পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দশম খণ্ড).djvu/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী אלס —এত দেরি হোলে রোজ রোজ চলবে না, নারাণবাবু— নারাণবাৰু অপ্রতিভ মুখে হাজির খাতাখান টেনে নেন। কিন্তু আরও পাঁচ মিনিট পরে হেড মাস্টারের প্রিয়পাত্র সারদাবাৰু এসে একগাল হেসে বলেন,—উঃ, কি রোদ আজকে স্তার। গা যেন পুড়িয়ে দিচ্ছে। & হেড মাস্টার বলেন,—আপনার মেয়ের বিয়ের ঠিক হোল হুগলীতেই ? বস্কন, বস্থন— —দুটো পান নিন স্থার । একটি ছেলে ক্লাসের বাইরে এসে দাড়িয়ে থাকে। নাম ইন্দুভূষণ। স্বন্দর চেহারা। নারাণবাবুকে এগিয়ে এসে ক্লাসে নিয়ে যায়। ক্লাসে ছেলেদের ভিড়। নারাণবাবুকে সবাই ভালবাসে। পছন্দ করে, ভয়ও করে। ক্লাস চুপ হয়ে যায়—একবার মৃদ্ধ ভৎসনায়। অঙ্ক কষান, বোর্ডে খড়ি দিয়ে। o ইন্দুভূষণ বলে—অঙ্ক কষার পরে সেই গল্পট বলুন স্তার। সব ছেলে সায় দেয়। নারাণবাবু বলেন জানলাগুলো খুলে দাও, দেখো তো কেমন স্বন্দর। মাঠ, গাছপালা ভগবানের তৈরি স্বন্দর পৃথিবীকে চোখ ভরে দেখতে শেখো । শুধু বইয়ের পড়া পড়লে মানুষ হবে। চোখের দৃষ্টি ফুটুক । ইন্দুভূষণ বলে—ঐ দেখুন বঁাশঝাড়ের আকাশটা কেমন ময়ুরকষ্ঠী রং । নদীর ওপারে কি রকম কাশফুল ফুটেচে ! নারাণবাবুর মন আনন্দে ভরে ওঠে। এই একটি ছেলেকে তিনি অন্ততঃ দৃষ্টিদান করতে পারবেন হয় তে। ইন্দুভূষণ স্কুল ম্যাগাজিনের জন্যে—নিজের রচনা পড়ে শোনাচ্ছে, এমন সময়ে হেড মাস্টার দোরের বাইরে দাড়িয়ে কড়া নজরে এক চমক ক্লাস রুমের দিকে চাইলেন। ইন্দুভূষণের পড়া বন্ধ হয়ে গেল। নারাণবাবু খতমত খেয়ে গেলেন। পাশে অন্য একটি ক্লাস। হেডমাস্টারের প্রিয়পাত্র সারদাবাবু চেয়ারে বসে ঢুলছিলেন। মনোরম স্বামীর জন্তে দাড়িয়ে আছেন অপেক্ষা করে। ও বেলা সত্যিই কিছু ছিল না খেতে দেবার । ভংসনার স্বরে কথা বলেচেন । দুপুরে সেই দুঃখ মনে বড় বেজেচে । একটু চা দিতেও পারেন নি । নারাণ মাস্টার বলেন,—অত হাসি-হাসি মুখ কেন ? কি খেতে দিচ্ছ। মনোরমা বলেন,—হাত পা ধুয়ে নাও, এসো। স্বামীকে জল এগিয়ে দেন। পাখার বাতাস করেন । - নারাণবাবু জিগ্যেস করেন—ননী আজ ইস্কুলে যায় নি কেন ? মনোরম মিথ্যে করে বলেন—পেটের অস্থখ হয়েছিল। কিন্তু তা নয়, ননীমাধব অত্যন্ত অবাধ্য প্রকৃতির ছেলে, এ বয়সে অনেক রকম ছল-চাতুরি শিখেচে । ভাজ মাসে বিলে জল বেড়েচে । সেখানে মাছ ধরতে গিয়েচে, পাড়ার দুই ছেলেদের সঙ্গে। ,