পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণাঞ্চুর ২১১ আমি আর নীরদবাবু মোটরে ফিরেছি। আজ এইমাত্র সাহেবের ওখান থেকে আসছি। সাহেব একটু দমে গিয়েচে–আমি ফণিবাবুর সঙ্গে ওটা মিটয়ে ফেলতে বললুম। কনভেণ্ট রোডটা অন্ধকার, এখানে-ওখানে যুঁই ও মালতীর সুগন্ধ, আজ আকাশ বেশ পরিষ্কার, নক্ষত্রে ভর। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলুম সাহেবের হাঙ্গামাটা ধেন মিটে যায়। একটা কথা মনে হচ্চে। মানুষের মনের ব্যাপকতা যত বাড়বে ততই সে পূর্ণ মন্থয়ত্বকে লাভ করবে। এমন সব মানুষ জীবনে কতই দেখলাম তাদের মনের সতর্কত, চৈতঙ্গের ব্যাপকতা বড়ই কম। এত কম যে আহার-বিহার ও অর্থোপার্জনের বাইরে ম্বে আর কিছু আছে, তা তারা ভাবতে পারে না। জ্ঞান বল, বিজ্ঞান বল, আট বল, সাহিত্য বল—এ সবের কোনো মূল্য নেই তাদের কাছে। এমন কি স্নেহ, প্রেম, কল্পনা, বন্ধুত্ব, এ সবও তাদের অজ্ঞাত—loyalty-কে তারা ভীরুতা ভাবে, স্নেহকে দুর্বলতা ভাবে। ফণিবাৰু একজন এই ধরনের মানুষ। এ সব লোকের নিবুদ্ধিত আমি বরদাস্ত করতে পারি নে একেবারেই। মূর্খতারও একটা সীমা আছে, এদের তাও নেই। সে যাক। এই চৈতন্তের ব্যাপকতার কথা বলছিলাম। এই মুক্ত প্রকৃতি, সবুজ ঘাসেমোড়া ঢালু নদীতীর, কাশবন, শিমূলবন, পাখীর ডাক-নীল পর্বতমালা, অকুল সমুদ্র, অজানা মহাদেশ–এই হাসিমুখ বালক-বালিকা, মুন্দরী তরুণী, স্নেহময়ী পত্নী, উদার বন্ধু, অসহায় দরিদ্রদল,—এই বিরাট মানবজাতির অদ্ভূত ইতিহাস, উত্থানপতন, রাজনীতির ও সমাজনীতির বিবর্তন, এই বিরাট নক্ষত্রজগৎ, গ্রহ, উপগ্রহ, নীহারিক, ধূমকেতু, উল্কী-জানাঅজানা জাগতিক শক্তি,—এই X-ray, foss, invisible rays, high penetrating radiation,—ওই মৃত্যুপারের দেশ, মৃত্যুপারের বিরাট জীবন—এই রহস্তে স্পদমান, অসীম, অদ্ভুত জীবনরহস্ত-এই সৌন্দর্য, এই বিরাটত, এই কল্পনার মহনীয়ত,—এসবে যারা মুগ্ধ না হয়, গরু-মহিষের মত ঘাস-দানা পেলেই সন্তুষ্ট থাকে, যারা এই রহস্যময় অসীমতার সম্বন্ধে অজ্ঞ, নিদ্রিস্ত ও উদাসীন রইল—সে হতভাগ্যগণ শাশ্বত ভিখারী—তাদের দৈষ্ট কে দূর করতে পারবে ? মাছুষের মত মৃত উদার হবে, যত সে নিজের চৈতগুকে বিশ্বের সবদিকে প্রসারিত করে দিতে পারবে, অণুর চেয়ে অণু, মহানের চেয়েও মহান বিশ্ববস্তুর প্রতি আত্মবুদ্ধিকে যত জাগ্রত করে তুলতে পারবে—লে শুধু নিজের উপকার করবে না, নিজের মধ্য দিয়ে সে শঙাৰীর সঞ্চিত অন্ধকারজাল ও জড়তাকে প্রতিভার ও দিব্যদৃষ্টির আলোকে প্রসারিত করে দিয়ে স্বাবে। সেই সত্য—সত্য নিত্যকালের মশলচি। সেদিন চারু বিশ্বাসের বাড়িতে অনেক রাত পর্যন্ত মিটিং হল। রাত দশটার পরে সেখান থেকে রওনা হয়ে আসতে গিয়ে লাউডন স্ট্রীটের মোড়ে একটা টারার গেল ফেটে। মৌলালীর মোড়ে আবার মহরমের বেজায় ভিড়। অনেক কষ্ট্রে রাত্রে বাড়ি পৌঁছলাম। ভোরে স্নান সেরে বসে আছি নীরদবাবু গাড়ি নিয়ে এলেন । চা পান করে দমৃদ থেকে