পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক wర్సిరిసి আমাদের মন কেমন দমে গেল—যেন এখান থেকে পালাতে পারলেই বাচি। একটা ডোবার ধারে জনৈক গ্রাম্যবধূকে বাসন মাজতে দেখলুম। পথের ধারে অন্ধকার পুকুরটাসরু হাতদুটি ঘুরিয়ে মেয়েটি বাসন মাজচে, পরনে মলিন কাপড়, অথচ গায়ের রং দেখে মনে হয় সে উচ্চবর্ণের গৃহস্থের কুলবধু। বা লার মেয়েদের শত কষ্টের কথা মনে পড়ে গেল ওকে দেখে-বাংলার সমস্ত নিপীড়িত অভাগিনী বধূদের ও যেন প্রতিনিধি। এক জায়গায় একটা পাঠশালা বসেচে। তার একদিকে শিবমন্দির। পাঠশালার ছেলের ছুটির আগে সারবন্দী হয়ে দাড়িয়ে সমস্বরে নামত পড়চে । একটা ছেলেও স্বাস্থ্যবান নয়, প্রত্যেকের মুখ হলদে, পেট মোট—কারে গারে মলিন উড়ানি, কারো গায়ে ছেড়া জামা— প্রায় কারো পারে জুতো নেই। আমরা দাড়িয়ে দেখচি দেখে গুরুমশায় নিজে এগিয়ে এসে বললেন—আপনার কোখেকে আসচেন ? —বেড়াতে এসেচি কলকাতা থেকে । তিনি খুব আগ্রহের সুরে বললেন, আমুন না, বসুন, এই বেঞ্চি রয়েচে– নীরদের বসবার তত ইচ্ছে ছিল না হয়তো—কিন্তু আমার বড় ভালো লাগলো এই গুরুমশায়টি ও র্তার দরিদ্র পাঠশালা । কি জানি, হয়তো আমার বল্যের সঙ্গে এখানে কোন একটি গ্রাম্য পাঠশালার সম্পর্ক ছিল বলেই। নীরদকে টেনে নিয়ে এসে বসালুম পাঠশালার বেঞ্চিতে । গুরুমশায়ের বয়েস যাটের কাছাকাছি, মাথার চুল প্রায় সব সাদা, শীর্ণ চেহারা। পরনে আধময়লা ধুতি আর গায়ে হাতকাটা ফতুয়া । তিনি বসেচেন একখানা হাতলহীন চেয়ারে, চেয়ারখানার পিঠটা বেতের কিন্তু বসবার আসনটা কাঠের । মনে হয় সেটাও এক সময়ে বেতেরই ছিল, ছিড়ে যাওয়াতে সোজাসুজি কাঠের করে নেওয়া হয়েচে, হাঙ্গামার মধ্যে না গিয়ে । সেদিন ভারি আনন্দ পেয়েছিলুম এই পাঠশালায় বসে। আমরা বললুম—আপনার পাঠশালায় কত ছেলে ? —আজ্ঞে ত্রিশজন, তবে সবাই আসে না—জনকুড়ি আসে । —ছেলেদের মাইনে কত ? —চার আন, আয় ছ'আন—তা কি সবাই ঠিকমত দেয় ? তা হলে আর ভাবনা কি বলুন। গভর্নমেন্টের মাসিক সাহায্য আছে পাচ সিকে, তাই ভরসা। মাসে পাচলিকে আয়ের ভরসা কি সেটা ভালো বুঝতে না পেরে আমরা গুরুমশারের মুখের দিকে চাইলাম। কিন্তু লোকটা মনে হল তাতেই দিব্যি খুশী—যেন ও জীবনে বেশ একটু পাকাপোক্ত আয়ের দৃঢ় ভিত্তির ওপর বসে আছে নিশ্চিন্ত মনে। আমি বললুম—আপনার বাড়িতে ছেলেপুলে কি ? গুরুমশার হেসে বললেন—ত মা ষষ্ঠীর বেশ কৃপা। সাতটি ছেলেমেয়ে—দুটি মেরে