পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

woe 8 বিভূতি-রচনাবলী মহাপ্রাণ ধনীর জয়-গীতে নগর-পথ মুখরিত হতে লাগলো। কর্ণসেন ভাবলেন—এ কাজট বড় খারাপ হয়ে গেল দেখছি। তাই তো, কি করা যায় ! পরদিন তিনি শুনলেন, রুপর্ণ-ধনীর মহান দানের আদর্শে অকুপ্রাণিত হয়ে নগরের আর একজন ধনী বণিক তার বাড়িও রোগীদের জন্তে ছেড়ে দিয়েছেন। আনন্দ-কোলাহলে নগরে কান পাতা দায় হোল । অন্তান্ত বার সকল মহৎকার্যের অগ্রণী হতেন কর্ণসেন । তারই দেখাদেখি আপরে তার পথ ধরতো। এবার তিনি সে গৌরব থেকে বঞ্চিত হলেন। তার মনে হতে লাগলো—কই ! আমিই ধে তার চিহ্নিত ব্যক্তি, তা কই ? এতদিন ভুল বুঝেছি। কাজ করবেন ইচ্ছে করলে ভগবান পাষাণকেও গলিয়ে কাজ করতে পারেন । নইলে পরীক্ষিৎ ওই কন্নুষ, ও কিনা নিজের বাড়ি... কর্ণসেনের অংস্কার চুর্ণ হেল। তিনি ভাবলেন-ভগবানের কাছে চিহ্নিত অচিহ্নিত পাত্রাপাত্র নেই—সবাই সমান। আর আমিই বা এমন সাধুব্যক্তি কই ? আমি যে ত্যাগ স্বীকার করতে পেরে উঠলাম না, অপরে তা তো করলে ! মনে মনে নিজেকে ত্যাগী পরার্থপর বলে, যে আত্মপ্রসাদ তার মনে জাগতো, তা একেবারে দূর হয়ে গেল। নিজের প্রতি একটা অশ্রদ্ধাই তার এসে পড়তে লাগলো। এদিকে প্রতিদিনই শোনা যেতে লাগলো, মহাপ্রাণ দাতাগণের পথ অনুসরণ করে আরও অনেক লোকে তাদের বাড়ি ছেড়ে দিচ্ছেন। কর্ণসেনের বন্ধু-বান্ধবের এসে তাকে চুপি চুপি জানিয়ে গেল, তিনিও যেন শীঘ্র একটা কিছু করেন। লোকে এবার তাকে নীরব থাকতে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছে। পূর্বে সকল সৎকাজই তিনি সকলের আগে করতেন, এবার তিনি অবিলম্বে একটা কিছু না করলে দুনাম রটবে। কর্ণসেন ডাবলেন—পরের দেখাদেখি এবং লোকের কাছে দুর্নাম রটবার ভয়ে তাকে দান করতে হবে! কি গৌরব সে দানের ? আর যদিও বাইরের লোকে তার গৌরব করতে পারে কিন্তু মনে মনে তিনি তো বেশ বুঝতে পারছেন এ দানে তার কিছুমাত্র মহত্ব নেই। যদি তাকে দান করতে হয় তো সে দায়ে পড়ে, মান বঁাচাবার জন্তে । এ দায়ের কথা মনে হলেই যে তার মন নিচু হয়ে যাবে! অক্ষান্ত বারের মত সে উচ্চ আত্মপ্রসাদ কই এখানে ? কর্ণসেন মনে মনে মহা চটে গিয়ে ঠিক করলেন, তিনি কিছুই করবেন না। লোকে যা বলে বলুক, যে দান স্বার্থপ্রস্থত, যার মূলে লোকের কাছে নিজের মান বাচানোর কথা নিহিত, এমন দান ভিনি কখনো করবেন না। শয্যায় শুয়ে অনেক রাত্রে কর্ণসেনের ঘুম ভেঙে গেল! জানালার বাইরে চেয়ে দেখলেন, দূর আকাশের নীলসাগরের পরে একটি নক্ষত্ৰ যেন তার দিকেই চেয়ে জলছে, প্রলয়কালের বিশ্বের জনস্ত-জলময়ী প্রসারভার মাঝখানে অনাদিকারণ প্রজাপতির চিরজাগ্রত নেত্র-জ্যোতির মত্ত ...আকাশের নিথর নীল বুকে শুভ্ৰ-জ্যোৎস্নার তরঙ্গগুলো যেন তারই স্বজন বীণার মৰ্মস্পর্শী নীরব রবে কেঁপে কেঁপে উঠছে।.