পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ኟ®b” বিভূতি-রচনাবলী উপন্যাস হইতে নানা গল্প বলিত। রাত্রির পর রাত্রি তখন এসব গল্প শুনিয়া মুশীলা মুগ্ধ হইয়া বাইত। জনহীন দেশের মধ্যে যেখানে শুধু জীন-পরীদের জগৎ, খেজুর বনের মধ্যে ঠাণ্ড জলের ফোয়ার হইতে মণিমুক্ত উৎক্ষিপ্ত হইতেছে.পথহীন দুরন্ত মরুপ্রান্তরে মৃত্যু যেখানে শিকার সন্ধানে ওক্ত পাতিয়া বসিয়া আছে, সমুদ্রের ঝড়-তরুণ শাহজাদাগণের দৈত্যসস্কুল অরণ্যের মাঝখান দিয়া নিৰ্ভীক শিকারযাত্রা–এসব শুনিতে শুনিতে তাহার গা শিহরিয়া উঠিত, ঘুম ভাঙিলে ঘরের মধ্যে অর্ধাত্রির অন্ধকার বিকটাকার জীনদেহের ভিড়ে ভরিয়া গিয়াছে মনে করিয়া ভয়ে সে স্বামীকে জড়াইয়া ধরিত। প্রচীন যুগের তরুণ শাহজাদীদের কল্পনা করিতে গির অজ্ঞাতসারে সে নিজের স্বামীকে যাত্রার দলের রাজার পোশাক পরাইয়া দূরদেশে বিপদের মুখে পাঠাইত, শাহজাদাদিগের দুঃখে তাহার নিজের স্বামীর উপর সহায়ভূতিতেই তাহার চোখে জল আসিত । এই রকমে গল্প শুনিতে শুনিতে অদৃপ্ত নায়কনায়িকাদের গুণ দৃশ্যমান গল্পকারের উপরে প্রয়োগ করিয়া যে স্বামীকে প্রথম ভালবাসে। সে আজ পচি ছয় বৎসরের কথা, কিন্তু সুশীলার এখনও সে ঘোর কাটে নাই। কিশোরী স্ত্রীর কথা উড়াইয়া দিল—হ্যা, এখন গল্প বলবো ! সমস্ত দিন খেটেখুটে এলাম, এখন রাত-দুপুরে বকবক করি আর কি। তোমাদের কি ? বাড়ি বসে’ সব পোষায়। অন্য মেয়ে হইলে চুপ করিয়া যাইত। মুশীলার মেজাজ ছিল একগুঁয়ে। সে আবার বলিল, তা হোক, একটা বলে, রাত এখন তো বেশী নয়. —না বেশী নয়—তোমার তো রাত কম বেশীর জ্ঞান কত । নাও, চুপচাপ শুয়ে পড় এখন• • • • • • মুশীলা এইবার জিদ ধরিল—বলো না একটা, ছোট দেখেই না হয় বলো—এত করে বলছি একটা কথা রাখতে পারো না ? কিশোর বিরক্ত হইয়া বলিল—আঃ! এ তো বড় জ্বালা হ'ল! রাতেও একটু ঘুমুবার যো নেই—সমস্তদিন তো গলাবাজিতে বাড়ি সরগরম রাখবে, রাত্তিরটাও একটু শান্তি নেই ? এইটাই ছিল সুশীলার ব্যথার স্থান। স্বামীর মুখে একথা শুনিয়া সে ক্ষেপিয়া গেল—বেশ করি গলাবাজি করি, তাতে অসুবিধা হয় আমাকে পাঠিয়ে দাও এখান থেকে—রাত দুপুর করলে কে । নিজে আসবেন রাত দুপুরের সময় আড়া দিয়ে-কে এত রাত পর্যন্ত ভাত নিয়ে বসে থাকে । নিজেরই দেহ, পরের আর তো দেহ না ! খেটেপুটে এসে একেবারে রাজা করেছেন আর কি ? নিজের খাটুনিটাই কেবল..... কিশোরী ঘুমাইবার চেষ্টা পাইতেছিল, স্ত্রীর উত্তরোত্তর চড়া মুরে তাহার ধৈর্যচুক্তি ঘটিল —উঠিয়া বসিয়া প্রথমে সে স্ত্রীর পিঠে সজোরে ঘাঁ-কতক পাখার বাট বসাইল, তাহার পর তাহার চুলের মুঠি ধরিয়া বিছানার উপর হইতে নামাইরা ধাক্কা মারিয়া ঘরের বাহির করিয়া দিল, বলিল—বেরো, ঘর থেকে বেরো, আপদ—দূর হ--রাত দুপুরেও একটু শান্তি নেই—যা বেরো-যেখানে খুশি ६ों• • • • • • ঘরের আলোর কাছে আসিয়া কিশোরী দেখিল স্ত্রী দুই হাতের নখ দিয়া আঁচড়াইয়া