পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& পদক্ষেপ তেমন গম্ভীরতর নয়। পরিচিত জগৎ থেকে অপরিচিত জগতে যাওয়া শক্ত, অপরিচিত জগৎ থেকে আর এক অপরিচিত জগতে যাওয়া শক্ত নয়। অপর একমাত্র পরিচিত ভূখণ্ড - নিশ্চন্দিপুর, দীঘকাল বসবাসেও কলকাতা পরিচিত হয় নি। তাই উত্তর জীবনে বল্যের নিশ্চিন্দিপুরকেই সে সবর অন্বেষণ করে বেড়িয়েছে। ‘অপরাজিত’-এর উপর নিশ্চিদিপরের সমতি ক্ষণে ক্ষণে দীঘশ্বাস ফেলেছে । একদিকে নিশ্চিন্দিপুরের বাল্য জীবন, আর একদিকে সমগ্র উত্তর জীবন—এই দুটি জীবনের গরত্বে সমান সমান। সে-বিচারে নিশ্চিদিপর ত্যাগ অপর জীবন-পথের মধ্যপথ । পাঁচালীর প্রথম পালা এখানে শেষ হয়ে পথের দেবতার তিলক এখানেই অপর ললাটে কেন অাঁকা হল না, বোঝা শক্ত । অনুমান করি, অপর জীবন-পথের সমগ্রতা লেখকেরও দটির অগোচরে ছিল । সাধারণের মত তিনিও পথের খণ্ডাংশই শুধ দেখেছেন । ‘অপরাজিত’-তে খন্ড-ভাগ নেই, কিন্তু পথের পাঁচালী’র তিনটি খণ্ড । পথকে যখন লেখক তিনটি খণ্ডে ভাগ করে দেখাতে চান তখন আমরা আশা করব, তিনটি খণেড পথের একাংশের অখন্ডরপ উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে, তিনটি খণ্ডের লক্ষ্য একমুখী হবে । আগেই বলেছি তৃতীয় খণ্ড ‘অক্লর সংবাদ’ আসলে "অপরাজিত"-র সামগ্রী । দ্বিতীয় খণ্ড–সবাপেক্ষা বহৎ খণ্ড—যথার্থ ‘পথের পাঁচালী’ । এই পথে অপর প্রধান সঙ্গী—দগো এবং নিশ্চিন্দিপুর । দগ"ার পথ অলপদরে গিয়ে শেষ হয়ে গিয়েছে, নিচিন্দিপুর শেষ হয়েছে আরও কিছু পরে । কিন্তু প্রথম খণ্ড বল্লালী-বালাই’-র সঙ্গে অপর পথের সম্পক কি ? সে-কাহিনী শাখাপথের কাহিনী, ইন্দির ঠাকরণের কাহিনী । মলপথ থেকে বেশি দরে বেকে না গেলে শাখাপথও অবান্তর নয়। কিন্তু বল্লালী-বালাই’-র শাখাপথ মলপথ থেকে অনেক দর বেকে গিয়েছে এবং পনবার বকি ঘরে মালপথের সঙ্গে যুক্ত হয় নি। গয়ায় পিণ্ডদান দেওয়ার সময় ছাড়া উত্তর জীবনে ইন্দির ঠাকরণের কথা অপর দ্বিতীয়বার স্মরণ করে নি । এতেই মনে হয়, ‘পথের পাঁচালী’র পালা-ভাগ, খণ্ড-ভাগ কোনো নিদিষ্ট পরিকল্পনা অনুসারে হয় নি । অপর সঙ্গে লেখকও পথ চলেছেন, পথপাশেবার যে-দশ্য তাঁর মনোযোগ আকষণ করেছে, তিনি সেই দশ্য দেখবার জন্য ছটেছেন । বকি থেকে বাঁকান্তরে ঘরে ঘরে যে-পথ এগিয়ে গিয়েছে সে-পথের সম্পণে চেহারা তাঁর মনে ছিল না । | 4 || 贛 'পথের পাঁচালী’র সঙ্গে তুলনায় অপরাজিত নিপ্রভ । ‘পথের পাঁচালীতে লেখক অপকে সটি করেছেন । লেখককে এই সন্টির কাজে সাহায্য করেছে দগfা-সবজিয়া-রাণ-পটু এবং নিশ্চিন্দিপুর। অপরাজিত’-তে লেখক অপকে সন্টি করেন নি, তিনি তার জীবন-কাহিনীর বিবরণ দিয়েছেন । এ বিবরণে যে কৌশলই থাক, তা সৃষ্টি নয়। এবং সেই কারণে নিশ্চিন্দিপুরের অপকে অপরাজিত’-তে চিনতে পারি না, যেমন ব্রজের গোপীরা মথুরার কৃষ্ণকে চিনতে পারে নি। “অজানার রোমান্স’ নিশ্চিন্দিপরের অপকে বিহবল করে তুলত, শিশর পক্ষে তা স্বাভাবিক কিন্তু শৈশবের রোমান্স-তৃষ্ণা, কল্পনা-প্রবণতা যৌবনে স্থির জীবন-সত্যে রপান্তরিত না হলে বুঝতে হবে শিশর বয়স বেড়েছে, মন বাড়ে নি। স্পষ্ট জীবন-সত্যের অভাবে অপর চিরশিশী । যৌবনেও সে ‘প্রাচীন দিনের জগৎ, অধ্যুনালুপ্ত অতিকায় প্রাণীদল, বিশাল শন্যের দশ্য, অদশ্য গ্রহনক্ষত্ররাজি, ফরাসী বিদ্রোহ প্রভৃতি নানা:স্বপ্নে বিভোর। সত্য আর স্বপ্নের মিশ্রণে জীবন, সত্যকে বাদ দিয়ে জীবন আকাশকুসুম, স্বপ্নকে বাদ দিয়ে সত্য রাঢ়-নিষ্ঠুর। অপা সত্যের সম্মুখীন হতে অক্ষম, সত্যকে পাশ কাটিয়ে স্বপ্নে বিভোর