পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

yo বিভূতি-রচনাবলী নিস্তারিণী বলিল, তাই তো শুনছি। কাল চিঠি এসেচে—শুধু মেজৰাৰু আর বৌরানী আসবেন, লীলা দিদিমণি এখন আসবে না—ইস্কুলের এগ জামিন। সেই বড়দিনের সময় তবে আসবে। গিল্পীমা বলছিলেন বিকেলে— t অপুর মনটা একমুহূর্তে দমিয়া গেল। লীলা আসিবে না। বড়দিনের ছুটিতে আসিলেই বা কি—সে তো তাহার আগে এখান হইতে চলিয়া বাইবে। যাইবার আগে একবার দেখা হইরা ঘাইত এই সময় আসিলে। কতদিন সে আসে নাই। তাহার মা বলিল, বেশ ছেলে তো, কোথায় ছিলি রাত্তিরে ? আমার ভেবে সারারাত চোখের পাতা বোজে নি কাল । অপু বলিল, রাত বেশী হয়ে গেল, ফটক বন্ধ ক’রে দেবে জানি, তাই আমার এক বন্ধু ছিল, আমার সঙ্গে পড়ে, তাদেরই বাড়িতে— । পরে হাসিয়া ফেলিয়া বলিল, না মা, সেখানে পানের দোকানে একটা কেরোসিন কাঠের বাক্ষ্ম পড়ে ছিল, তার উপর শুয়ে— সর্বজয়া বলিল ওমা, আমার কি হবে । এই সারারাত ঠাণ্ডায় সেখেনে—লক্ষ্মীছাড়া ছেলে, যেও তুমি ফের কোনদিন সন্দ্যের পর কোথাও-তোমার বড় ইরে হয়েছে, না? অপু হাসিয়া বলিল—তা আমি কি ক’রে ঢুকবো বলে না ? ফটক ভেঙে ঢুকবো ? রাগটা একটু কমিয়া আসিলে সর্বজয়া বলিল—তারপর জ্যাঠামশায় তো কাল এসেচেন । তুই বেরিয়ে গেলে একটু পরেই এলেন, তোর খোজ করলেন, আজ ওবেলা আবার আসবেন। বললেন, এখেনে কোথায় তার জানাশুনো লোক আছে, তাদের বাড়ি থাকবেন। এদের বাড়ি থাকবার অসুবিধে—পরশু নিয়ে যেতে চাচ্চেন। অপু বলিল, সত্যি ? কি কি বল না মা, কি সব কথা হ’ল ? আগ্রহে অপু মায়ের পাশে চৌকির ধারে বসিয়া পড়িয়া মায়ের মুখের দিকে চাহিল। দু'জনের অনেক কথাবার্তা হইল। জ্যাঠামশায় বলিয়াছেন, তাহার আর কেহ নাই, ইহাদেরই উপর সব ভার দিয়া তিনি কাশী যাইবেন । অনেকদিন পরে সংসার পাতিবার আশায় সর্বজয়া আনন্মে উৎফুল্ল। ইহাদের বাড়ি হইতে নানা টুকটাক্ গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় জিনিস নানা সময় সংগ্ৰহ করিয়া সযত্বে রাখিয়া দিয়াছে। একটা বড় টিনের টেমি দেখাইয়া বলিল, লেখেনে রান্নাঘরে জালবো—কত বড় লম্পট দেখেচিল । ছপয়সার তেল ধরে। দুপুরের পর সে মায়ের পাতে ভাত খাইতে বসিয়াছে, এমন সময় দুয়ারের সামনে কাহার ছায়া পড়িল। চাহিয়া দেখিয়া লে ভাতের এাল আর মুখে তুলিতে পারিল না। লীলা । 壶 পরক্ষণেই লীলা হাসিমুখে ঘরে চুকিল ; কিন্তু অপুর দিকে চাছিয়া সে যেন একটু অবাক হইয়া গেল। অপুকে যেন আর চনা বায় না—সেতে দেখিতে বরাবরই সুন্দর,কিন্তু এই দেড় বৎসরে কি হইয়া উঠিয়াছে সে ? কি গায়ের রং, কি মুখের ঐ,কি মুন্সর স্বপ্ন-মাথা চোখদুটি । লীলার কেন একটু লজ্জা হুইল। বলি, উ, আগের চেয়ে মাখাতে কতবড় হয়ে গিয়েচ।