পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৌরীফুল \రిఫిక খড়ের বড় বড় ঘর, সামনের উঠানে বড় বড় গোটাকতক গোলা, দক্ষিণে একটা পুকুর, একটা বাতাবীলেবু গাছ ও গোটাকঙক নারিকেল গাছ। পাত্রীর দিদিম বাড়ির কত্রী ; তিনিই গ্রামসুদ্ধ সকলকে আদর করিয়া বসাইলেন, জলযোগের ব্যবস্থা করিলেন । ক্রমে বেলা চড়িয়া গেল। মধ্যাহ্ন ভোজন মিটিতে দুইটা বাজিল। ছেলেটি একটু অবাক হইল, ইহাদের ভোজনের পরিমাণ দেখিয়া। একটি পনেরো বছরের বালকও যাহা খাইল, তাহা তার নিজের তিন বেলার খোরাক। বেলা যখন পাচটা, তখন কৈলাস ভট্চায আসিয়া বলিলেন—বাবাজী, ওঠে। একবার মেয়েটিকে দ্যাথো। বাবাজীই বলি, তোমার সঙ্গে তো সম্পর্কই বাধলো, মেয়ে দেখে অপছন্ম হবে না। তবে এ তো শহর বাজার নয়, একটু আধটু যা ফাট, তা তোমাকে শুধরে নিতে হবে বৈকি। এসে বাবাজী। আবার চাটুয্যে-বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপে অনেক লোক জড়ো হইয়াছে। গতিক দেখিয়া মনে হয়, আদ্যকার মত একটা উৎসবের ব্যাপার ইহীদের গ্রামে অনেককাল ঘটে নাই। অন্ততঃ আগন্তুক ছেলেটির তাঁহাই মনে হইল ; নতুবা গৃহস্থ-বাটতে মেয়ে-দেখানো-রূপ সামান্ত ব্যাপারে গ্রামসুদ্ধ লোকের এত উৎসাহ কেন ? মেয়ে দেখিয়া ছেলেটি সস্তুষ্ট হইল। বেশ স্বাস্থ্যবতী, রং খুব ফরসা ন হইলেও মানানসই —মুখী সুন্দর, বড় বড় চোখ। কেবল ইহাদের চুল বাধিবার ধরন সে পছনা করিল না। পাত-কাটা খোপা শহর হইতে কোন কালে উঠিয়া গিয়াছে, আর ইহার সেটাকে এখনও ফ্যাসান বিবেচনা করে! তা ছাড়া অত গহনা কেন গায়ে ? গহনার ভারে মেয়েটি যেন বিব্রত হইয়া পডিয়াছে ! দিদিম সজল চোখে বলিলেন—ওকে নাও গিয়ে দাদাভাই। ও আমার যেমন মেয়ে, তেমন মেয়ে এদিকে নেই, এ আমি বড় গলা করে বলতে পারি। ওরা আমাকে ফাকি দিয়ে চলে গেল, মেয়ে তখন তিন মাসের—সেই থেকে আমার কাছে মানুষ । আমারও তো ও-ছাড়া আর কেউ নেই, ওর বাবা কোনো খোজ নেয় না ; সে আবার বিয়ে করেছে ছেলেপূলেও হয়েছে, সে এদিক-মাড়ায় না। তোমার হাতে মেয়েটাকে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্দি হই—তারপর যা রইলো সবই তোমাদের। কর্তারা যা করে রেখে গিয়েছেন, তাতে চাকরি করে খেতে হবে না, আমাদের বাড়িতে চাকরি কখনো কেউ করে নি। কৈলাস ভট্চায বলিলেন—এ-গায়ে কখনও কেউ চাকরি করেছে বউ-ঠাকৃরুণ ? আপনাদের কর্তাদের কথা তো বাদই দিন, তারা তো ছিলেন গায়ের মালিক, মাথার মণি—আমাদের কর্তার, কি আমরা কখনো গায়ের বাইরে অন্ধের চেষ্টায় প। বাড়িয়েছি ? রমোঃ । এই যে দেখছে বাবাজী উত্তরে মাঠ এ সব লাথরাজ, একেবারে সেই রতনপুরের নীলকুঠি পর্যন্ত। তবে এদের বাড়িতে পুরুষ মানুষ নেই, এক বউ-ঠাকরণ আছেন, মেয়েমান্বষ—তাই চাষ বাস হয় না। নইলে ষাট সত্তর বিঘে খালে আমন ধানের জমি রয়েছে, দুটো বড় পুকুর রয়েছে —চাষ করলে ভাবনা কিসের ? এই দেখছে বটে খড়ের ঘর, এ গায়ে সকলেই এঁদের প্রজা।