল। আজ এক বছরের অভ্যাস-অফিস হইতে বাসায় ফিরিয়া অপণ"ার হাসিভরা মুখ দেখিয়া কম ক্লান্ত মন শান্ত হইত। আজকাল এমন কষ্ট হয় । বাসায় না ফিরিয়াই সোজা ছেলে পড়াইতে যায় আজকাল, বাসায় মন লাগে না, খালি খালি ঠেকে। লীলারা কেহ এখানে নাই । বন্ধমানের বিষয় লইয়া কি সব মামলা মকদ্দমা চলিতেছে, অনেকদিন হইতে তাহারা সেখানে । একদিন রবিবারে সে বেলুড় মঠ বেড়াইয়া আসিয়া অপণাকে এক লম্বা চিঠি দিল, ভারী ভাল লাগিয়াছে জায়গাটা, অপণা এখানে আসিলে একদিন বেড়াইয়া আসিবে । এসব পরের উত্তর অপণা খুব শীঘ্রই দেয়, কিন্তু পত্ৰখানার কোন জবাব আসিল না—দু'দিন, চারদিন, সাতদিন হইয়া গেল । তাহার মন অস্হির হইয়া উঠিল—কি ব্যাপার ? অপণা হয়ত নাই, সে মারা গিয়াছে—ঠিক তাই । রাত্রে নানা রকম স্বপ্ন দেখে—অপণা ছলছল চোখে বলিতেছে—তোমায় তো বলেছিলাম আমি বেশীদিন বাঁচব না, মনে নেই ? সেই মনসাপোতায় একদিন রাত্রে ?—আমার মনে কে বলত। যাই—আবার আর জন্মে দেখা হবে। পরদিন পড়িবে শনিবার । সে অফিসে গেল না, চাকুরির মায়া না করিয়াই সটেকেস গছাইয়া বাহির হইয়া যাইতেছে এমন সময় বশরবাড়ির পর পাইল । সকলেই ভাল আছে। যাক-বাঁচা গেল ! উঃ, কি ভয়ানক দভাবনার মধ্যে ফেলিয়ছিল উহারা । অপণার উপর একটু অভিমানও হইল। কি কান্ড, মন ভাল না থাকিলে এমন সব অভূত কথাও মনে আসে। কয়দিন সে ক্রমাগত ভাবিয়াছে, ওগো মাঝি তরী হেথা" গানটা কলিকাতায় আজকাল সবাই গায়। কিস্ত গানটার বণনার সঙ্গে তার বশুরবাড়ির এত হবেহন মিল হয় কি করিয়া ? গানটা কি তাহার বেলায় খাটিয়া যাইবে ? শনিবার অফিস হইতে ফিরিয়া দেখিল, মরাৰ্বি তাহার বাসায় বার-বারান্দায় চেয়ারখানাতে বসিয়া আছে । শ্যালককে দেখিয়া অপ খাব খুশী হইল—হাসিমুখে বলিল, এ কি, বাসরে । সাক্ষাৎ বড়কুটুম ষে । কার মুখ দেখে না জানি যে আজ সকালে— মরারি খামে-অটিা একখানা চিঠি তাহার হাতে দিল-কোন কথা বলিল না। অপ; পরথানা হাত বাড়াইয়া লইতে গিয়া দেখিল, মুরারির মুখ কেমন হইয়া গিয়াছে । সে যেন চোখের জল চাপিতে প্রাণপণ চেষ্টা করিতেছে।