পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬৬ বিভূতি-রচনাবলী মার আরও চলিত, কিন্তু রামতন্তু তামাক খাইতে খাইতে ছেলের কাও দেখিয়া হা হা করিয়া আসিয়া পড়িলেন। পাশের বাড়ির বউটি তখন শ্বশুর ওস্বামীকে খাওয়াইয়া সবে নিজে খাইতে বসিতেছিল,হঠাৎ এ-বাড়ির মধ্যে মারের শব্দ শুনিয়া সে খাওয়া ফেলিয়া মুশীলাদের খিড়কিতে ছুটিয়া আলিয়া উকি মারিয়া দেখিল—সুশীল উঠানে দাড়াইয়া আছে; সর্বাদে ধূলা, বাটুনার পাত্রের উপর পড়িয়া গিয়াছিল, কাপড়ে চোপড়ে হলুদের ছোপ ; মাথার খোপা একধারে খুলিয়া কতক চুল মুখের উপর কতক পিঠের উপর পড়িয়াছে ; গাঙ্গুলী-বাড়ি হইতে দুটাে ছেলে ব্যাপার দেখিবার জন্ত চুটিয়া আসিয়াছে, আরও দু-একজন পাডার মেয়ে সামনের দরজা দিয়া উকি মারিতেছে-ওদিকে পাচিলের উপর দিয়া মুখ বাড়াইয় তাহার নিজের শ্বশুর রামলোচন মজা দেখিতেছেন। চারিদিকের কৌতুহলদৃষ্টির মাঝখানে, সর্বাঙ্গে হলুদের ছোপ ও ধূলিমাখা বিস্রস্তকুন্তল, অপমানিতা দিদিকে অসহায়ভাবে উঠানে দাড়াইয়া থাকিতে দেখিয়া তাহার বুকের মধ্যে কি-রকম করিয়া উঠিল—কিন্তু যে একে ছেলেমাহুষ তাহাতে অত্যন্ত লজ্জাশীল, শ্বশুর ভামুর এবং এক-উঠান লোকের মধ্যে বাড়ির ভিতর ঢুকিতে না পারিয়া প্রথমটা সে খিড়কির বাহিরে আকুলি-বিকুলি করিতে লাগিল, কিন্তু গাজুলী-বাডির প্রৌঢ় গাঙ্গুলী মহাশয়ও যখন হক হাতে—কি হে রামতনু, বলি ব্যাপারখানা কি শুনি—বলিয়া বাড়ির মধ্যের উঠানে আসিয়া হাজির হইলেন, তখন সে আর থাকিতে না পারিয়া বাড়ির মধ্যে ঢুকিয়া পড়িল এবং সুশীলার হাত ধরিয়া খিড়কি-দোর দিয়া বাহিরে লইয়া গিয়াই হঠাৎ ফু পাইয়া কাদিয়া উঠিয়া বলিল— কেন ও-রকম করতে গেলে দিদিমণি, লক্ষ্মীটি, তখনই যে বারণ করলাম ?-- তার পরদিন দুপুরবেলা মুশীলা রান্নাঘরে রাধিতেছিল। কিশোরী খাইতে বসিয়াছে, মোক্ষদ ঠাকরুণ কি প্রয়োজনে রান্নাঘরে ঢুকিয়া দেখিলেন, মুশীলা পিছনে ফিরিয়া ভাত বাড়িতে বাড়িতে স্বামীর ডালের বাটিতে কি গুলিতেছে, পাশে একটা ছোট বাটি। মোক্ষদার কি-রকম সন্দেহ হইল, তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন—বউমা, তোমার বাটিতে কি ?— কি মেশাচ্ছ ডালের বাটিতে ? সুশীলা পিছন ফিরিয়াই শাশুড়ীকে দেখিয়া যেন কেমন হইয়া গেল। তাহার চোখমুখের ভাব দেখিয়া মোক্ষদার সন্দেহ আরও বাড়িল—তিনি বাটটা হাতে তুলিয়া লইয়া দেখিলেন তাহাতে সবুজ মত কি একটা বাটা। তিনি কড়াসুরে জিজ্ঞাসা করিলেন—কি বেটেছ এতে ? তিনি দেখিলেন পুত্রবধূ উত্তর দিতে পারিতেছে না, তাহার মুখ লাল হইয়া উঠিয়াছে। ইহার পর একটা ভয়ানক কাণ্ড ঘটিল। মোক্ষদা ঠাকরুণ বাটি হাতে-ওমা কি সর্বনাশ ! আর একটু হ’লেই হয়েছিল গো-বলিয়া উঠানে আসিয়া চীৎকার করিয়া হাট বাধাইলেন। কিশোরী দালান হইতে উঠিয়া আসিল, রামতনু আসিলেন, গাজুলী-বাড়ির মেয়েপুরুষ আসিল, আরও অনেকে আসিল ।