পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণাস্কুর ૨૭છે অবগু একথা ঠিক,এমন ঘন সবুজ ও নিবিড় বনসম্পদ C. P. অঞ্চলের নেই—সে হিসেবে বাংলাদেশের তুলনা হয় না ওসব দেশের সঙ্গে ; কিন্তু ভূমিসংস্থান বিষয়ে বাংলা অতি দীন। জলকাদা, ডোবা, জল, ugly জঙ্গল,—এ বড় বেশী ! লোকেও ভূমিশ্ৰী বর্ধিত করতে জানে না, নষ্ট করতে পারে। নানা কারণে বর্ষাকালে বাংলাদেশ আদৌ ভাল লাগে না । আবার খুব ঘন বর্ষায় খুব ভাল লাগে—যেমন শ্রাবণ-ভাদ্র মাসের অবিশ্রাস্ত বর্ষণের দিনগুলিতে, যপন জলে থৈ-থৈ করে চারিধার। শেষ শরতের এসব বর্ষার সৌন্দর্য নেই, কিন্তু অস্ববিধে ও শ্ৰীহীনতা যথেষ্ট। গাছপালায় মনকে বড় চাপা দিয়ে রাখে। এবার কলকাতায় বড় ভাল লাগচে । কাল সাহেবের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েচি সারাদিন । সকালে বিশ্বনাথের মোটরে গোপালনগর গিয়েছিলাম—তারপর লাঙ্গলচষার প্রতিযোগিতা হল, ছেলেদের দৌড় হল—তারপর বিকেলে বেলেডাঙ্গা গেলাম। সেখানে একটা ডাব খাওয়া গেল—স্কুলে যুগল শিক্ষক এল। দেশ, খয়রামারির মাঠ এত ভাল লাগচে এবার । কাল হারাণ চাকলাদার মহাশয়ের ছেলের কৃষিক্ষেত্র দেখতে গিয়েছিলাম--মাঠের মধ্যে ফুলের চাষ করেচে–বেশ দেখাচ্চে। একটা ঘাড়া গাছের কুঞ্জবন বড় সুন্দর। এবার জ্যোৎস্না খুব চমৎকার, শীতও বেশ । রোজ খয়রামারির মাঠে বেড়াই। আজ এক যাবো একল না গেলে কিছু হয় না। রাজনগরের বটতলায় রোজ বেড়াতে যাই। সামনে অপরূপ রঙে রঙীন সুর্য অস্ত যায় দিগন্তের ওপারে, নি:শব্দ, নিস্তব্ধ চারিদিক—মটির সুঘ্ৰাণ স্মরণ করিয়ে দেয় ইসমাঈলপুরের জনহীন চড়ায় এমন সব শীতের সন্ধ্যা, কত সুদীর্ঘ অন্ধকার রীত্রি, কত কুষ্ণ নিশীথিনীর শেষ যামের ভাঙা চাদের জনমানবহীন বনের পেছনে অস্ত যাওয়া, কত নীল পাহাড় ঘেরা দিকচক্রবাল, বিষম শীতের রাত্রে ঘনোরী তেওয়ারীর মূপে অদ্ভূত গল্প শোনা অগ্নিকুণ্ডের চারিধারে বসে বসে। সে সব দিন আজকাল কতদূরের হয়ে গেছে। আজ নববর্ষের প্রথম দিনটাতে সকালে নীরদবাবুদের সঙ্গে বহুকাল পরে বেলুড় গিয়েছিলাম। পেছনের ছাদটীতে বসে আবার পুরনো দিনের মত কত গল্প করলাম। পেছনের ছাদটা, বেলুড়ের বাড়ির চারিপাশের বাগান এত ভাল লাগল। ভেবেছিলাম এখানে আর আসা হবে না। সেই বেলুড়ে আবার যখন আসা হল,—বিশেষ করে সেই শীতকালেষ্ট, যে শীতকালের রাত্রির সঙ্গে বেলুড়ে যাপিত কত রাত্রির মধুর স্থতির যোগ রয়েচে–তখন জীবনের অসীম সম্ভাব্যতার উপলব্ধি করে মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না। সবাই মিলে আমরা চড়ষ্টভতি করে খেলাম নীচের রান্নাঘরটাতে। পেপের ডাল হাতে রদ্যুরে পিঠ দিয়ে বসলাম মালীর ঘরের সামনে, নীচের ছাদটার ফলসা গাছের ডালে সেই অপূর্ব অবনমন দেখলাম, যা ওই ফলস গাছটারই নিজস্ব, অন্ত গাছের এ সৌন্দৰ্যভঙ্গি দেখি নি কখনো—বাগানের পাচিলের ওদিকে