পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

છો? বিভূতি-রচনাবলী অপমান হচ্ছি, ছোট আদালতে নালিশ ক'রে দোকানের ক্যাশবাক্স সীল ক'রে রেখেছে । দিন একটা টাকা খরচ -বাসায় কোন দিন খাওয়া হয়, কোন দিন— বন্ধ-পত্নী বাধা দিয়া বলিলেন, তুমি ও-কাঁদনি গেয়ো অন্য সময় । এখন উনি এলেন এতদিন পর, একটু চা খাবেন, ঠান্ডা হবেন, তা না তোমার কাঁদনি শর্যে হ’ল । 鬱 —আহা, আমি কি পথের লোককে ধরে বলতে যাই ? ও আমার ক্লাসফ্রেড, ওদের কাছে দুঃখের কথাটা বললেও—ইয়ে, পাতা চায়ের প্যাকেট একটা খুলে নাও না ? আটা আছে নাকি ? আর দ্যাখ, না হয় ওকে খান-চারেক রীটি অস্ত৩– —আচ্ছা, সে ভাবনা তোমায় ভাবতে হবে না। পরে অপর দিকে চাহিয়া হাসিয়া বলিলেন--আপনি সেই বিজয়া দশমীর পর আর একদিনও এলেন না যে বড় ? চা ও পরোটা খাইতে খাইতে অপর নিজের কথা সব বলিল -- শীঘ্রই বাহিরে যাইতেছে, সে কথাটাও বলিল । বন্ধ বলিল, তবেই দ্যাথো ভাই, তব তুমি একা আর আমি সত্ৰীপত্র নিয়ে এই কলকাতা শহরের মধ্যে আজ পাঁচ-পাঁচটি বছর যে কি ক'রে দিন কাটাচ্ছি তা আর.এই সব নিয়ে একরকম চালাই, পয়সা-প্যাকেট চা আছে, খদিরাদি মোদক আছে। মাজনের লাভ মন্দ না, কিস্ত, কি জান, এই কেীটোটা পড়ে যায় দেড়-পয়সার ওপর, মাজনে, লেবেলে, ক্যাপসুলে তাও প্রায় দু’পয়সা—তোমার কাছে আর লুকিয়ে কি করব, স্বামীস্ত্রীতে খাটি কিন্তু মজরী পোষায় কই ? তবুও তো দোকানীর কমিশন ধরি নি হিসেবের মধ্যে । এদিকে চার পয়সার বেশী দাম করলে কমপিট করতে পারব না । খানিক পরে বন্ধ বলিল-ওহে তোমার বৌঠাকরণ বলছেন, আমাদেরতো একটা খাওয়া পাওনা আছে, এবার সেটা হয়ে যাক না কেন ? –বেশ একটা ফেয়ারওয়েল ফিস্ট হয়ে যাবে এখন, তবে উলটো, এই যা— 孵 আপন মনে মনে ভারী কৃতজ্ঞ হইয়া উঠিল বন্ধ-পত্নীর প্রতি । ইহাদের মলিন বেশ ও ছেলেমেয়েগুলির জীণ চেহারা হইতে ইহাদের ইতিহাস সে ভালই বঝিয়াছিল। কিছ: ভালো খাবার আনাইয়া খাওয়ানো, একটু আমোদ আহমাদ করা-কিন্তু হয়ত সেটা দরিদ্র সংসারে সাহায্যের মত দেখাইবে। যদি ইহারা না লয় বা মনে কিছ ভাবে ?—ও-পক্ষ হইতে প্রস্তাবটা আসিতে সে ভারী খুশী হইল । ভোজের আয়োজনে ছ:সাত টাকা ব্যয় করিয়া অপর বন্ধর সঙ্গে ঘরিয়া বাজার করিল। কই মাছ, গলদা-চিংড়ি, ডিম, আলু, ছানা, দই, সন্দেশ । இ. হয়তো খুব বড় ধরণের কিছল ভোজ নয়, কিন্তু বন্ধন-পত্নীর আদরে হাসিমুখে তাহা এত মধরে হইয়া উঠিল ! এমন কি এক সময়ে অপর মনে হইল আসলে তাহাকে খাওয়ানোর জন্যই বন্ধ-পত্নীর এ ছল ৷ লোকে ইন্টদেবতাকেও এত যত্ন করে না বোধ হয় । পিছনে সব সময় বন্ধর বৌটি পাখা হাতে বসিয়া তাহদের বার্তাস করিতেছিলেন, অপ, হাত উঠাইতেই হাসিমুখে বলিলেন -ও হবে না, আপনি আর একটু ছানার ডালনা নিন-ও কি, মোচার চপ পাতে রাখলেন কার জন্যে ? সে শনেব না । এই সময় একটি পনেরো-ষোল বছরের ছেলে উঠানে আসিয়া দাঁড়াইল । বন্ধ বলিল— এসো, এসো কুঞ্জ, এসো বাবা, এইটি আমার শালীর ছেলে, বাগবাজারে থাকে। আমার সে ভায়রা-ভাই মারা গেছে গত শ্রাবণ মাসে । পাটের প্রেসে কাজ করত, গঙ্গার ঘাটে রেললাইন পেরিয়ে আসতে হয় । তা রোজই আসে, সেদিন একখানা মালগাড়ি দাঁড়িয়ে আছে । তা ভাবলে, আবার অতখানি ঘরে যাব ? ধেমন গাড়ির তলা দিয়ে গলে আসতে গিয়েছে আর অমনি গাড়িখানা দিয়েছে ছেড়ে । তারপর চাকায় কেটে-কুটে একেবারে আর কি— দটি মেয়ে, আমার শালী আর এই ছেলেটি, একরকম করে বন্ধ-বান্ধবের সাহায্যে চলছে।