পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&to বিভূতি-রচনাবলী আবহাওয়া তাহাদের মনযাত্বকে, রচিকে চরিত্রকে, ধৰ্ম্ম পাহাকে গলা টিপিয়া খন করিতেছে। সংয্যের আলো কি ইহারা কখনও ভোগ করে নাই ? বন-বনানীর শ্যামলতাকে ভালবাসে নাই ? পথিবীর মন্ত রুপকে প্রত্যক্ষ করে নাই ? নিকটে মাঠ নাই, বেগমপরের মাঠ অনেক দুরে, রবিবার ভিন্ন সেখানে যাওয়া চলে না। সতরাং খানিকটা বেড়াইয়াই সেফিরিল। অনেকদিন হইতে এ-অঞ্চলের মাঠে ও পাড়াগাঁয়ে ঘুরিয়া ঘুরিয়া এদিকের গাছ-পালা ও বনের ফুলের একটা তালিকা ও বণনা সে একখানা বড় খাতায় সংগ্ৰহ করিয়াছে। কুলের দ-একজন মাস্টারকে দেখাইলে তাঁহারা হাসিয়া উড়াইয়া দিলেন। ওসবের কথা লইয়া আবার বই ! পাগল আর কাকে বলে ! বাসায় আসিয়া আজ আর সে বিশ স্যাকরার আভায় গেল না। বসিয়া বসিয়া ভাবিতে ভাবিতে জানকীর কথা মনে পড়িল । বিলাতে- তা বেশ। কতদিন গিয়াছে কে জানে ? ব্রিটিশ মিউজিয়ম-টিউজিয়ম এতদিনে সব দেখা হইয়া গিয়াছে নিশ্চয় । পরোনো নম্যান দাগ দু-একটা, পাশে পাশে জনিপারের বন, দুরে ঢেউ-খেলানো মাঠের সীমায় খড়িমাটির পাহাড়ের পিছনে সন্ধ্যাধসর আটলাণ্টিকের উদার বকে অস্ত-আকাশের রঙিন প্রতিচ্ছায়া, কি কি গাছ, পাড়াগাঁয়ের মাঠের ধারে কি কি বনের ফুল ? ইংল্যাণ্ডের বনফুল নাকি ভারী দেখিতে সন্দর—পপি, রিম্যাটিস, ডেজ । বিশ স্যাকরার দোকান হইতে লোক ডাকিতে আসে, আসিবার আজ এত দেরিকিসের ? খেলড়ে ভীম সাধখী, মহেশ সবিই, নীল ময়রা, ফকির আভি—ইহারা অনেকক্ষণ আসিয়া বসিয়া আছে —মাস্টার মশায়ের যাইবার অপেক্ষায় এখনও খেলা যে আরম্ভ হয় নাই । অপ যায় না—তাহার মাথা ধরিয়াছে—না, আজ সে আর খেলায় যাইবে না। ক্লমে রান্তি বাড়ে, পদ্মপতুরের ও-পারে কুলিবস্তীর আলো নিবিয়া যায়, নৈশ-বায়ুশীতল হয়, রাত্রি সাড়ে দশটায় আপ ট্রেন হেলিতে-দলিতে ঝক-ঝক শব্দে রোয়াকের কোল ঘেষিয়া চলিয়া যায়, পয়েণ্টসম্যান অধিারে-ল-ঠন-হাতে আসিয়া সিগন্যালের বাতি নামাইয়া লইয়া যায়। জিজ্ঞাসা করে-মাস্টারবাবা, এখনও বসিয়ে আছেন ? —কে ভজয়া ? হ্যাঁ—সে এখনো বসিয়া আছে। কিসের ক্ষধা –কিসের যেন একটা অতৃপ্ত ক্ষধা । ও-বেলা একখানা পরানো জ্যোতিবিজ্ঞানের বই লইয়া নাড়াচাড়া করিতেছিল-এখানা খুব ভাল বই এ-সম্বন্ধে। শীলেদের বাড়ির চাকরিজীবনে কিনিয়াছিল—এখানা হইতে অপণাকে কতদিন নীহারিকা ও নক্ষত্রপঞ্জের ফটোগ্রাফ দেখাইয়া বঝাইয়া দিত-ও-বেলা যখন সেখানা লইয়া পড়িতেছিল তখন তাহার চোখে পড়িল, অতি ক্ষুদ্র সাদা রংয়ের—খালি চোখের খব তেজ না থাকিলে দেখা প্রায় অসম্ভব—এরুপ একটা পোকা বইয়ের পাতায় চলিয়া বেড়াইতেছে। ওর সম্বন্ধে ভাবিয়াছিল--এই বিশাল জগৎ, নক্ষত্রপুঞ্জ, উল্কা, নীহারিকা, কোটি কোটি দৃশ্য-আদশ্য জগৎ লইয়া এই অনন্ত বিশ্ব—ও-ও তো এরই একজন অধিবাসী—এই যে চলিয়া বেড়াইতেছে পাতাটার উপরে, ও-ই ওর জীবনানন্দ-কতটুকু ওর জীবন, আনন্দ কতটুকু ? - কিন্তু মানুষেরই বা কতটুকু ? ঐ নক্ষত্র-জগতের সঙ্গে মানষের সম্বন্ধই বা কি ? আজকাল তাহার মনে একটা নৈরাশ্য ও সন্দেহবাদের ছায়া মাঝে মাঝে যেন উকি মারে । এই বর্ষাকালে সে দেখিয়াছে, ভিজা জনতার উপর এক রকম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছাতা গজায়— কতদিন মনে হইয়াছে মানুষও তেমনি পথিবীর পণ্ঠে এই রকম ছাতার মত জমিয়াছে— এখানকার উষ্ণ বায়ুমণ্ডল ও তাহার বিভিন্ন গ্যাসগলা প্রাণপোষণের অন.কুল একটা অবস্থার