পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8& বিভূতি-রচনাবলী অপ ভাবিল—এরা লোক ভাল তাই এসে এসে বলছে। কিন্তু আমায় কেন একটু একা থাকতে দেয় না ? কেউ না আসে ঘরে সেই আমার ভাল। এরা কি বুঝবে ? " সন্ধ্যা হইয়া গেল । বারান্দায় যে কোণে ফুলের টব সাজানো, দু-একটা মশা সেখানে বিন বিন করিতেছে । অন্যদিন সে সেই সময়ে আলো জনালে, স্টোভ জালিয়া চা ও হালয়া করে, আজ অন্ধকারের মধ্যে বারান্দার চেয়ারখানাতে বসিয়াই রহিল--একমনে সে কি একটা ভাবি তেছিল “গভীরভাবে ভাবিতেছিল। ঘরের মধ্যে দেশলাই জালার শব্দে সে চমকিয়া উঠিল । বকের ভিতরটা যেন কেমন করিয়া উঠিল—মহমত্তের জন্য মনে হইল যেন অপণা আছে। এখানে থাকিলে এই সময় সে স্টোভ ধরাইত, সন্ধ্যা দিত। ডাকিয়া বলিল—কে ? পি-টু আসিয়া বলিল—ও কাকাবাব;–মা আপনাদের কেরোসিনের তেলের বোতলটা কোথায় জিজ্ঞেস করলে— অপ বিস্ময়ের সরে বলিল—ঘরে কে রে, পিটু ? তোর মা ? ও ! বৌ-ঠাকরণ ?— বলিতে বলিতে সে উঠিয়া দেখিল পিটুর মা ঘরের মেঝেতে স্টোভ ম'ছিতেছে। —বৌ-ঠাকরণ, তা আপনি আবার কণ্ট করে কেন মিথ্যে—আমি বরং ওটা— তেলের বোতলটা দিয়া সে আবার আসিয়া বারান্দাতে বসিল । পিটুর মা স্টোভ জালিয়া চা ও খাবার তৈরী করিয়া পিটুর হাতে পাঠাইয়া দিল ও রাত্রি নয়টার পর নিজের ঘর হইতে ভাত বাড়িয়া আনিয়া অপদের ঘরের মেজেতে খাইবার ঠাই করিয়া ভাতের থালা ঢাকা দিয়া রাখিয়া গেল । পিন্টুর বাবা সারিয়া উঠিয়াছেন, তবে এখন বড় দাব’ল, লাঠি ধরিয়া সকালে বিকালে একটু-আধটু গোলদীঘিতে বেড়াইতে যান, নিচের একঘর ভাড়াটে উঠিয়া যাওয়াতে সেই ঘরেই আজকাল ই'হারা থাকেন। ডাক্তার বলিয়াছে, আর মাসখানেকের মধ্যে দেশে ফেরা চলিবে। পরদিন সকালেও পিণটুর মা ভাত দিয়া গেল। বৈকালে অফিস হইতে আসিয়া কাপড় জামা না ছাড়িয়াই বাহিরে বারাদাতে বসিয়াছে। বউটি স্টেভ ধরাইতে আসিল । অপর উঠিয়া গিয়া বলিল—রোজ রোজ আপনাকে এ কষ্ট করতে হবে না, বৌদি। আমি এই গোলদীঘির ধারের দোকান থেকে খেয়ে আসব চা ৷ বউটি বলিল—আপনি অত কুষ্ঠিত হচ্ছেন কেন ঠাকুরপো, আমার আর কি কষ্ট ? টুলটা নিয়ে এসে এখানে বসন, দেখনে চা তৈরী করি । 輕 এই প্রথম পিটুর মা তাহার সহিত কথা কহিল। পিটু বলিল—কাকাবাব, আমাকে গোলদীঘিতে বেড়াতে নিয়ে যাবে—একটা ফুলের চারা তুলে আনবে, এনে পুতে দেব । বউটর বয়স লিশের মধ্যে-পাতলা একহারা গড়ন, শ্যামবণ, মাঝামাঝি দেখিতে, খুব ভালও নয়, মন্দও নয়। অপু টুলটা দয়ারের কাছে টামিয়া বসিল । বউটি চায়ের জল নামাইয়া বলিল—এক কাজ করি ঠাকুরপো, একেবারে চাট্রি ময়দা মেখে আপনাকে খানকতক লচি ভেজে দি—ক’খানাই বা খান—একেবারে রাতের খাবারটা এই সঙ্গেই খাইয়ে দি— সারাদিনে ক্ষিদেও তো পেয়েছে । মেয়েটির নিঃসঙ্কোচ ব্যবহারে তাহার নিজের সঙ্কোচ কমে চলিয়া যাইতেছিল। সে বলিল—বেশ, করন। মন্দ কি । ওরে পিটু, ওই পেয়ালাটা নিয়ে আয়— —থাক, থাক ঠাকুরপো, আমি ওকে আলাদা দিচ্ছি। কেটলিতে এখনও চা আছে— আপনি খান। আপনাদের বেলনেটা কোথায় ঠাকুরপো ? —সত্যি আপনি বহুত কষ্ট করছেন, বৌ-ঠাকরণ—আপনাকে এত কস্ট দেওয়াটাপিন্টুর মা বলিল—আপনি বার বার ও রকম বলছেন কেন ? আপনারা আমার যা