পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৌরীফুল ২৬৩ কথা শেষ না করিয়াই সে দুই হাতে সঙ্গিনীর গলা জড়াইয়া ধরিল, সঙ্গে সঙ্গে তাহার কালো চোখ দুটি জলে ভরিয়া গেল। কলিকাতার বউ এই অদ্ভুত প্রকৃতির সঙ্গিনীর অশ্রশ্লাবিত মুন্দর মুখখান বার বার সম্বেহে চুম্বন করিল—তারপর দুজনেই চোখের জলে ঝাপসাদৃষ্টি লইয়া দুজনের কাছে বিদায় লইল ।... দিন কতক কাটিয়া গেল। কিশোরী বাট নাই, কি-একটা কাজে অল্প গ্রামে গিয়াছে, ফিরিতে দু'একদিন দেরী হইবে। মোক্ষদা সকালে উঠিয়া জমিদার-গৃহিণীর আহানে তাহার সাবিত্রীব্রত-প্রতিষ্ঠার আয়োজনে সাহায্য করিতে চৌধুরী-বাড়ি চলিয়া গেলেন। যাইবার সময় বলিয়া গেলেন—বউমা আমার ফেরবার কোনো ঠিক নেই, রান্না-বান্না করে রেখো, আমি আজ আর কিছু দেখতে পারব না, চৌধুরী-বাড়ির কাজ-কখন মেটে বলা যায় না। একথা মোক্ষদার না বলিলেও চলিত। কারণ ভোরে উঠিয়া বাসন-মাজা, জল-তোলা হইতে আরম্ভ করিয়া এ সংসারের সমস্ত কাজের ভারই ছিল সুশীলার উপর। এ সংসারে কিশোরীর বিবাহের পর কোনো দিন বি-চাকর প্রবেশ করে নাই—যদিও পূর্বে বাড়িতে বরাবরই একজন করিয়া ঝি থাকিত। মুশীলার খাটুনিতে কোন ক্লাস্তি ছিল না, খাটিবার ক্ষমতা তাহার যথেষ্ট ছিল—যখন মেজাজ ভাল থাকিত, তখন সমস্ত দিন নীরবে ভূতের মত খাটিয়াও সে বিরক্ত হইত না । শাশুড়ী চলিয়া গেলে অন্তান্ত কাজকর্ম সারিয়া মুশীলা রান্নাঘরে গিয়া দেখিল একখানিও কাঠ নাই। কাঠ অনেক দিনই ফুরাইয়া গিয়াছে, এ-কথা সুশীলা বহুবার শ্বশুরকে জানাইয়াছে। রামতন্ত্র মধ্যে মধ্যে মজুর ডাকাইয়া কাঠ কাটাইয়া লইতেন, এবার কিন্তু অনেক দিন হইল তিনি আর এদিকে দৃষ্টি দেন নাই, কিশোরীর দোষ নাই, কেন না সে বড় একটা বাড়িতে থাকিত না, সংসারের সংবাদ তেমন রাখিতও না । আসল কথা হইতেছে এই যে রান্নাঘরের পিছনে খিড়কির বাহিরে অনেক শুকনা বাঁশ ও ডালপালা পড়িয়া আছে—মুশীলা রান্না চড়ানোর পূর্বে বা রান্না করিতে করিতে প্রয়োজন মত এগুলি দা দিয়া কাটিয়া লইয়া কাজ চালাইত। রামতন্থ দেখিলেন, কাজ যখন চলিয়া যাইতেছে তখন কেন অনর্থক কাঠ কাটিবার লোক ডাকিয় আনা—আনিলেই এখনই একটা টাকা খরচ তো ? পুত্রবধূ বকিতেছে বকুক, কারণ বকুনিই উহার স্বভাব। কাঠ নাই দেখিয়া সুশীলা অত্যন্ত চটিয়া গেল। এদিকে বাড়িতেও এমন কেহ নাই যাহাকে বকিয়া গায়ের ঝাল মিটার, কাজেই লে আপন মনে চীৎকার করিতে লাগিল— পারবো না, রোজ রোজ এমন করে সংসার করা আমার দিয়ে হয়ে উঠবে না—আজি দু'মাস ধরে বলছি কাঠ নেই, কাঠ নেই-এদিকে রান্নার বেলা ঠিক আছেন সব, তার একটু এদিকওদিক হবার যে নেই—কি দিয়ে রাধবে ? হাত পা উকুনের মধ্যে দিয়ে রাধবে নাকি ? রোজ রোজ কাঠ কাটো, কেটে রাধোঁ--অত মুখে আর কাজ নেই—থাক্লো ছাড়ি পড়ে', "शिनि यथन श्रांजळदन, उिनि ७९न करब्र' cनप्यन... রাধিবার কোন আয়োজন সে করিল না। খানিকটা বসিয়া বসিয়া তাহার মনে হইল