পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ Ն বিভূতি-রচনাবলী দশাশ্বমেধ ঘাটে বাবার গলার সবর কেমন করিয়া অলক্ষিতে তাহার গলায় আসে— শালবনের পরম মারে, নৈশপাখির গানের মধ্যে রাজষি ভরতের সরল বৈরাগ্য ও নিসপহে আনন্দ যেন প্রতি সরমছনাকে একটি অতি পবিত্র মহিমাময় রােপ দিয়া দিল । কথকতা থামিলে সকলেই চুপ করিয়া রহিল । অপর খানিকটা পর হাসিয়া বলিল—কেমন লাগল ? go অবনীবাব একটু ধৰ্ম্মপ্রাণ লোক, তাঁহার খবই ভাল লাগিয়াছে—কথকতা দু-একবার শুনিয়াছেন বটে, কিন্তু এ কি জিনিস । ইহার কাছে সে সব লাগে না । কিন্তু সকলের চেয়ে মগধ হইলেন অবনীবাবরে সত্ৰী। জ্যোৎস্নার আলোতে তাঁহার চোখে ও কপালে অগ্র চিক-চিক করিতেছিল । অনেকক্ষণ তিনি কোন কথা বলিলেন না। স্বদেশ হইতে দরে এই নিঃসন্তান দম্পতির জীবনযাত্রা এখানে একেবারে বৈচিত্র্যহীন, বহুদিন এমন আনন্দ তাঁহাদের কেহ দেয় নাই । দিন দুই পরে অবনীবাবরে বন্ধ মিঃ রায়চৌধুরী আসিলেন, ভারী মনখোলা ও অমায়িক ধরণের লোক, বয়স চল্লিশের কাছাকাছি, কানের পাশে চুলে পাক ধরিয়াছে, বলিষ্ঠ গঠন ও সপর,ষ । একটু অতিরিক্ত মাত্রায় মদ খান । জৰবলপরে হইত হইস্তিক আনাইয়াছেন কিরুপ কষ্ট স্বীকার করিয়া, খানিকক্ষণ তাহার বণনা করিলেন । অবনীবাবও যে মদ খান অপর তাহা ইতিপবে জানিত না । মিঃ রায়চৌধুরী অপরকে বলিলেন, আপনার গণের কথা সব শুনলাম, অপশববাব । সে আপনাকে দেখেই আমার মনে হয়েছে । আপনার চোখ দেখলে যে কোন লোক আপনাকে ভাবকে বলবে । তবে কি জানেন, আমরা হয়ে পড়েছি ম্যাটার-অব-ফ্যাক্ট । আজ আপনাকে আর একবার কথকতা করতে হবে, ছাড়াঁচ নে আজ । কথাবাত্ত"ায়, গানে, হাসিখুশিতে সেদিন প্রায় সারারাত কাটিল । মিঃরায়চৌধুরী চলিয়া যাইবার দিন তিনেক পরে একজন চাণরাসী তাঁহার নিকট হইতে অপর নামে একখানা চিঠি আনিল । তাঁহার ওখানে একটা ড্রিলিং তাঁবর তত্ত্বাবধানের জন্য একজন লোক দরকার । অপশ্ববাব কি আসিতে রাজী আছেন ? আপাতত মাসে পঞ্চাশ টাকা ও বাসস্থান । অপর নিকট ইহা একেবারে অপ্রত্যাশিত। ভুাবিয়া দেখিল, হাতে আনা দশেক পয়সা মাত্র অবশিষ্ট আছে, উহারা অবশ্য যতই আত্মীয়তা দেখান, গান ও কথকতা করিয়া চিরদিন তো এখানে কাটানো চলিবে না ? আশ্চযে‘্যর বিষয়, এতদিন কথাটা আদৌ তাহার মনে উদয় হয় নাই যে কেন ? o মিঃ রায়চৌধুরীর বাংলো প্রায় মাইল-কুড়ি দরে । তিনদিন পরে ঘোড়া ও লোক আসিল । অবনীবাব ও তাঁহার রী অত্যন্ত দুঃখের সহিত তাহাকে বিদায় দিলেন। পথ অতি দগম, উমেরিয়া হইতে তিন মাইল উত্তর-পশ্চিম দিকে গেলেই ঘন জঙ্গলের মধ্যে ডুবিয়া যাইতে হয় । দুই-তিনটা ছোট ছোট পাহাড়ী নদী, আবার ছোট ছোট ফান ঝোপ, ঝরণা —একটার জলে অপর মুখ ধুইয়া দেখিল জলে গন্ধকের গন্ধ। পাহাড়িয়া করবী ফুটিয়া আছে, বাতাস নবীন মাদকতায় ভরা, খুব নিগধ, এমন কি যেন একটু গা সিরা-সির করে— এই চৈত্র মাসেও । সন্ধ্যার পর্বে সে গন্তব্য স্থানে পৌছাইয়া গেল । খনির কায্যকারিতা ও লাভালাভের বিষয় এখনও পরীক্ষাধীন, মাত্র খান চার-পাঁচ চওড়া খড়ের ঘর। দুইটা বড় বড় তাঁব, কুলীদের থাকিবার ঘর, একটা অফিস ঘর। সবসন্ধ আট-দশ বিঘা জমির উপর সব । চারিধার ঘেরিয়া ঘন, দগম অরণ্য, পিছনে পাহাড়, আবার পাহাড় । মিঃ রায়চৌধুরী বলিলেন—খুব সাহস আছে আপনার তা আমি বুঝেছি যখন শুনলাম আপনি রাত্রে ঘোড়ায় চড়ে উমেরিয়া এসেছিলেন। ও পথে রাত্রে এদেশের লোকও ষেতে সাহস পায় না ।