পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

w)88 বিভূতি-রচনাবলী —জেলে তাই কি ? আমার ওসব— —লা বাৰু, আমি হাতে করে দিতি পারবো না—তবে ওই কাটাল বাগানের মধ্যে টিউকল আছে—আপনি টিউকলে জল থেয়ে আমুন—একটা ঘটি নিয়ে যান, দিচ্ছি। ঝকঝকে করে যাজা একটা কাসার ঘটি লোকটা বাড়ির মধ্যে থেকে এনে দিলে। টিউকল অর্থাৎ টিউবওয়েলে জল খেয়ে আবার রাস্তা ইটি । গ্রাম আর বড় নেই, মাঠ আর বনঝোপ । হঠাৎ চারিদিক অন্ধকার করে মেঘ করে এল-নীল কালবৈশাখীর মেঘ-হয়তো ভীষণ ঝড় উঠবে। কিন্তু তখুনি কিছু হল না, মেঘট থমকে গেল আকাশে। মেঘের ছায়ায় ছায়ায় পথ বেশ চলতে লাগলুম। একজায়গায় একটা প্রকাণ্ড জিউলি গাছ। দিগন্তবিস্তীর্ণ মাঠের মধ্যে এই জিউলি গাছের দৃপ্ত আমাকে কি মুগ্ধই করলো। দাড়িয়ে রইলুম সেখানে অনেকক্ষণ। প্রকাও গাছের BB K BB BBS BB BBBBBBB BBBB BBBSBBB BBB BBBBB রাস্তার ধারের সাজানো পিচের মতে একরাশি আঠ ৷ যেন আমি বাংলা দেশে নেই, আফ্রিকার মত বন্ত মহাদেশের অরণ্যপথ ধরে কোন অজ্ঞাত মুদুর গন্তব্যস্থান অভিমুখে যাত্র করেচি। কি ভালোই যে লাগছিল! আউশ ধানের ক্ষেতে সবে কচি কচি সবুজ জাওলা দেখা দিয়েচে । চারা ধানগাছের এক ধরণের সুন্দর ভ্ৰাণ আসচে বাতাসে । খাওয়া-দাওয়ার কথা ভুলে গিয়েচি। বেলা এগারোটার কম হবে না কোন রকমে, কিন্তু সেজন্তে আমার কোন কষ্ট নেই। চারিধারে সবুজ আউশের জাওলা যেন বিরাট সবুজ মখমল বিছিয়ে রেখেচে পৃথিবীর কালো মাটির বুকে । নীলকণ্ঠ আর কোকিলের ডাক আসচে মাঠের চারিদিক থেকে—মেঘ থমৃকানো আকাশের নীলকৃষ্ণ শোভা আর অবাধ মুক্তির আনন্দ —সব মিলে এরা আমায় যেন মাতাল করে তুলেচে । বৃষ্টি এল—একটা বড় বটতলায় আশ্রয় নিলুম। টপ টপ করে বড় বড় বৃষ্টির ফোটা গাছের ডাল ভেদ করে মাঝে মাঝে গায়ে পড়তে লাগলো। বৃষ্টিতে বড় মাঠগুলো ধোয়ার মতো দেখাচ্চে । বটতলায় একটা ছোট রাখাল ছেলে আমার মতো আশ্রয় নিলে । তার বয়েস দশ বারো বছরের বেশি নয় । হাতে পাচন, মাথায় তালপাতার টোকা । —বড় পানি এয়েল বাবু— —ই্যা, তাই তো—বোস্ ওখানে—বাড়ি কোথায় ? —মুন্দরপুর বাবু ওই ঝে দেখা যাচ্চে— বৃষ্টি থামলে মুন্দরপুর গ্রামের মধ্যে ঢুকলাম। গ্রামের মধ্যে দিয়েই পথ। বড় বাড়ি দুচারখানা চোখে পড়লো, খুবই বড় বাড়ি—বর্তমানে লোকজন আর বিশেষ কেউ থাকে না, পোড়ো বাড়িতে পরিণত হয়েচে । গ্রামের চারিদিকেই বড় বঁাশবন আর আমবন, যেমন এ অঞ্চলের সব গ্রামেই দেখতে পাওয়া যাবে।