পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণাকুর २8७ কাল রাত্রে কি একটা কথা মনে এল—তার শষপরম্পরার মনে একটা অপূর্ব অনাস্থত ভাবের উদয় হোল। শস্বেরও ক্ষমতা আছে। প্রমণবাবু বলেন, নেই। এই নিয়ে প্রমখ চৌধুরীর সঙ্গে একদিন তর্ক করেছিলাম। আজ সকালে উঠে দেখি আকাশ একেবারে নির্মেঘ, নির্মল! দুখ হোল এই ভেবে যে আমিও বারাকপুর থেকে এলাম আকাশও গেল পরিষ্কার হয়ে । আজ এই জন্তে মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেল—বারাকপুরে এমন নীল আকাশটা দেখতে পেলাম না! খুকুর গাওয়া সেদিনকার গানটা বার বার মনে আসতে লাগল— মোর ঘুম ঘোরে এলে মনোহর নমোনমঃ, নমোনম:, নমোনমঃ কাল কলকাতা থেকে এসেছি,বেশ ভাল লাগল আজ সকালে খয়রামারির মাঠ ও বন । বনে সাদা সাদা সেই কুচো ফুল—শীতকালে অজস্র ফোটে এদেশের বনে জঙ্গলে—নদীয়া ও যশোর জেলার সর্বত্র দেখেছি এ সময়ে । কলেজে পড়বার সময় যখন প্রথম প্রথম মামার বাড়ি যেতাম —তখন ভবানীপুরের মাঠের ওদিকের পথ দিয়ে যাবার সময়ে দেখতাম একটা বড়ঝোপে ঐ ফুলটা ফুটে থাকত। কেলে এসেছিল আমার সঙ্গে আমার বাসায়—এক সঙ্গে বাক্স, বিছানা বেঁধে বাসা থেকে রওনা হলাম। অনেকদিন পরে ওকে দেখে মনে বড় আনন্দ পেয়েছি কাল । বড়দিনের ছুটিতে অনেককাল বারাকপুরে আসিনি—এবার এলাম। শীতের পল্লীপ্রান্তের কি শোভ, তা এতদিন ভুলে ছিলাম। বিকেলে আজ যখন বেলেডাঙ্গা বেড়াতে গেলাম— বনের কোলে সর্বত্র ফুটন্ত ধুর ফুলের প্রাচুর্য ও শোভা দেখে মনে হোল, সেদিন মনি বোসের আড্ডায় যারা বলছিল যে, বাংলাদেশের বনে ফুল তেমন নেই, তারা বাংলাদেশ সম্বন্ধে কতটুকু জানে ? ক্রোকাস, মার্গারেট কি কর্ণফ্লাওয়ার এখানে ফোটে না বটে—কিন্তু যে দিকে চোখ তাকাই, সে দিকেই এই যে প্রশ্বট নীলাভ শুভ্রবর্ণের ধুর ফুলের অপূর্ব সমাবেশ–এর সৌন্দর্য কম কিলে ? কি প্রাচুর্য এই ফুলের—ঝোপের নীচেও যে ফুল— সেখান থেকে থাকে থাকে উঠেচে ঝোপের মাথা পর্যন্ত, আগা গোড়া ভর্তি। এত নীচু ও অত উচুতে ও ফুল কি করে গেল তাই ভাৰি। ঋতুতে ঋতুতে কত কি ফুল ফোটে আমাদের দেশের বনে ঝোপে, আমার দুঃখ হয় এর সন্ধানও কেউ রাখে না, নাম পর্যন্ত জানে না। অথচ সুন্দরকে যারা ভালবাসে– তার বাংলার নিভৃত মাঠবনঝোপের এই অনাদৃত অথচ এই অপূর্ব মুনীর ফুলকেকখনো ভুলবে না। বেলেডাঙ্গার গিয়ে সেক্রীর দোকানে বলে গল্প করলাম। ছোট খড়ের ঘরে দোকান। বাশের বেড়া। ননী সেক্রার মেজছেলে বিড়ি বাধ চে–ত্তার দোকান ঘরের সামনে একটা নতুন কামারদোকান হয়েচে—সেখানে হাল পোড়াচ্ছে। হালের চারধারে ঘুটের সনসনে আগুনে অনেক লোক বসে আগুন পোয়াচ্চে। দোকানের পিছনের বেড়ায় ধুরফুল ফুটে আছে। যেদিকে চাই সে দিকেই এই ফুল—এক জায়গায় মাঠের মধ্যে থাকে থাকে কতদূর