পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᏌᏌ বিভূতি-রচনাবলী বিয়ের যোগাযোগটি তো ঘটিয়েছিলে, ভেবে দ্যাথো তো আজ পাঁচ বচ্ছরের মধ্যে নিজের ছেলেকে একবার চোখের দেখা দেখতে এল না, ত্রিশ-চল্লিশ টাকা মাইনের চাকরি করছেন আর ঘরে বেড়াচ্ছেন ভবঘরের মত, চাল নেই চুলো নেই, কোন জন্মে যে করবেন সে আশাও নেই —বলো না, হাড়ে চটেছি আমি, এদিকে ছেলেটিও কি অবিকল তাই “এই বয়েস থেকেই তেমনি নিবোধ, অথচ যেমনি চঞ্চল তেমনি একগয়ে । চঞ্চল কি একটু আধটু ? ঐটুকু তো ছেলে, একদিন করেছে কি, একদল গরর গাড়ির গাড়োয়ানের সঙ্গে চলে গিয়েছে সেই পীরপরের বাজারে—এদিকে আমরা খুজে পাই নে, চারিদিকে লোক পাঠাই—শেষে মাখন মহরীর সঙ্গে দেখা, সে ধরে নিয়ে আসে। খাওয়াও, দাওয়াও, মেয়ের ছেলে কখনও আপনার হয় না, যে পর সে-ই পর । * খোকা বাপের মত লাজুক ও মুখচোরা-কিন্তু প্রণবের মনে হইল, এমন সন্দের ছেলে সে খুব কম দেখিয়াছে। সারা গা বহিয়া যেন লাবণ্য ঝরিতেছে, সদাসবাদা মুখ টিপিয়া কেমন এক করণ, অপ্রতিভ ধরণের হাসি হাসে—মুখখানা এত লাজুক ও অবোধ দেখায় সে সময় ! -কেমন যে একটা কর্ণা হয় ! এখানে কয়েক দিন থাকিয়া প্রণব বুঝিয়াছে, দিদিমা মারা যাওয়ার পর এ বাড়িতে,বালককে যত্ন করিবার আর কেহ নাই—সে কখন খায়, কখন শোয়, কি পরে—এ সব বিষয়ে বাড়ির কাহারও দটি নাই । শশীনারায়ণ বড়িয্যে তো নাতিকে দ'চক্ষে দেখিতে পারেন না, সব্বদা কড়া শাসনে রাখেন । তাঁহার বিশ্বাস এখন হইতে শাসন না করিলে এ-ও বাপের মত ভবঘ,রে হইয়া যাইবে, অথচ বালক বুঝিয়া উঠিতে পারে না, দাদামহাশয় কেন তাহাকে অমন উঠিতে-তাড়া বসিতে-তাড়া দেন–ফলে সে দাদামহাশয়কে যমের মত ভয় করে, তাঁহার ত্রিসীমুনা দিয়া হাঁটতে চায় না । কলিকাতায় ফিরিয়া প্রণব দেবব্রতর সঙ্গে দেখা করিল । দেবব্রত একটু বিষন্ন—বিলাত যাইবার পর্বে সে একটি মেয়েকে নিজের চোখে দেখিয়া বিবাহের জন্য পছন্দ করিয়াছিল— কিন্তু তখন নানা কারণে সম্প্রবন্ধ ভাঙিয়া যায়—সে আজ তিন বৎসর প্রবের কথা। এবার বিদেশ হইতে ফিরিয়া সে নিছক কৌতুহলের বশবত্তীর্ণ হইয়া সম্প্রধান লইয়া জানে মেয়েটির এখনও বিবাহ হয় নাই । মেয়েটির ডান পায়ের হাঁটুতে নাকি কি হইয়াছে, ডাক্তারে সন্দেহ করিতেছেন বোধ হয় তাহাতে চিরজীবনের জন্য ঐ পা খাটো হইয়া থাকিবে—এ অবসচার কে-ই বা বিবাহ করিতে অগ্রসর হইবে ? শনিবামাত্র দেবব্রত ধরিয়া বসিয়াছে সে ঐ মেয়েকেই বিবাহ করবে—মায়ের ঘোর আপত্তি, পিসেমহাশয়ের আপত্তি, মামাদের আপত্তি—সে কিন্তু নাছোড়বান্দা । হয় ঐ মেয়েকে বিবাহ করিবে, নতুবা দরকার নাই বিবাহে । দেবব্রতর সঙ্গে প্রণবের খুব ঘনিষ্ঠ আলাপ ছিল না, অপর সঙ্গে ইতিপবে বার দইতিন তাহার কাছে গিয়াছিল এই মাত্র । এবার সে যায় অপর কোন সন্ধান দিতে পারে কিনা তাহাই জানিবার জন্য। কিন্তু এই বিবাহ-বিভ্ৰাটকে অবলম্বন করিয়া মাস-দইয়ের মধ্যে দু'জনের একটা ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়িয়া উঠিল । দেবব্রত এই সব গোলমালের দরন পিশেমহাশয়ের বাসা ছাড়িয়া কলিকাতা হোস্টেলে উঠিয়াছিল—বৈকালে সেখানে একদিন প্রণব বেড়াইতে গিয়া শুনিল, দেবব্রতর মা এ বিবাহে মত দিয়াছেন। দেবব্রত বলিল—ঠিক সময় এসেছেন, আমি ভাবছিলাম আপনার কথা— কাল পিসেমশায় আর বড় মামা যাবেন মেয়েকে আশীব্বাদ করতে, আপনিও যান ওদের সঙ্গে । ঠিক বিকেল পাঁচটায় এখানে আসবেন । মেয়ের বাড়ি গোয়াবাগানে। ছোট দোতলা বাড়ি, নিচে একটা প্রেস। মেয়ের বাপ গভর্ণমেণ্টের চাকরি করেন। মেয়েটিকে দেখিয়া খুব সুন্দরী বলিয়া মনে হইল না প্রণবের,