পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"ඵ(b” বিভূতি-রচনাবলী ভগবানে বিশ্বাস ও -লাবাসা; যতদিন বরিশালে ছিলাম, মাঝে মাঝে তার সেই ছোট্ট ঘরটাতে গিয়ে তার সঙ্গে কথাবার্তা বলে বড় আনন্দ পেতাম । দুঃখের বিষয় আমি বরিশাল থেকে চলে আসবার অল্প কয়েক মাস পরেই উপরোক্ত দুই ভদ্রলোকই পরলোকগমন করেন। কলকাতায় বসে এ খবর আমি কার কাছ থেকে ধেন শুনেছিলুম। আমার যতদূর মনে আছে শেক্সপিয়ারের সমালোচক ভদ্রলোকের নাম অমূল্যবাৰু। অমন আত্মভোলা ধরনের পণ্ডিত লোক আমি জীবনে খুব বেশি দেখিনি। বরিশাল থেকে খালপথে উজীরপুর বলে একটা গ্রামে আমার এক সহপাঠীর বাড়ি গেলুম বেড়াতে । একটা খালের মধ্য দিয়ে গিয়ে আর একটা খালে পড়লুম, সেখান থেকে আর একটা খাল—সার রাত্রিই চলচে নৌকো। রাত এগারোটার সময় ইসলামকাটি বলে একটা বাজারে নৌকো থামিয়ে মাঝিরা খেতে গেল। বরিশালের মাঝিদের কথা ভালো বুঝিনে। আমি ওদের জিজ্ঞেস করলুম, কত দেৱী হবে রে রোধে খেতে ? ওরা কি একটা বললে, আমি ধরে নিলাম দুঘণ্টা দেরি হবে। অন্ধকার রাত, আমি নৌকো থেকে নেমে ইস্লামকাটির বাজারে বেড়াচ্চি, ক্রমে বাজারের পেছনের পথ দিয়ে ক্রমশ এগিয়ে চলেচি। আমার মনে তখন নতুন দেশ দেখার তাজ নেশা, যা দেখচি তাই ভালো লাগে। পথের ধারের বন্ত শঠি ঝোপ, তাই যেন কি অপূর্ব দৃগু ! নতুন এক হিসেবে বটে, কারণ শঠিগাছ আমাদের দেশে না থাকায় কখনো চোখে দেখিনি এর আগে । পূজোর ষষ্ঠ সেদিন, বন্ধুর সঙ্গে কলেজে একত্র পড়তুম, সে আমায় বলেছিল, বরিশালে যদি যাও তবে আমাদের গ্রামে অবিহি করে যেও পুজোর সময়। সেই উপলক্ষে যাওয়া। কখনো এদিকে আসিনি, বরিশাল জেলার নামই শুনে এসেচি এতদিন—কতদূর এসে পড়েচি কলকাতা থেকে, কতদূর এসে পড়েচি নিজের গ্রাম থেকে—জগতে এত আনন্দ ও এত বিস্ময়ও আছে। " কে কবে ভেবেছিল একদিন আবার ইসলামকাটি বলে একটা বহুদূর অজ্ঞাত স্থানে বুনো শঠিগাছের ঝোপ দেখবে রাত্রিবেলা ! বন্ধুর বাড়ি গিয়ে পৌছাই সকালবেলা। সে গ্রাম আমার ভালো লাগেনি—ছোট কর্দমাক্ত খাল বাড়ির সামনে, তার আবার বাধা ঘাট, আমাদের দেশের নদীর সৌন্দর্য অন্ত ধরনের এবং এর চেয়ে কত ভালো কেবল সেই কথা মনে হচ্ছিল। গ্রামের লোকের কথা ভালো বুঝতে পাদিনে—কথার উচ্চারণের মধ্যে মিষ্টত্ব ও সরসতা আদৌ নেই, কতকগুলি স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ-রীতি কর্ণকে পীড়া দেয় । এ রকম আমার মনে হবার একটি কারণ, সেই আমার প্রথম পূর্ববঙ্গে যাওয়া—তখন আমি ওখানকার গ্রাম্যকথা শুনতে মোটেই অভ্যস্ত ছিলাম না—এখন কানে অনেকট সয়ে গিয়েচে। একটি ব্রাহ্মণ-বাড়িতে পূজোর নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেলুম বন্ধুর সঙ্গে। আমাদের