পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী و خونری ঝাউয়ের সারির মধ্যে নৈশ বাতাসের মর্মরধ্বনি ; বড় বড় ঢেউ যখন এসে ডাঙার আছড়ে পড়চে, তখন তাদের মাথায় যেন অসংখ্য জোনাকি জলচে । কক্সবাজার থেকে গ্লুেম মডু। 'নীলা' বলে একখানা ছোট স্টীমার চাটগা থেকে কক্সবাজারে আসে, সেখানা প্রতি শুক্রবারে তখন মংচু পর্যন্ত যেতো। শুটকি মাছ ষ্টীমারের গোলে বোঝাই না থাকলে এ সব ছোট জাহাজের ডেকে যাওয়া অভ্যস্ত আনন্দদায়ক । উপকূল আঁকড়ে জাহাজ চলে, সুতরাং একদিকে সব সময়েই সবুজ বনশ্রেণী, মেঘমালা, জেলেডিঙির সারি, কাঠের বাডি, বৌদ্ধ মন্দির, মাঝে মাঝে ছোট নদীর মুখ, কখনো রৌদ্র কখনো মেঘের ছায়া—যেন মনে হয় সব মিলিয়ে মুনীর একখানি ছবি । কিছুদূর গিয়ে থানিকটা ফাক জায়গা। সেখানে কিসের কারখানা আছে, চর থেকে কলের চিমনির ধোয়। উড়চে দেখা যায় । স্ট মারের লোকে বললে—করাতের কল, বনের কাঠ চিরে ওখান থেকে জাহাজে বিদেশে রওনা করা হয়। বিকেলে মডুতে স্টীমার ভিড়লো। মডু একেবারে ব্রহ্মদেশ। সেখানে পা দিয়েই মনে হল বাংলা দেশ ছাড়িয়ে এসেচি। বর্মী মেয়ের মোট মোট এক হাত লম্বা চুরুট মুখে দিয়ে জল আনতে যাচ্চে, টকটকে লাল রেশমী লুঙি পর যুবকের সাইকেলে চডে সতেজে চলাফের কল্পচে, পথের ধারে এক এক জায়গায় ছোট ছোট চালাঘর, সেখানে পথিকদের জলপানের জন্তে এক কলসী করে জল রাখা আছে। এখানে একটি ব্রহ্মদেশীয় পরিবারের সঙ্গে আমার আলাপ হয়ে যায় খুব অদ্ভূত ভাবে। একদিন মডুর পুরনো পোস্টাপিসের পেছনের রাস্ত দিয়ে সমুদ্রের ধারে যাচ্চি, একটি বৃদ্ধ চাটগেয়ে মুসলমান মল্ল। আমায় বললে, বাবু, আমায় মেহেরবানি করে একটা কাজ করে দেবেন, একখানা দরখাস্ত লিখে দেবেন ইংরেজিতে ? তারপর আমাকে সে একটা টিনের বা’লে ঘরে নিরে গেল । বাংলোর ভেতরটাতে কারা আছে তখন জানতুম না, বাইরের একসারি ছোট ঘরে অনেকগুলো জাহাজী মাল্লা বাসা করে আছে বলে মনে হল। আমার হাতে তখন পয়সার সচ্ছলতা নেই, দরখাস্ত লিখতে ওরা আট-আনা পারিশ্রমিক দিলে, আমিও ভা নিয়েছিলাম। দরখাস্ত লিখে চলে আসছি, এমন সময়ে সেই বৃদ্ধ মাল্লাটি বললে, বাবু, ওই বর্মী সাহেব আপনাকে ডকিচে, ভেতরের ঘরে থাকে ওরা। আমি অবাক হয়ে গেলুম। অপরিচিত স্থানে যেতে মন সরল না, কি জানি কার মনে কি আছে। কিছুক্ষণ পরে একটি বুদ্ধ বর্মী ভদ্রলোক আমায় হাসিমুখে বাক চাটগায়ের বুলিতে বললেন—আসুন বাবু, আপনাকে একটু দরকার আছে। ৰে ঘরে তিনি আমায় নিয়ে গেলেন, সে ঘরে তিন চারটি সুবেশ তরুণী বসে ছিলেন, সকলেই দেখতে বেশ মুত্র। প্রত্যেকের সামনে একটা ছোট বাটি, তাতে সাদা মতে