পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

अछियाब्लिक vöማጏ শে৷ ফুট উচু। বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম, এমনটি কোথাও দেখেচি বলে মনে হল না। প্রকৃডি এখানে যেন ভৈরবীর বেশে দর্শকের মনে ভীতি ও শ্রদ্ধার ভাব জাগিয়ে দেয়। সম্মুখে একটি নদী। পাহাড়ী নদী, বালুময়, চড়া, ক্ষীণ নদীস্রোত উপলরাশির ওপর দিয়ে ঝির বির করে বইচে, নদীর এপারে ওপারে সুবিশাল অরণ্য, স্তরে-স্তরে ক্রমোন্নত বৃক্ষশ্রেণী । বৃক্ষশ্রেণীর পেছনে সুদূরবিস্তৃত পর্বতশ্রেণী, তাও স্তরে স্তরে সাজানো। নদী হেঁটে পার হওয়া গেল—ইটু পর্যন্ত জল, তার উষ্ম প্রস্তরখণ্ডে পা কেটে যেতে পারে বলে আমরা একটু সাবধানে জল পার হই। আবার ঢুকে পড়ি বনের মধ্যে, বেলা প্রায় দশটা, কিন্তু শাখা-প্রশাখার এমন নিবিড় জড়াজড়ি মাথার ওপরে যে, অত বেলাতেও সুমের আলো ঢোকেনি বনের পথে । এইবার প্রোম রোড পাহাড়ের ওপর উঠেচে । খুব বড় বড় ঘাস, হোগলা বা নল-জাতীয়, তার মধ্যে দিয়ে পায়ে চলার পথের মতো সরু রাস্তা–মাঝে মাঝে আবার খুব চওড়া হয়ে এসেচে । আমার সঙ্গী ডাকপিয়াদা বললে—খুব সাবধানে চলে, এখানে বুনো ইর্তিীর ভয় খুব । ওরই মুখে শুনলুম এই বনের মধ্যে গবর্নমেন্টের হাওঁ-খদা আছে ; বছরে অনেক হাতী নাগা পাহাড়ের লিঙ্গু উপত্যক থেকে এখানে আসে ব্রহ্ম ও আসাম সীমান্তের পাহাড়শ্রেণী ডিঙিয়ে—হাতীর নাকি অগম্য স্থান নেই, কোনো উচু পাহাড়ই তার পথ রোধ করতে পারে मीं । এখান থেকে পাচশ ত্রিশ মাইল দূরে বনের মধ্যে পেট্রলের খনি আছে, ওরই মুখে শুনলুম। আকিয়াব-প্রোম রোড থেকে তারা রাস্তা বের করে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে খনিতে নিয়ে যাবার চেষ্টা করচে । আমি ওকে বললুম—হাতীর কথা তে শুনচি, কিন্তু এ বনে বখ থাকা তো বিশেষ আশ্চর্যের ব্যাপার নয়—তুমি কি বল ? সে বললে, বাঘের ভয় এখন নয়, সন্ধ্যার পরে। তার আগে আমরা আশ্রয় পাবো । হাতী দিনের আলো মানে না। বেলা চারটে বাজতে না বাজতে সে বনে সন্ধ্যা হয়ে এল। দুপুর থেকে চারটের মধ্যে আমরা কিন্তু খুব বেশি পথ অতিক্রম করিনি, বড় জোর আট মাইল, সকাল থেকে এ পর্যন্ত পনেরো মাইলের বেশি আসিনি। খুব সতর্ক হয়ে চলতে হবে বলে বনের মধ্যে পথ মোটে এগোয় না। পাচটার সময় রীতিমত অন্ধকার নামলো। আমাদের খড়ের ঘর এখনও কতদূরে তার ঠিকানা নেই, অথচ ঘণ্টাখানেক আগে থেকে আমার সঙ্গী বলচে সামনে হয়। এ পথে ডাকপিয়াদা সশস্ত্র চলে তাই কতকটা রক্ষে। আমার সঙ্গী দেখতে বেটে-খাটো লোকটি, কিন্তু তার দেহ যেন ইস্পাতে তৈরী, যেমন নিৰ্ভীক, তেমনি আমুদে। ভাঙা ভাঙা ইংৱিজিতে কত রকমের হাসির গল্প করতে করতে আসচে সারাপথ।