পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ৮১ মিঃ রায়চৌধুরী শুনিয়া বলিলেন—যাবেন কিসে ? পথ কিন্তু অত্যন্ত খারাপ, এখান থেকে প্রায় আশি মাইল দরে হবে, এর মধ্যে ষাট মাইল ডেনস ভাজিন ফরেস্ট—বাঘ, ' ভালকে, নেকড়ের দল সব আছে । বিনা বন্দকে যাবেন না, ঘোড়া সহিস নিয়ে যান-রাত হবার আগে আশ্রয় নেবেন কোথাও—সে-ট্রাল ইণ্ডিয়ার বাঘ, রসগোল্লাটির মত লফে নেবে নইলে । ঐ জন্যে কত দিন আপনাকে বারণ করেছি এখানেও সন্ধ্যের পর তাঁবর বাইরে বসবেন না—বা অন্ধকারে বনের পথে একা ঘোড়া চালাবেন না -- তা আপনি বন্ডরেকলেস । তখন সে উৎসাহে পড়িয়া বিনা ঘোড়াতেই বাহির হইল বটে, কিন্তু দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যার সময় সে নিজের ভুল বুঝিতে পারিল-ধারালো পাথরের নড়িতে জুতার তলা কাটিয়া চিরিয়া গেল, অতদরে পথ হাঁটিবার অভ্যাস নাই, পায়ে এক বিরাট ফোস্কা উঠিয়াছে । পিছনে রামচরিত বেচিকা লইয়া আসিতেছিল, সে সমানে পথ হটিয়া চলিয়াছে, মুখে কথাটি নাই । বহু দরের একটা পাহাড় দেখাইয়া বলিল, ওর পাশ দিয়া পথ । পাহাড়টা ধোঁয়া ধোঁয়া দেখা যায়, বোঝা যায় না, মেঘ না পাহাড় — এত দুরে । অপর ভাবিল পায়ে হাঁটিয়া অতদর সে যাইবে ক’দিনে ? এ ধরণের ভীষণ আরণ্যভূমি, অপর মনে হইল এ অঞ্চলে এতদিন আসিয়াও সে দেখে নাই । সে যেখানে থাকে, সেখানকার বন ইহার তুলনায় শিশ, নিতান্ত অবোধ শিশু। দপুরের পর যে বন শর, হইয়াছে তাহা এখনও শেষ হয় নাই, অথচ সন্ধ্যা হইয়া আসিল। অন্ধকার নামিবার আগে একটা উ"চু পাহাড়ের উপরকার চড়াই পথে উঠিতে হইল— উঠিয়াই দেখা গেল—সব নাশ, সামনে আবার ঠিক এমনি আর একটা পাহাড়। অপর পায়ের ব্যথাটা খুব বাড়িয়াছিল, তৃষ্ণাও পাইয়াছিল বেজায় --অনেকক্ষণ হইতে জলের সন্ধান মেলে নাই, আবলুস গাছের তলা বিছাইয়া অম্লমধুর কে'দফল পড়িয়া ছিল—সারা দুপর তাহাই চুষিতে চুষিতে কাটিয়াছে কিন্তু জল অভাবে আর চলে না । দরে দরে, উত্তরে ও পশ্চিমে নীল পৰবতমালা । নিম্নের উপত্যকার ঘন বনানী সন্ধ্যার ছায়ায় ধসের হইয়া আসিতেছে, সরল পথটা বনের মধ্য দিয়া অকিয়া বাকিয়া নামিয়া গিয়াছে। সৌভাগ্যের বিষয়, সমুখের পাহাড়টার ওপারে এক মাইলের মধ্যে বন-বিভাগের একটা ডাকবাংলো পাওয়া গেল । চারিধারে নিবিড় শালবন, মধ্যে ছোট খড়ের ঘর। খাল ও বন বিভাগের লোকেরা মাঝে মাঝে রাত্রি কাটায় । এ রাত্রির অভিজ্ঞতা ভারি অদ্ভুত ও বিচিত্র । বাংলোতে অপর একটি প্রৌঢ় লোককে পাইল, সে ইহারই মধ্যে ঘরে খিল দিয়া বসিয়া কি পড়িতেছিল, ডাকাডাকিতে উঠিয়া দরজা খলিয়া দিল । জিজ্ঞাসা করিয়া জানা গেল লোকটা মৈথিলী ব্রাহ্মণ, নাম আজবলাল ঝা। বয়স ষাট বা সত্তর হইবে । সে সেই রাত্রে নিজের ভান্ডার হইতে আটা ঘাত বাহির করিয়া আনিয়া অপর নিষেধ সত্ত্বেও উংকৃষ্ট পরি ভাজিয়া আনিল,-পরে অতিথিসৎকার সারিয়া সে ঘরের মধ্যে বসিয়া সম্বরে সংস্কৃত রামায়ণ পড়িতে আরম্ভ করিল। কিছদ পরেই অপ বঝিল লোকটা সংস্কৃত ভাল জানে —নানা কাব্য উত্তমরপে পড়িয়াছে । নানা স্হান হইতে শ্লোক মুখপথ বলিতে লাগিল -কাব্যচচ্চায় অসাধারণ উৎসাহ, তুলসীদাসী রামায়ণ হইতে অনগ’ল দোঁহা আবৃত্তি করিয়া যাইতে লাগিল । ক্ৰমে ওঝাজী নিজের কাহিনী বলিল । দেশ ছিল দ্বারভাঙা জেলায় । সেখানেই শৈশব কাটে, তের-বৎসর বয়সে উপনয়নের পর এক বেনিয়ার কাছে চাকরি লইয়া কাশী আসে । পড়াশনা সেইখানেই-তারপরে কয়েক জায়গায় টোল খলিয়া ছাত্র পড়াইবার চেষ্টা করিয়াছিল—কোথাও সুবিধা হয় নাই । পেটের ভাত জটে না, নানা স্থানে ঘনরিবার পর এই ডাকবাংলোয় আজ সাত-আট বছর বসবাস করিতেছে । লোকজন বড় এখানে কেহ আসে

  • ونسن .fR. H