পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণাস্কুর &?? সকালে উঠে স্কুলে গেলাম ও শনিবার সকালে ছুটির পরেই বামঃ এলাম। অনেকক্ষণ ঘুমুবার চেষ্টা করা গেল। আন্দাজ চারটার সময় উঠে হারিসন রোড দিয়ে যাচ্ছি—শীতল পেছন থেকে ডাকলে ও একখানা পত্র দিলে। একটা সভা আছে ওদের বাড়ি—আমি সভাপতি। প্রথমে গেলাম হেঁটে “শনিবারের চিঠি’র আপিসে—সেখানে Copy দিয়ে সোজা হাটতে হাটতে (খুকীকে যে পথ দিয়ে ইটিয়ে নিয়ে গেছলাম সেই পথটা ধরে) বিডন স্কোয়ার। সেখানে একটা বেঞ্চির উপর বসে কত কথা ভাবলাম। মারের পোড়া সেই সজনে গাছটার কথা এত যে মনে হয় কেন ? মনে হল, যে জীবনটায় আর কখনো ফিরবে না—যা শেষ হয়ে গিয়েচে, ওই সজনে গাছটা এখনও কার ফিরবার আসায় সেই দিনগুলির মত পাতা ছাড়চে, ফুল ফোটাচ্চে—ডাটা ফলাচ্চে—কে এসে ভোগ করবে ? সন্ধ্যার ধুসর আকাশ– দু-চারটে তারা—'জনতার মাঝে জনগণ পতি’ গানটাও আবার মনে এল—আকাশের তারাদের দিকে চাইলেই ওই অপূর্ব ভাবটা হয়। তারপর উঠে ওদের বাড়ি গেলাম। মন্মথদের বাড়ি সভা হল । আমায় করলে সেক্রেটারী। সভা ভঙ্গের পরে বিভূতি গলা জড়িয়ে ধরে বললে, এখানে রাত্রে থেয়ে যাবেন । তারপরে লাল ঘরে অনেকক্ষণ আড়া হল। পড়বার ঘরে তারপরে বিভূতি কাছে বসে খাওয়ালে। পুরানো দিনের গল্প হল, সব চেয়ে কথা উঠল—‘পুত্তলিকা পুত্তলিকা সে কথা হোল । তারপর রিক্সা করে মাঘী পূর্ণিমার জ্যোৎস্না-রাত্রে পুরনো দিনের মত বাসায় ফিরলাম—সেই প্রতাপ ঘোষের বাড়ির সামনে দিয়ে, থানাটার পাশ দিয়ে। একটা কথা লিখতে ভুলে গিয়েচি, আজ বিকালে প্রবাসী আফিসেও Sir P. C. Roy-এর সঙ্গেও দেখা করেছিলাম। রবিবারে প্রসাদ এল । বেশ মাথায় বড় হয়েচে—সেই ছোট প্রসাদ আর নেই। তাকে দেখে এমন স্নেহ একটা হল । আমার নাম উঠলেই এখনও সকলে কঁাদে–চাপাপুকুরের বড় মাসিম কাদেন, এই সব কথাও বললে। একটা চাকরির কথা বললে । তারপর আমার নাম এখন প্রায়ই সকলে করেন, সে কথাও বললে। তারপর সে চলে গেল । আমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েচি, নীরদবাবু এলে ডাকচেন। দুজনে দমদমা গেলাম—মুশীলবাবু শাস্তিকে পড়াচ্ছিলেন—দুজনেই বাইরে এলেন। গল্পগুজব হল—মাঠে বসে চা খাওয়া গেল। আমরা পাচটার সময়ে বেরিয়ে শরদিন্দুবাবু ও করুণাবাবুর পাটিতে এলাম। নরেন দেব, অচিন্তা, প্রবোধ সাম্যাল, রমেশ বক্ষ—সবাই এল। খুব খাওয়া-দাওয়া হল। প্রচুর খাওয়া। নরেন দেব সন্দেশ খেতে খেতে মুখ লাল করে ফেলে অবশেষে যখন আরও খেতে অনুরুদ্ধ হলেন—মরীয়া হয়ে বললেন, সন্দেশটা ভালো নয়। আমরা বেরিয়ে শেয়ালদা স্টেশনে এসে সুশীলবাবুকে তুলে নিয়ে নীরদবাবুর গাড়িতে নিউ মার্কেটে গেলাম। কথা রইল বৃহস্পতিবারে ‘অপরাজিও পড়া হবে দমদমার বাগান-বাড়িতে। Wide World কিনে রাতে বাসায় ফিরলাম।